Advertisement
E-Paper

চোয়াল ফুঁড়ে গুলি, আক্রান্ত ব্লক সভাপতি

হাসপাতাল সূত্রের খবর, চোয়াল ফুঁড়ে চলে গিয়েছে একটি গুলি। কোমর, ঘাড়-সহ শরীরের নানা জায়গায় গভীর ক্ষত রয়েছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনটি গুলি বার করা হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৮ ০২:১৬
 দীপক ঘোষ। ফাইল চিত্র।

দীপক ঘোষ। ফাইল চিত্র।

সামনে থেকে পরপর গুলি, তার পরে ভোজালি দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপ। গ্রামের বাড়ি থেকে ফেরার পথে রবিবার দুপুরে এ ভাবেই অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কতীদের হামলার শিকার হলেন বীরভূমের খয়রাশোলের ব্লক তৃণমূল সভাপতি দীপক ঘোষ। তাঁকে প্রথমে স্থানীয় নাকড়াকোন্দা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, পরে দুর্গাপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

হাসপাতাল সূত্রের খবর, চোয়াল ফুঁড়ে চলে গিয়েছে একটি গুলি। কোমর, ঘাড়-সহ শরীরের নানা জায়গায় গভীর ক্ষত রয়েছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনটি গুলি বার করা হয়েছে। হাসপাতালের ডেপুটি সুপার দেবাশিস ঘোষ জানান, দীপকবাবুর জিভ পুরোটাই কাটা গিয়েছে। প্রচুর রক্তপাত হয়েছে। একাধিক অস্ত্রোপচার করতে হবে। আপাতত তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে।

জেলা পুলিশ সুপার কুণাল আগরওয়াল বলেন, ‘‘আততায়ীদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। দ্রুত ধরা হবে।’’ এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশে লিখিত অভিযোগ হয়নি। জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের দাবি, ‘‘দীপক আমার ডান হাত। ভাল সংগঠক। তাই বাইরে থেকে লোক আনিয়ে ওকে খুন করানোর চেষ্টা করেছে বিজেপি। এর আগেও ওকে মারার চেষ্টা হয়েছে।’’ অভিযোগ উড়িয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের দাবি, ‘‘সব তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফল। এখন আমাদের নাম নিয়ে বাঁচার চেষ্টা হচ্ছে।’’

অনুগামীরা জানাচ্ছেন, এ দিন দুপুরে মোটরবাইকে কেন্দ্রগরিয়ায় বাড়ি থেকে পথ সংক্ষেপের জন্য বড় রাস্তা এড়িয়ে হিংলো নদী পেরিয়ে খয়রাশোল ফিরছিলেন দীপকবাবু। মোটরবাইক চালাচ্ছিলেন তাঁর অনুগামী নির্মল মণ্ডল। দুর্গাপুরের হাসপাতালে দাঁড়িয়ে নির্মল বলেন, ‘‘নদী পেরোতেই পথ আটকায় দু’টি মোটরবাইকে থাকা চার, পাঁচ জন। দীপকদা সামনে আসতেই গুলি ছো়ড়ে এক জন। বাইক থেকে পড়ে গেলে পরপর ভোজালির কোপ মারা হয়। দাদার সঙ্গে ওদের ধস্তাধস্তি হয়। আমি চিৎকার শুরু করি।’’ ঘটনাস্থলের কাছেই ইটভাটা ছিল। চিৎকার শুনে ইটভাটা থেকে লোকজন আসছে দেখে চম্পট দেয় হেলমেটে মাথা ঢেকে রাখা আততায়ীরা।

গত কয়েক বছরে একাধিক খুন, বিস্ফোরণ, রাজনৈতিক হানাহানির ঘটনায় সামনে এসেছে বীরভূমের এই এলাকা। ২০১৩ সালের ১২ অগস্ট এবং ২০১৪ সালের ১৬ অগস্ট খুন হন দুই প্রাক্তন ব্লক সভাপতি অশোক ঘোষ এবং অশোক মুখোপাধ্যায়। স্থানীয় রাজনীতিতে তাঁরা পরস্পরের প্রবল বিরোধী হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। অশোক ঘোষ খুনের পরে এলাকায় গিয়ে নিহতের অনুগামীদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয় অনুব্রতকে।

এ দিন আক্রান্ত দীপকবাবু সেই অশোক ঘোষের আপন ভাই। এখন তিনিই ব্লক সভাপতি। সেই হিসেবে খয়রাশোলে পরপর তিন ব্লক সভাপতি প্রাণঘাতী হামলার শিকার হলেন। অশোক ঘোষ খুনে অভিযুক্ত ছিলেন অশোক মুখোপাধ্যায় এবং তাঁর অনুগামীরা। আবার দ্বিতীয় জনের খুনে অভিযোগ হয়েছিল দীপকবাবু ও অশোক ঘোষের কিছু অনুগামীর বিরুদ্ধে।

খয়রাশোলে কান পাতলে শোনা যাবে, শাসকদলের দ্বন্দ্বের নেপথ্যে অবৈধ কয়লা সাম্রাজ্যের ও এলাকার দখলের লড়াই। মাসখানেক আগে এই এলাকারই বড়রায় বিস্ফোরণে তৃণমূলের অঞ্চল কার্যালয়ের ছাদ উড়ে যায়। সে ক্ষেত্রেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ উঠেছিল। এলাকা থেকে বোমা উদ্ধারও নতুন ঘটনা নয়।

দলীয় সূত্রের খবর, গোষ্ঠীকোন্দল লাগাম দিতে সম্প্রতি দীপকবাবুকে ব্লক সভাপতি করে বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা উজ্জ্বল হক কাদরিকে কার্যকরী সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। পঞ্চায়েত ভোটের আগে থেকেই ব্লক জুড়ে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন দীপকবাবু। কিন্তু, তাঁর বিরোধী শিবিরের অস্তিত্বও রয়েছে। তাই দ্বন্দ্বের চোরাস্রোত থেকে গিয়েছে বলেই তৃণমূলের নিচুতলার কর্মীদের একাংশের দাবি।

Crime Violence Attack Block President TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy