ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর নিয়ে আতঙ্কের কারণে এ বার মৃত্যুর অভিযোগ উঠল জলপাইগুড়িতে। মৃত্যু হল ৬২ বছরের এক বৃদ্ধের। পরিবারের দাবি, ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় বৃদ্ধের নিজের নাম ছিল। কিন্তু তাঁর দুই স্ত্রীর নাম ছিল না তালিকায়। তা নিয়েই দুশ্চিন্তায় ছিলেন বৃদ্ধ।
মৃতের নাম নরেন্দ্রনাথ রায়। শুক্রবার দুপুরে বাড়ির পাশের গাছ থেকে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া খড়িয়া পঞ্চায়েতের বাসিন্দা নরেন্দ্র পেশায় ভ্যানচালক ছিলেন। পরিবারের দাবি, গত কয়েক দিন ধরেই এসআইআর নিয়ে মানসিক চাপে ছিলেন। ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নরেন্দ্রের নিজের নাম থাকলেও, ছিল না তাঁর দুই স্ত্রী বিনোদিনী রায় (প্রথম স্ত্রী) এবং মিনতি রায়ের (দ্বিতীয় স্ত্রী) নাম।
মৃতের মেয়ে জয়তী বর্মণ বলেন, “বাবা সারা দিন একটাই কথা বলতেন, এ বার আমাদের ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠাবে না তো! তিন-তিন বার পঞ্চায়েতে গিয়ে খোঁজ নিয়েছিলেন নাম আছে কি না। সকলেই বোঝাত, কিছু হবে না। কিন্তু বাবা বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না।”
স্থানীয় সূত্রে খবর, মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগেও নরেন্দ্র স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যের কাছে গিয়েছিলেন। পরে বাড়িও ফেরেন। দুপুরের পর তাঁর ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান পরিবারের সদস্যেরা। কোতোয়ালি থানার পুলিশ দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে।
প্রতিবেশী নরেশ বর্মণ বলেন, ‘‘একদম শান্ত মানুষ ছিলেন। গত কয়েক দিন ধরে শুধু চিন্তায় ভুগছিলেন। আমরা সকলে বোঝালেও ভয় কাটেনি।”
এ নিয়ে রাজনৈতিক তরজাও শুরু হয়েছে। বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক শ্যাম প্রসাদ বলেন, “তৃণমূল ইচ্ছে করে মানুষকে ভুল বুঝিয়ে এসআইআর নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। সহজ প্রক্রিয়াটিকে জটিল করে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে।” পাল্টা শাসক তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক অরূপ দে বলেন, ‘‘সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী কেউ নাগরিকত্ব হারাচ্ছেন না। সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে বিরোধী দল।”
শুক্রবার এসআইআর আতঙ্কে আরও চার জনের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে রাজ্যে। গত ২৭ অক্টোবর রাজ্যে এসআইআর ঘোষণা হওয়ার পর থেকে সব মিলিয়ে ১৫ জনের মৃত্যুতে এই অভিযোগ উঠেছে।