নির্দেশ কার, তা বুঝতে কার্যত জেরবার হতে হচ্ছে বুথ লেভল অফিসারদের (বিএলও) একাংশকে। অভিযোগ উঠছে, এসআইআর-এর ফর্ম খাতায়কলমে ১০০% বিলি দেখাতে বিএলও-সুপারভাইজ়ার এবং ইআরও-দের (ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার) একাংশ বিএলও-দের চাপ দিচ্ছেন। থাকছে নানা ধরনের হুঁশিয়ারিও। অভিযোগকারী বিএলও-দের দাবি, কমিশনের থেকে সরাসরি তাঁরা এমন নির্দেশ পাচ্ছেন না। এখানেই প্রশ্ন উঠছে, এসআইআর শুরুর সময়ে কমিশনের তরফে সুনির্দিষ্ট বিধি কেন দেওয়া হয়নি বিএলও-দের? কেন জানানো হয়নি কাজের সবিস্তার তথ্য?
বৃহস্পতিবার বেলেঘাটা বিধানসভার বেশ কয়েকটি বুথের বিএলও-কে বিধিভঙ্গের অভিযোগে কারণ দর্শানোর নোটিস ধরানো হয়েছে। কমিশন সূত্রের বক্তব্য, প্রত্যেক বিএলও-কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল সব কিছুই। কিন্তু সেই প্রশিক্ষণ এবং বাস্তবের মধ্যে বিস্তর ফারাক থেকে যাচ্ছে বলেই বিএলও-দের একাংশ অভিযোগ করছেন।
বিএলও-দের একাংশের বক্তব্য, সুপারভাইজ়ার বা ইআরও অফিস থেকে বলে দেওয়া হচ্ছে, সব ফর্ম বিলি হয়ে গিয়েছে, তা দেখাতে। অথচ অনেক বিএলও-র কাছেই এমন কিছু ফর্ম থেকে যাচ্ছে, যেখানে ভোটারদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। সেই ফর্মগুলিকে কোন যুক্তিতে ‘বিলি হয়েছে’ বলা হবে, সেই প্রশ্ন তুলে বিএলও-দের একাংশ এই কাজে রাজি হচ্ছেন না। অভিযোগ, সে ক্ষেত্রে তাঁদের উপরে বাড়ছে সুপারভাইজ়ার-ইআরওদের একাংশের চাপ। বিএলও-দের লগ-ইনে এককালীন পাসওয়ার্ড (ওটিপি) পাঠিয়ে সুপারভাইজ়ার অথবা ইআরও সেই কাজ করে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ।
উত্তর ২৪ পরগনার এক বিএলও বলেন, “স্থানীয় স্তর থেকে হামেশাই কাজ শেষের সময় বেঁধে চাপ দেওয়া হচ্ছে। যদিও কমিশন এ নিয়ে কিছু বলছে না। এক-এক জন সুপারভাইজ়ার এবং ইআরও এক-এক রকম কথা বলছেন। কমিশনের নামে জ়োনাল অফিস থেকে এ সব করা হচ্ছে।” পশ্চিম মেদিনীপুরের এক বিএলও বলেন, “একটি ওয়টস্যাপ বার্তায় বলা হয়েছে, ১০০ শতাংশ বিলি বলা হলেও, কোনও ভোটারের ফর্ম শেষ পর্যন্ত জমা না পড়লে তাঁকে ‘আনট্রেসেবল’ লিখতে হবে। এটা কি স্ববিরোধী হয়ে যাচ্ছে না?”
বিএলও-দের একাংশের দাবি, কমিশন জানিয়েছিল, যে ফর্মগুলি বিলি করা যাবে না, সেগুলি নিজেদের কাছেই রাখতে হবে। ৪ নভেম্বরের মধ্যে কোনও ভোটার ফর্ম চেয়ে যোগাযোগ করলে তাঁকে তা দেওয়া হবে। কারণ, যাঁদের কাছে এখনও ফর্ম যায়নি, তাঁরা কমিশনের নির্দিষ্ট নম্বরগুলিতে ফোন বা ওয়টস্যাপ করলেই মিলবে ফর্ম। অনেকেই বলছেন, ভোটার বা এসআইআর-কর্মীদের কী করণীয় তা জানিয়ে টিভি, রেডিয়ো, সংবাদপত্র এবং এলাকায় নিবিড় প্রচার হলে বিভ্রান্তি অনেকাংশে ঠেকানো যেত। কিন্তু তেমন কিছুই করেনি কমিশন। ভোটারদের অনেকেরই প্রশ্ন, গণনাপত্র কী ভাবে ভরতে হবে, তার স্পষ্ট নির্দেশ সেখানেই লিখিত দেওয়া যেত, তাতে ফর্মের আয়তন হয়তো বাড়ত। বিএলও-দের কাছে লিখিত নিয়মাবলিও দেওয়া যেত। কিন্তু কিছুই করা হয়নি।
কমিশন জানিয়েছে যে ফর্ম দেওয়া-নেওয়া, ভোটার যাচাই, ফর্ম ডিজিটাইজ় করা এবং তথ্য নির্দিষ্ট অ্যাপে আপলোড করতে হবে বিএলও-দেরই। তাতে ভুল তথ্য থাকলে অথবা ভুয়ো ভোটার তালিকাভুক্ত হলে দায় বর্তাবে তাঁদের উপরেও। শাস্তির ঝুঁকিও এড়ানো যাচ্ছে না। বিএলও-দের একাংশের প্রশ্ন, কমিশনকে আড়ালে রেখে সুপারভাইজ়ার বা ইআরও-দের একাংশ অসাধু কিছু করলেও কি তাঁদের উপরেই দায় চাপবে? এখানেই কমিশনের নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
কমিশন সূত্রের অবশ্য বক্তব্য, বিএলও বাদে অন্য কেউ কোনও অসাধু কাজে যুক্ত থাকলে শুধু তাঁদের বিরুদ্ধেই পদক্ষেপ করা হবে। বিষয়টি অনলাইনে হওয়ার ফলে প্রতিটি স্তর ডিজিটাল মাধ্যমে ধরা থাকবে। তাই ভুলভ্রান্তির অবকাশ নেই। কে বা কারা অসাধু কাজ করেছে, তা-ও সহজেই বোঝা যাবে। কিন্তু বাস্তব বলছে, কমিশনের তরফে প্রচার ও নজরদারির অভাব, নিয়মনীতি সম্পর্কে অস্পষ্টতা পরিস্থিতি জটিল করে তুলছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)