Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

স্কুলে ফের বিক্ষোভ, তদন্তে প্রশাসনও

ঠান্ডা পড়ায় সোমবার মেয়েদের লেগিংস পরিয়ে বোলপুরের মকরমপুর এলাকার ওই স্কুলে পাঠিয়েছিলেন কিছু অভিভাবকে। স্কুলের নির্দিষ্ট পোশাকের সঙ্গে মিলছে না, এই যুক্তি দেখিয়ে স্কুলের তরফ থেকে মেয়েদের ওই লেগিংস খুলিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।

স্কুল চত্বরেই বিক্ষোভ অভিভাবকদের। নিজস্ব চিত্র

স্কুল চত্বরেই বিক্ষোভ অভিভাবকদের। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা 
বোলপুর শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৯ ০৫:২০
Share: Save:

শীত-সকালে বাড়ির দেওয়া লেগিংস পরে আসায় তা খুলতে বাধ্য করেছিল স্কুল। এই ঘটনার প্রতিবাদে বোলপুরের বেসরকারি ওই ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে মঙ্গলবারের পরে বুধবারও বিক্ষোভ দেখালেন অভিভাবকদের একাংশ। ‘এই প্রিন্সিপাল আমাদের চাই না’—স্লোগান দিতে শোনা গেল অনেক অভিভাবককে। স্কুল কর্তৃপক্ষ মুখে কুলুপ এঁটেছেন। তবে, জেলাশাসকের নির্দেশে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।

ঠান্ডা পড়ায় সোমবার মেয়েদের লেগিংস পরিয়ে বোলপুরের মকরমপুর এলাকার ওই স্কুলে পাঠিয়েছিলেন কিছু অভিভাবকে। স্কুলের নির্দিষ্ট পোশাকের সঙ্গে মিলছে না, এই যুক্তি দেখিয়ে স্কুলের তরফ থেকে মেয়েদের ওই লেগিংস খুলিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। লোয়ার কেজি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ২০-২৫ জন পড়ুয়ার লেগিংস খুলে নেওয়া হয় বলে অভিভাবকদের দাবি। এই ঘটনা জানাজানি হতেই নিন্দার ঝড় বয়ে যায় সর্বত্র। স্কুলে এসে মঙ্গলবার ক্ষোভে ফেটে পড়েন অভিভাবকেরা।

মঙ্গলবারই অভিভাবকেরা অভিযোগের আঙুল তুলেছিলেন স্কুলের প্রিন্সিপালের দিকে। অভিভাবকদের অভিযোগ ছিল, প্রিন্সিপালের নির্দেশেই সমস্ত কাণ্ড ঘটেছে। বুধবার ওই ঘটনায় স্কুলের প্রিন্সিপালের অপসারণ চেয়ে প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে স্কুলে বিক্ষোভ দেখান অভিভাবকেরা। একই সঙ্গে অভিভাবকদের পক্ষ থেকে বুধবার বীরভূমের জেলাশাসক, মহকুমাশাসক (বোলপুর) এবং শান্তিনিকেতন থানায় সমস্ত ঘটনা বিস্তারিত ভাবে লিখিত আকারে জানানো হয়েছে। অভিভাবক মাম্পি ঘোষ, কৃষ্ণ মুর্মু, পৌলমী সরকাররা এ দিন বলেন, ‘‘প্রিন্সিপাল থাকতে স্কুলে এ রকম ঘটনা ঘটে কী করে! প্রিন্সিপালের নিশ্চয়ই নির্দেশে ছিল, তাই এ রকম কাজ করা হয়েছে। তাই আমরা এই প্রিন্সিপালের পদত্যাগ চাইছি এবং প্রিন্সিপালের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করছি। পুরো ঘটনা নিয়ে আজ আমরা জেলাশাসক, মহকুমাশাসক ও থানায় লিখিত জানিয়েছি।’’

এ দিন প্রিন্সিপালের সঙ্গে দেখা করতে গেলে বাধা দেওয়া হয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের। ফলে, প্রিন্সিপালের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্কুলের এক শিক্ষকের দাবি, ‘‘অনেক ভিত্তিহীন কথাবার্তা বলা হচ্ছে। এই স্কুলের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। কিছু মানুষ এই স্কুলের নামকে কলঙ্কিত করতে চাইছেন।’’

নড়েচড়ে বসেছে জেলা প্রশাসনও। জেলাশাসকের নির্দেশে তিন জনের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বুধবার সকালে সেই তদন্ত কমিটির সদস্যেরা ওই বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে যান। তদন্ত কমিটিতে রয়েছেন জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিক নিরুপম সিংহ, জেলা স্কুল পরিদর্শক ( প্রাথমিক) সমরেন্দ্র নাথ সাঁতরা এবং বোলপুর মহকুমা প্রশাসনের এক জন ম্যাজিস্ট্রেট। এ ছাড়াও তাঁদের সঙ্গে ছিলেন জেলার শিশুকল্যাণ কমিটির চেয়ারপার্সন শাশ্বতী সাহা। প্রশাসনের তরফে এ দিন আট জন এ দিন স্কুল পরিদর্শনে আসেন।

সূত্রের খবর, এ দিন স্কুলে পৌঁছে তদন্ত কমিটির সদস্যেরা প্রথমেই প্রিন্সিপালের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন। এর পরে প্রিন্সিপাল রুমে স্কুলের একাধিক শিক্ষিকাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠান। তাঁদের সঙ্গে কথা বলার পরে তদন্ত কমিটির সদস্যরা স্কুলের লোয়ার কেজি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাসরুমগুলি ঘুরে দেখেন এবং সেখানে পড়ুয়া ও শিক্ষিকাদের সঙ্গে কথা বলেন। সোমবার স্কুলের বিভিন্ন ক্লাসের যে সমস্ত ছাত্রীর লেগিংস খুলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল, ওই পড়ুয়াদের অভিভাবকদের সঙ্গেও এ দিন কথা বলেন তদন্ত কমিটির সদস্যেরা।

স্কুল থেকে বেরিয়ে নিরুপমবাবু বলেন, ‘‘জেলাশাসকের নির্দেশে তদন্ত করার জন্য আজ আমরা এই স্কুলে এসেছিলাম। আজই তদন্তের রিপোর্ট আমরা জেলাশাসকের হাতে তুলে দেব।’’ সূত্রের খবর, তদন্ত কমিটি কথা বলে জেনেছে, গত এক বছর ধরে ওই স্কুলে শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে কোনও আলোচনা (পেরেন্ট-টিচার মিটিং) হয়নি। স্কুলের পোশাক-বিধিতে উলের পোশাকের কথা লেখা থাকলেও লেগিংস পরতে পারবে কি পারবে না, তা নির্দিষ্ট করে বলা নেই। প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘এটা স্পষ্ট যে, ওই ঘটনায় শিশুর অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। শিশুদের উপরে কোনও কিছু চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। সেটাও স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bolpur English Medium School Leggings
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE