Advertisement
E-Paper

বিক্রির চুক্তি আছে, ব্লাড ব্যাঙ্কে তবু নষ্ট হচ্ছে রক্তরস

চুক্তিই সার! সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কে উদ্বৃত্ত প্লাজমা বা রক্তরস বিক্রির জন্য একটি নামী সংস্থার সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের। তার চার মাস পরেও মানিকতলার কেন্দ্রীয় ব্লাড ব্যাঙ্কে শুধু এপ্রিল মাসেই দশ দিনের ভিতরে দেড় হাজার ইউনিটের বেশি ‘ফ্রেশ প্লাজমা’ ফেলে দিতে হয়েছে বলে অভিযোগ।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:০৫

চুক্তিই সার! সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কে উদ্বৃত্ত প্লাজমা বা রক্তরস বিক্রির জন্য একটি নামী সংস্থার সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের। তার চার মাস পরেও মানিকতলার কেন্দ্রীয় ব্লাড ব্যাঙ্কে শুধু এপ্রিল মাসেই দশ দিনের ভিতরে দেড় হাজার ইউনিটের বেশি ‘ফ্রেশ প্লাজমা’ ফেলে দিতে হয়েছে বলে অভিযোগ।

রাজ্যের অধিকাংশ সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কে যত রক্ত সংগ্রহ হয়, তার মাত্র ১৫-৪৫ শতাংশের উপাদান পৃথকীকরণ হয়। তা সত্ত্বেও প্লাজমা উদ্বৃত্ত থাকছে কারণ, এর প্রয়োজন প্যাকসেল বা লোহিত রক্তকণিকা এবং প্লেটলেট বা অণুচক্রিকার তুলনায় কম। এবং নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় প্লাজমা প্রায় এক বছর রেখে দেওয়া যায়। মানিকতলা ব্লা়ড ব্যাঙ্কের কর্তাদের দাবি, তাঁদের যে ক’টি রেফ্রিজারেটার রয়েছে, সেগুলি ইতিমধ্যেই পুরনো প্লাজমায় ভরে গিয়েছে। আরও কিছু রেফ্রিজারেটর চাওয়া হলেও স্বাস্থ্য দফতর তার কোনও ব্যবস্থা করেনি। ফলে নতুন উৎপাদিত প্লাজমা রাখার জায়গা না থাকায় সেগুলি ফেলে দিতে তাঁরা বাধ্য হয়েছেন।

মানিকতলা ব্লাড ব্যাঙ্কের নথি অনুযায়ী, ১৫ এপ্রিল পয়লা বৈশাখের দিন থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত দশ দিনে মোট ১৫৫৫ ইউনিট তাজা প্লাজমা উৎপাদনের পরেই ফেলে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ তারিখ ১০০ ইউনিট, ১৬ তারিখ ১৫৬, ১৭ তারিখ ১২০, ১৮ তারিখ ১৮০, ১৯ তারিখ ২১২, ২০ তারিখ ১০৮, ২১ তারিখ ৩২৪, ২৩ তারিখ ১০০, ২৪ তারিখ ৭৫ এবং ২৫ তারিখ ১৮০ ইউনিট প্লাজমা ফেেলা দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, সেই ২০১১-১২ সাল থেকে চেষ্টা চালিয়ে উদ্বৃত্ত প্লাজমা বিক্রির জন্য বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করে তা হলে লাভ কী হল? কেন চুক্তির পরে চার মাস কেটে গেলেও ওই সংস্থাকে প্লাজমা বিক্রি করা শুরু করা গেল না? তা হলে তো এই ভাবে কয়েক হাজার ইউনিট টাটকা প্লাজমা নষ্ট করার প্রয়োজন হত না। তাতে রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, সরকারি প্রক্রিয়া শুরু করতে সব সময়েই একটু দেরি হয়। অনেক ফাইল চালাচালির ব্যাপার থাকে। তার উপরে ওই চুক্তিতে সব ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে একসঙ্গে ওই সংস্থাকে প্লাজমা বিক্রি শুরুর কথা বলা হয়নি।

স্বাস্থ্যসচিব মলয় দে-র কথায়, ‘‘চুক্তিতে ঠিক হয়েছিল, প্রথমে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে উদ্বৃত্ত প্লাজমা ওই সংস্থাকে বিক্রি করা হবে পাইলট প্রকল্প হিসেবে। প্রতি লিটার প্লাজমার জন্য ওই সংস্থা ১৪৫০ টাকা করে দেবে। এই টাকা ব্লাড ব্যাঙ্কের পরিকাঠামোর উন্নয়নেই খরচ করা হবে। এই প্রকল্প সফল হলে তার পরে রাজ্যের অন্য সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কগুলি থেকেও প্লাজমা বিক্রি শুরু করা হবে। সেই মতো ১ এপ্রিল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে প্লাজমা বিক্রি শুরু হয়েছে। মানিকতলা ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে বিক্রি শুরু হতে দেরি হবে।’’

স্বাস্থ্য সচিবের এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর তথা রাজ্য রক্ত সঞ্চালন পর্ষদের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে, যখন রাজ্যে মানিকতলা ব্লাড ব্যাঙ্কেই বছরে সবচেয়ে বেশি রক্তের পৃথকীকরণ হয় এবং সব থেকে বেশি প্লাজমা উৎপাদন হয়, তখন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের বদলে কেন মানিকতলা ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকেই পাইলট প্রকল্প শুরু করা হল না? কলকাতায় ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে এখনও রক্ত পৃথকীকরণ শুরু হয়নি। এসএসকেএম, নীলরতনে যেটুকু প্লাজমা উৎপন্ন হয়, সেটুকু সময়মতো খরচ হয়ে যায়। খরচ হয় না মূলত মানিকতলায়। তা হলে কেন সেখান থেকেই উদ্বৃত্ত প্লাজমা বিক্রি শুরু হল না? স্বাস্থ্যকর্তাদের একটি বড় অংশের অভিযোগ, এটা দূরদর্শিতার অভাব ছাড়া আর কিছু নয়।

২০১২ সালের নভেম্বর মাসে মানিকতলা কেন্দ্রীয় ব্লাড ব্যাঙ্কে ২৩৬০ ইউনিট, ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে ১০৪০ ইউনিট এবং ২০১৪ সালে ২৪০০ ইউনিট প্লাজমা ফেলে দিতে হয়েছিল। ফলে আগে থেকেই সেখানে প্লাজমা উদ্বৃত্ত হওয়ার নজির রয়েছে। এই ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকেই প্লাজমা বিক্রি শুরু করা হলে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হত না এবং মানুষের স্বেচ্ছায় দান করা রক্ত থেকে উৎপাদিত এই প্রয়োজনীয় উপাদান এ ভাবে নষ্ট হত না বলে অভিযোগ। হেমাটোলজিস্টরা জানান, প্লাজমা মূলত হিমোফিলিয়া রোগীর এবং আগুনে পুড়ে যাওয়া রোগীর লাগে। এ ছাড়া যকৃতের রোগ, প্রোটিন ঘাটতি, কিডনির রোগ, স্নায়ুর রোগে দরকার হয়। সেটা এই ভাবে নষ্ট করার কোনও অর্থ হয় না।

এ ব্যাপারে রাজ্য রক্ত সঞ্চালন পর্ষদের সদস্যসচিব ওঙ্কার সিংহ মীনাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি মন্তব্য করতে চাননি। স্বাস্থ্য দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর (রক্ত নিরাপত্তা) নয়ন চন্দকে প্রশ্ন করলে তাঁর জবাব, ‘‘আমার চাকরি আমাকে কিছু বলার অনুমতি দেয় না।’’

তবে স্বাস্থ্যসচিব বলেন, ‘‘মানিকতলা ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে এখনই বেসরকারি সংস্থাকে প্লাজমা বিক্রি শুরু করা না-গেলেও আমাদের উচিত ছিল এমন একটা পরিকাঠামো তৈরি করা, যাতে রাজ্যের কোনও সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কে প্লাজমার অভাব হলেই সেখানে মানিকতলা থেকে প্লাজমা পাঠানো যায়। দুঃখের বিষয় সেটা এখনও করা যায়নি, তবে আমরা করার চেষ্টা করছি।’’

Parijat Bandyopadhyay Blood Blood Bank Manik Tala Dioctor Health department
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy