E-Paper

‘অস্বস্তি’ সামলেও মমতার গদি ছাড়ার দাবি বিজেপির

শোক-প্রস্তাবের পরে বিধানসভার প্রথম দিনের অধিবেশন মুলতুবি হয়ে যায়। এর পরেই পরিষদীয় দলের ঘর থেকে মিছিল করে গাড়ি বারান্দা পর্যন্ত যান বিরোধী দলনেতা-সহ বিজেপি বিধায়কেরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৭:১১
এসএসসি দুর্নীতির প্রতিবাদে বিজেপি বিধায়কদের বিক্ষোভ। বিধানসভা চত্বরে।

এসএসসি দুর্নীতির প্রতিবাদে বিজেপি বিধায়কদের বিক্ষোভ। বিধানসভা চত্বরে। —নিজস্ব চিত্র।

স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) ‘দাগি’ শিক্ষকদের তালিকা সামনে আনার পরে, তার রেশ এসে পড়ল বিধানসভাতেও। অধিবেশন শুরুর দিন সোমবার এক দিকে, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপি বিধায়কেরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে ‘চাকরি তুমি করেছো চুরি/ গদি ছাড়ো তাড়াতাড়ি’ স্লোগান তুলে সরব হয়েছেন। অন্য দিকে, দাগি-তালিকায় নাম না-থাকা শিক্ষকদের চাকরি বহালের দাবিও তুলেছেন শুভেন্দু। এই বিষয়ে বিধানসভায় প্রস্তাব আনার জন্য স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে জানিয়েছেন তিনি। এর মধ্যেই ‘দাগি-তালিকা’য় সংখ্যায় কম হলেও, দলের নেতা ও তাঁদের আত্মীয়দের নাম সামনে আসা নিয়ে বিজেপির অন্দরেও অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। যদিও এমন ক্ষেত্রে, বিজেপির বক্তব্য, দুর্নীতির দায় ব্যক্তির। দলের নয়।

শোক-প্রস্তাবের পরে বিধানসভার প্রথম দিনের অধিবেশন মুলতুবি হয়ে যায়। এর পরেই পরিষদীয় দলের ঘর থেকে মিছিল করে গাড়ি বারান্দা পর্যন্ত যান বিরোধী দলনেতা-সহ বিজেপি বিধায়কেরা। তাঁরা স্লোগান তুলে দুর্নীতির দায় নিয়ে মমতার পদত্যাগের দাবিতে সরব হয়েছেন। এর সঙ্গেই বিরোধী দলনেতার বক্তব্য, “১৮০৬ জন অযোগ্য। তা হলে, বাকি ১৫ হাজার যোগ্য। তাঁদের চাকরিতে বহাল রাখার প্রস্তাব বুধবার আনতে স্পিকারের কাছে চিঠি দিচ্ছেন আমাদের পরিষদীয় দলের সচেতক শঙ্কর ঘোষ। আমি মুখ্যসচিবকে চিঠি লিখব। সর্বদলীয় এমন প্রস্তাবকে আমরা সমর্থন করব। এই প্রস্তাব নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের কাছে গিয়ে রাজ্য বলুক, যোগ্যদের চাকরিতে বহাল রাখা হোক।” পাশাপাশি, রাজ্য কোনও ব্যবস্থা না-নিলে তিনি চাকরিহারাদের সঙ্গে ৭ তারিখ দেখা করবেন বলেও জানিয়েছেন শুভেন্দু।

কিন্তু এরই মধ্যে দাগি-তালিকায় বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এক সঙ্গী-নেতার স্ত্রী, বীরভূমে দলের এক পদাধিকারীর স্ত্রী-র মতো কয়েকটি নাম থাকা নিয়ে বিতর্ক বেধেছে। যদিও অভিজিতের ওই সঙ্গী-নেতা দীপক দেবশর্মা তাঁর স্ত্রী চাকরি পাওয়ার সময়ে তৃণমূলের সংগঠনে ছিলেন। এই প্রেক্ষিতেই বিজেপির অন্দরে প্রশ্ন, দুর্নীতির হাতেগরম ‘প্রমাণ’কে সামনে রেখে তৃণমূল কংগ্রেসকে আক্রমণের যখন সুযোগ পাওয়া গিয়েছে, তখন এমন দৃষ্টান্ত কি দলকে বেকায়দায় ফেলছে? যদিও দীপকের বক্তব্য, ‘‘আমার স্ত্রী পরীক্ষা দিয়ে সঠিক উপায়ে চাকরি পেয়েছিলেন। কেন এই তালিকায় নাম রয়েছে বুঝতে পারছি না।’’ তবে দীপক মানছেন, ‘‘লোকসভা নির্বাচনের সময়ে আমি বিজেপির মণ্ডল সহ- সভাপতি ছিলাম। অভিজিৎবাবু নোনাকুড়ি বাজারে প্রচারে এসেছিলাম। দলের স্থানীয় নেতৃত্ব হিসেবে আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। তবে আমি এখন আর বিজেপির সঙ্গেও যুক্ত নই।’’

রাজ্য বিজেপির এক নেতার ব্যাখ্যা— প্রথমত, রাজ্যে দলের ৬০ লক্ষ সদস্যের মধ্যে এক জনও অসৎ নন, এটা বলা যায় না। দ্বিতীয়ত, চকারি বিক্রি হয়েছে কার্যত ‘খোলা বাজারে’। ফলে, দল নির্বিশেষে অনেকে সেই ‘সুযোগ’ নিয়েছেন। তৃতীয়ত, অনেকেই আছেন, যাঁরা ‘কুকীর্তি’র সময়ে তৃণমূল করতেন। পরে বিজেপিতে এসেছেন। এই সূত্রে ওই নেতার বক্তব্য, “কাউকে আড়াল করা হবে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত সাহ স্পষ্ট করে দিয়েছেন, দল বদলালেও মামলা বন্ধ হবে না।”

পুরো ব্যবস্থাটাই ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’, এমন তোপ দেগে সরব হয়েছে বিজেপি। দলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক অগ্নিমিত্রা পালের বক্তব্য, “নিয়োগের জন্য প্রত্যেকের কাছ থেকে ১০ লক্ষ টাকা করে নেওয়া হলে, টাকার অঙ্কটা কোথায় পৌঁছবে? পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের থেকে ৫০ কোটি, জীবনকৃষ্ণ সাহার কাছ থেকে কিছু টাকা উদ্ধার হয়েছে। বাকি টাকার হদিস দিন।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bengal SSC Recruitment Case BJP TMC Mamata Banerjee Suvendu Adhikari

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy