Advertisement
E-Paper

রাজ্য ‘ভাগ’ নিয়ে নানা দাবি দলে, খারিজ সুকান্ত-শুভেন্দুর

রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অবশ্য ফের স্পষ্ট করেছেন যে, রাজ্য ভাগ বিজেপির দলীয় অবস্থান নয়। তাঁরা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের পশ্চিমবঙ্গকে রক্ষা করতেই বদ্ধপরিকর।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২৪ ০৭:২৮
(বাঁ দিকে) সুকান্ত মজুমদার এবং শুভেন্দু অধিকারী (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) সুকান্ত মজুমদার এবং শুভেন্দু অধিকারী (ডান দিকে)। —ফাইল ছবি।

রাজ্য ‘ভাগের’ দাবি ঘিরে জলঘোলা আরও বাড়ল। বিজেপির সাংসদ ও বিধায়কদের কেউ আলাদা রাজ্য, কেউ বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের দাবিতে সরব হচ্ছেন। দলের দুই শীর্ষ নেতা, রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অবশ্য ফের স্পষ্ট করেছেন যে, রাজ্য ভাগ বিজেপির দলীয় অবস্থান নয়। তাঁরা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের পশ্চিমবঙ্গকে রক্ষা করতেই বদ্ধপরিকর। শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের পাল্টা প্রশ্ন, যা বিজেপির দলীয় অবস্থান নয়, জনপ্রতিনিধিরা সেই দাবি বারবার তুলে পার পেয়ে যাচ্ছেন কী ভাবে!

দলের রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত উত্তর-পূর্ব উন্নয়ন মন্ত্রকের সঙ্গে উত্তরবঙ্গকে সংযুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এই সূত্রেই রবিবার জলপাইগুড়িতে বিজেপি সাংসদ জয়ন্ত রায় বলেছেন, “উত্তরবঙ্গকে উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া বা উত্তর-পূর্ব ভারতের সুবিধাগুলি যদি উত্তরবঙ্গকে পাইয়ে দেওয়া যায়, তা হলে তাঁর (সুকান্ত) প্রস্তাবকে ২০০% সমর্থন করি!” পাশাপাশি, চিনের আগ্রাসনের আশঙ্কার কথা তুলে তাঁর দাবি, উত্তরবঙ্গের বাসিন্দারা বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছেন। জয়ন্ত যখন এই কথা বলছেন, তখন উত্তরবঙ্গেরই দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা শিলিগুড়িতে পুরো বিষয়টিতে ‘অনেক রহস্য’ রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন। তবে উত্তরবঙ্গকে পৃথক রাজ্য ঘোষণার দাবি প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “অনেক পরিস্থিতিতে আলাদা রাজ্যের দাবি ওঠে। কিছু ক্ষেত্রে উন্নয়ন বা স্বতন্ত্র পরিচিতির নিরিখে তা আবশ্যক। সংসদে সময় হলে অবশ্যই তুলে ধরব।”

ঝাড়খণ্ডের গোড্ডার বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবের দাবিকে সমর্থন করে মুর্শিদাবাদের বিধায়ক গৌরীশঙ্কর ঘোষ ‘অনুপ্রবেশ সমস্যার’ কথা তুলে ধরে বাংলার মুর্শিদাবাদ ও মালদহ জেলাকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার কথা বলেছিলেন। এই বক্তব্যকেই এ দিন ‘অভিনন্দন’ জানিয়েছেন বহরমপুরের বিজেপি বিধায়ক সুব্রত মৈত্র। তাঁর কথায়, “রাজ্য সরকারকে বাদ দিয়ে যদি কেন্দ্র এই এলাকাগুলির শাসন-ভার নেয়, নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়, তবেই এই সব এলাকা বাঁচবে। না হলে ১০-২০ বছর পরে এই সব এলাকা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের স্বর্গ হয়ে উঠবে!” তাঁর সংযোজন, “অনুপ্রবেশ রোখা না গেলে ভবিষ্যতে মুর্শিদাবাদ, মালদহ, দিনাজপুর ও নদিয়ার কিছু অংশের যা অবস্থা হবে, সরকার সেটা দেখুক। কেন্দ্রের কাছে অনুরোধ, এমন একটা কিছু আইন করা হোক, যাতে আমরা সুষ্ঠু ভাবে থাকতে পারি।” বিষয়টি নিয়ে আজ, সোমবার বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর সঙ্গে কথাও বলবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

যদিও দলের নানা জনপ্রতিনিধির এমন মন্তব্যের মধ্যেই বিজেপির অবস্থান স্পষ্ট করেছেন শুভেন্দু। তাঁর কড়া মন্তব্য, ‘‘শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের বাংলা ঐক্যবদ্ধ বাংলা হয়েই থাকবে। যে যা-ই বলুক! নেই কাজ তো খই ভাজ!’’ তিনি ফের বলেছেন, ‘‘বিজেপির অবস্থান একেবারে স্পষ্ট। দ্বিখণ্ডিত কিংবা খন্ডিত, এটা বিজেপির লক্ষ্য নয়। বরং, লক্ষ্য হচ্ছে, অনুপ্রবেশকারী, জেহাদি, সন্ত্রাসবাদীদের সরিয়ে দিয়ে ভারত মাতার খণ্ড পশ্চিমবঙ্গকে আগামী প্রজন্মের জন্য সুরক্ষিত রাখা।’’ রাজ্য সভাপতি সুকান্তও উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন প্রসঙ্গে তাঁর সাম্প্রতিক মন্তব্য স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘‘আমি যেটা বলেছিলাম, তা পশ্চিমবঙ্গের অংশ হিসেবে। এটাই আমাদের অবস্থান। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় যে ভাবে বাংলাকে তৈরি করে গিয়েছিলেন, আমরা সেই ভাবেই বাংলাকে রাখতে চাই।” সেই সঙ্গে সুব্রত-সহ দলের নেতাদের এই সংক্রান্ত মতামত সংবাদমাধ্যমের সামনে প্রকাশ্যে না বলার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি। তাঁর সংযোজন, ‘‘আমার মনে হয়, এমন পরিকল্পনা মাথায় থাকলে তা চিঠি লিখে দলের সর্বোচ্চ স্তরে, প্রধানমন্ত্রীকে জানানো উচিত।’’

তৃণমূল অবশ্য বিজেপির উদ্দেশে তোপ দেগেছে। কোচবিহারে দলের মুখপাত্র পার্থপ্রতিম রায় বলেছেন, “সুকান্ত মজুমদার বাংলা ভাগের জিগির তুলেছেন। উত্তরবঙ্গকে উত্তর-পূর্ব উন্নয়ন মন্ত্রকের সঙ্গে যুক্ত করার কথা বলেছেন। বিজেপির একটি অংশ রাজ্য ভাগের পক্ষে, একটি অংশ বিপক্ষে কথা বলছে। বিজেপি অবস্থান স্পষ্ট করুক।” আর দলের রাজ্য নেতা কুণাল ঘোষের বক্তব্য, ‘‘একটা স্পর্শকাতর বিষয়ে বিজেপির সাংসদ, বিধায়কেরা ষেমন খুশি বলে যাচ্ছেন কী করে? শুভেন্দু-সুকান্তেরা যেটা বলছেন দলীয় অবস্থান নয়, সেটা সকলকে মানতে বলছেন না কেন বা ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কেন? নইলে তো ধরে নিতে হবে, ওঁদের প্রশ্রয়েই এ সব বলা হচ্ছে!’’ সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য সৃজন ভট্টাচার্যেরও দাবি, ‘‘বিজেপি ভাবছে ছোট ছোট রাজ্য করে দিলে নিজেদের ক্ষমতা পেতে সুবিধা হবে। উত্তরবঙ্গে বিজেপি একটু বেশি ভোট পাচ্ছে, সেখানে এক জন মুখ্যমন্ত্রী পাওয়া যাবে! বাংলায় এ সব চলবে না। ব্রিটিশের দালালেরা বাংলা ভাগ করতে গেলে ব্রিটিশদের মতোই প্রতিরোধের মুখে পড়বে।’’

BJP Suvendu Adhikari Sukanta Majumdar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy