E-Paper

হিন্দুত্বের সুরেই বিজেপি, পাল্টা জোর সম্প্রীতিতেও

কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী ও বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এ বার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখলে ফের ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। পাল্টা প্ররোচনার অভিযোগে সরব শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২৫ ০৭:২২
শান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষার ডাক দিয়ে হাওড়ায় মিছিলে বামপন্থী দলগুলি।

শান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষার ডাক দিয়ে হাওড়ায় মিছিলে বামপন্থী দলগুলি। —নিজস্ব চিত্র।

রাজ্যে বিধানসভা ভোটের দিকে নজর রেখে হিন্দুত্বের সুর চড়িয়েই চলেছে বিজেপি। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী ও বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এ বার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখলে ফের ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। পাল্টা প্ররোচনার অভিযোগে সরব শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। মেরুকরণের এই আবহে ফের সম্প্রীতি রক্ষার ডাক দিয়েছে বাম ওকংগ্রেস। ইদ এবং রামনবমীর আগে এই আবর্তেই ঘুরপাক খাচ্ছে রাজ্য রাজনীতি।

মালদহের মোথাবাড়িতে অশান্তির ঘটনার প্রেক্ষিতে রবিবার সুকান্ত সেখানে গেলে ব্যারিকেড করে পুলিশ বাধা দেয় বলে অভিযোগ। এর পরেই সুকান্তের হুঁশিয়ারি, “মুখ্যমন্ত্রীকে যেখানে দেখা যাবে, সেখানেই ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দেওয়া হবে! আমরা ক্ষমতায় এলে এক জন হিন্দুর গায়ে হাত পড়লেও বুঝে নেব!” রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারের নাম করে ‘হিসাব’ বুঝে নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন সুকান্ত। এই সূত্রেই সরব হয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুও। নন্দীগ্রামের আশদতলা ৪১ নম্বর বুথে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানের সম্প্রচার শুনতে গিয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকেই বিভিন্ন জায়গায় অশান্তির অভিযোগ তুলে শুভেন্দুর দাবি, “পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুরা খুব ভাল নেই। বাংলাদেশ থেকে দেখে উৎসাহী হয়ে একই কায়দা-কানুন এখানে চলছে। এর পরেও ঘুমোবেন? এই লড়াই অস্তিত্ব রক্ষার, বাঁচার লড়াই।” তবে আগামী দিনে ‘প্রতি মাথায় ছাদ, প্রতি হাতে কাজ, প্রতি পেটে ভাত’— এই লক্ষ্য নিয়ে বাংলায় ‘রাষ্ট্রবাদী সরকার’ তৈরি করার কথাও বলেছেন তিনি।

বিজেপির বিরুদ্ধে প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ।

বিজেপির বিরুদ্ধে প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ। —নিজস্ব চিত্র।

তৃণমূল অবশ্য বিজেপির বিরুদ্ধে প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে। শাসক দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের বক্তব্য, “উন্নয়নের রাজনীতি থেকে বিচ্যুত হয়ে ওঁরা বিভাজনের নেতিবাচক রাজনীতি করছেন। রাজ্যে সংখ্যাগুরু, সংখ্যালঘু সবাই শান্তিতে আছেন।” সুকান্তকে পুলিশের ‘বাধা’ নিয়ে কুণালের দাবি, “কেউ প্ররোচনা দিতে গেলে শান্তি রক্ষায় পুলিশ ব্যবস্থা নিতেই পারে।”

এই প্রেক্ষিতে বিজেপি ও তৃণমূল, দু’পক্ষকেই নিশানা করেছে বাম-কংগ্রেস। সম্প্রীতির আবহে ইদ ও রামনবমী পালনের ডাক দিয়ে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু বাম কর্মীদের সতর্ক থাকার বার্তা দিয়েছেন। বিমানের বক্তব্য, “সাম্প্রদায়িক শক্তি বিভাজনের জন্য প্ররোচনা তৈরির চেষ্টা চালাবে, এমন আশঙ্কা উপেক্ষা করা যায় না। শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রশাসনকে আগাম সতর্কতা নিয়ে সব ব্যবস্থা নিতে হবে।” সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীরও বক্তব্য, “বিভাজনের রাজনীতির ফল কী, তার উদাহরণ মোথাবাড়িতে দেখা গেল। এতে বিজেপি ও তৃণমূল, দু’পক্ষেরই আগ্রহ রয়েছে।” শান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষার ডাক দিয়ে এ দিন কাজিপাড়া থেকে হাওড়া ময়দান পর্যন্ত মিছিল করেছে বামপন্থী দলগুলি। সেখানে ছিলেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্রীদীপ ভট্টাচার্য ও অন্যেরা।

ভোট ও মেরুকরণ, এই ‘সমীকরণে’র বিরোধিতায় কংগ্রেসও সরব হয়েছে। কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অধীর চৌধুরীর বক্তব্য, “এখন ভোট মানে শ্মশান-কবরস্থান, মন্দির-মসজিদ, ঔরঙ্গজেব-শিবাজী! পেটে ভাত, শিল্প কোথায়, সেটা বলুন।” তাঁর সংযোজন, “তৃণমূল ও বিজেপিকে বলছি, আগুন নিয়ে খেলবেন না। ভোট চলে যাবে, কিন্তু মানুষ গ্রামে, পাড়াতেই থাকবেন। তখন কে দায়িত্ব নেবে?” বিভাজনের ফাঁদে পা না দিতে ধর্ম নির্বিশেষে সব মানুষের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকারও।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

EID 2025 Ramnavami

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy