যাদবপুর-কাণ্ডে ফের বাম-তৃণমূল আঁতাঁতের অভিযোগ করে ‘জনজাগরণে’র ডাক দিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। আবার শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা-মন্ত্রীদের পরে এ বার ‘যাদবপুরকে ঠান্ডা’ করার নিদান দিয়েছেন বিজেপি বিধায়কও। শুভেন্দুর রাজনৈতিক অতীত স্মরণ করিয়ে দিয়ে পাল্টা আঁতাঁত-প্রশ্নে সরব হয়েছে সিপিএম।
যাদবপুর-কাণ্ডের প্রতিবাদে ও ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলার অভিযোগে রবিবার বিজেপির যুব মোর্চা নবীনা সিনেমা থেকে যাদবপুর থানা পর্যন্ত মিছিলের ডাক দিয়েছিল। কলকাতা হাই কোর্টের বেঁধে দেওয়া শর্ত মেনেই মিছিল করেছে তারা। মিছিলে ছিলেন শুভেন্দু, যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি ইন্দ্রনীল খাঁ, কৌস্তভ বাগচী, বিজেপির দক্ষিণ কলকাতা সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অনুপম ভট্টাচার্য-সহ অন্যেরা। বিরোধী দলনেতা এ দিন ফের বলেছেন, “যাদবপুরে তৃণমূল ও সিপিএম এক। মাদক, র্যাগিং থেকে দেশ-বিরোধী কাজ, সবই এখানে হয়। আওয়াজ উঠেছে সেকু-মাকুর বিরুদ্ধে। অপ্রাসঙ্গিক সিপিএমকে প্রাসঙ্গিক করতে এটা হাকিম-সেলিমের সেটিং!” তাঁর সংযোজন, “এক দিকে জনজাগরণ এবং ’২৬-এ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিসর্জনের মাধ্যমে যাদবপুরে স্থায়ী সমাধান পাওয়া যাবে।” আঁতাঁতের অভিযোগ তুলে ‘যাদবপুরকে ঠান্ডা’ করার ডাক দিয়েছেন বিজেপি বিধায়ক অমরনাথ শাখা। বাঁকুড়ার ওন্দায় নিজের বিধানসভা কেন্দ্রে দলীয় সভায় তাঁর বক্তব্য, “কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতৃত্বকে বলব, বিজেপি ও এবিভিপি-র কার্যকর্তাদের ছেড়ে দিন। আধ ঘণ্টার মধ্যে যাদবপুরকে ঠান্ডা করে দেব!” বিধানসভার বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্ব শুরুর মুখে যাদবপুর নিয়ে উত্তাপ বাড়াচ্ছে প্রধান বিরোধী দল।
তবে শুভেন্দুর রাজনৈতিক পূর্বাশ্রমের কথা মনে করিয়ে দিয়ে পাল্টা আঁতাঁতের অভিযোগ তুলেছে সিপিএম। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, “মাওবাদীদের সঙ্গে নিয়েছিলেন শুভেন্দু, এটা বলেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। আসলে মাওবাদীদের সঙ্গে নিয়ে মমতা-শুভেন্দু মিলিত ভাবে রাজ্যে নৈরাজ্য তৈরি করেছিলেন। তাতে সুবিধা পেয়েছে তৃণমূল। আর বাংলার সর্বনাশ হয়েছে।” সেই সঙ্গে সুষ্ঠু ছাত্র-ভোটের প্রসঙ্গ তুলে তাঁর দাবি, “কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানেই ছাত্রছাত্রীরা সুযোগ পেয়েছেন, বুঝিয়ে দিয়েছেন এবিভিপি, বিজেপি, তৃণমূলের স্থান নেই।” পাশাপাশি, অমরনাথের মতো যে নেতারা ছাত্র-ছাত্রীদের লাগাতার ‘হুমকি’ দিচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ঘৃণা-ভাষণের অভিযোগে মামলা ও গ্রেফতার করা উচিত বলে দাবি করেছেন এসএফআইয়ের সর্বভারতীয় যুগ্ম সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য।
শুভেন্দু এ দিন মিছিল থেকেই দাবি করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫০ জন ছাত্রছাত্রী বিজেপির প্রাথমিক সদস্যপদ নিয়েছেন। যাদবপুর-কাণ্ডকে সামনে রেখে আগামী ১৬ মার্চ নাগরিক কনভেনশন এবং উচ্চ মাধ্যমিকের পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে দলীয় ভাবে এবং ভিতরে এবিভিপি লাগাতার কর্মসূচি নেবে বলেও জানিয়েছেন শুভেন্দু। তবে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের পাল্টা দাবি, “যাদবপুর-কাণ্ডে মিছিল যাদবপুরে। কিছু লোক আনতে হল নন্দীগ্রাম থেকে। কোনও এলাকায় সেখানকার জমায়েত করার ক্ষমতা নেই। তা ছাড়া, বিরোধী দলনেতার মিছিল অন্য শিবির এসে না ডুবিয়ে দেয়, তাই নিজেই কিছু লোক জোগাড়ের ব্যবস্থা করতে হয়েছে।” যাদবপুরে ছাত্র আন্দোলনের নামে বাম এবং অতি-বাম ‘হাঙ্গামা’ করেছে বলে অভিযোগ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং রাজ্য সরকারের কাছে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছে নাগরিক সংগঠন ‘দেশ বাঁচাও গণমঞ্চ’। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর আচরণের প্রশংসাও শোনা গিয়েছে মঞ্চের সভাপতি তথা প্রাক্তন মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর মুখে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)