Advertisement
E-Paper

বল ভেবে এগিয়ে দেখলাম বোমা

স্কুল ক্যাম্পাসের ভিতর থেকে উদ্ধার হল দুটি তাজা বোমা। ক্যাম্পাসে বোমা পড়ে থাকার খবর জানাজানি হতেই আতঙ্কে হুড়োহুড়ি পড়ে যায় ছাত্রছাত্রী থেকে শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মীদের মধ্যে। ছুটি হয়ে যায় স্কুলে। ঘটনাটি সোমবার দুপুরে সিউড়ি শ্রীশ্রী রমাকৃষ্ণ শিশু বিদ্যাপীঠের। স্কুল কর্তৃপক্ষর দাবি, টিফিনের সময় স্কুলের পড়ুয়ারা খেলতে খেলতে একটি ঝোপের মধ্যে বোমা দুটি পড়ে থাকতে দেখে।

নিজস্ব সংবাদদাতা, সিউড়ি

শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৫ ০২:৪৬
বোমা নিষ্ক্রিয় করতে রাখা হয়েছে জলের বালতিতে। নিজস্ব চিত্র।

বোমা নিষ্ক্রিয় করতে রাখা হয়েছে জলের বালতিতে। নিজস্ব চিত্র।

স্কুল ক্যাম্পাসের ভিতর থেকে উদ্ধার হল দুটি তাজা বোমা। ক্যাম্পাসে বোমা পড়ে থাকার খবর জানাজানি হতেই আতঙ্কে হুড়োহুড়ি পড়ে যায় ছাত্রছাত্রী থেকে শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মীদের মধ্যে। ছুটি হয়ে যায় স্কুলে। ঘটনাটি সোমবার দুপুরে সিউড়ি শ্রীশ্রী রমাকৃষ্ণ শিশু বিদ্যাপীঠের। স্কুল কর্তৃপক্ষর দাবি, টিফিনের সময় স্কুলের পড়ুয়ারা খেলতে খেলতে একটি ঝোপের মধ্যে বোমা দুটি পড়ে থাকতে দেখে। শিক্ষকদের কানে খবর যায়। শিক্ষকরা জানান, বোমা দুটি দেখার পর বিপদ এড়াতে স্কুল ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। এবং সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। মিনিট কুড়ির মধ্যেই পুলিশ এসে বোম দুটি উদ্ধার করে নিষ্ক্রিয় করে নিয়ে যায়। পুলিশ ‌ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।

পুলিশ ও স্কুল সূত্রে জানা যায়, সিউড়ি ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের রুটিপাড়ায় শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ বিদ্যাপীঠ হাইস্কুলের গায়ে শিশুদের ওই স্কুলটিতে নার্সারী থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। বর্তমানে স্কুলের পড়ুয়ার সংখ্যা ২০৬। এ দিন স্কুলে ছিলেন চার শিক্ষক-শিক্ষিকা আর মিড ডে মিলের তিন মহিলা কর্মী। প্রতিদিনের মতো এ দিনও মিড ডে মিল রান্না হয়। পড়ুয়াদের দুপুরের খাওয়া শেষও হয়। মিড ডে মিলের তিন কর্মী কল্যানী দে, সবিতা মাহারা ও আসলিমা বিবি কলতলায় রান্নার বাসন পত্র পরিষ্কার করছিলেন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা রেনুকা গড়াই, সহ শিক্ষক পূর্ণিমা দত্ত, রতন দে সরকার ও কৃষ্ণেন্দু দাসরা টিফিনের পরের ক্লাসে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এমন সময় কয়েকজন ছাত্র এসে খবর দেয়, স্কুলের পরিত্যক্ত কুয়োর পাশে আগাছার ঝোপের মধ্যে দুটি বোমা পড়ে আছে। তা শুনে চমকে ওঠেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা।

স্কুল সূত্রে খবর, একদল পড়ুয়া টিফিনের সময় স্কুলের মাঠে ছোট বল ছোড়াছুড়ি খেলছিল। কেউ কেউ দৌড়ঝাপ বা ছোটাছুটি করছিল। বল নিয়ে খেলার সময় এক ছাত্রের হাত থেকে বল কুয়োর পাড়ের কাছে ঝোপের গিয়ে পড়ে। বল কুড়োতে গিয়ে শেখ রাজ, মীর ইজরাইল ও শেখ ইস্রাফিলরা বোমা দুটি পড়ে থাকতে দেখে। তাদের কথায়, ‘‘প্রথমে আমরাও ভেবেছিলাম বল পড়ে আছে। কাছে গিয়ে দেখি দড়ি জড়ানো আছে। তখন সন্দেহ হয়। ভয় পেয়ে দৌড়ে সঙ্গে সঙ্গে মাস্টারমশাই ও দিদিমনিদের খবর দিই।’’

বোমার খবর পেয়ে ছাত্রদের সঙ্গে গিয়ে শিক্ষকরা কুয়োর কাছে বোমা পড়ে থাকতে দেখেন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা রেনুকাদেবী ও শিক্ষক রতনবাবু বলেন, ‘‘বোমার কথা শুনেই চমকে উঠেছিলাম। আর সত্যি সত্যি বোমা দেখার পর ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ভাগ্যিস কেউ বল ভেবে ওগুলো হাতে নেয়নি বা খেলা করতে যায়নি। ওগুলো হাতে নিলে যে কি হত তা ঈশ্বর জানেন।’’ পুলিশে খবর যাওয়ার পর ছুটিও হয়ে যায় স্কুলে। মিনিট কুড়ির মধ্যে পুলিশ স্কুলে আসে। স্কুলেরই একটি বালতি নিয়ে তাতে জল ভরে পুলিশ কর্মীরা বোম দুটিকে বালতির জলে দিয়ে নিষ্ক্রিয় করেন। এবং নিয়ে চলে যান।

ঘটনার পর শিক্ষক, শিক্ষিকা অভিভাবক থেকে এলাকার লোকজন ওই তিন ছাত্রের বুদ্ধির তারিফ করেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, চারদিক বাউন্ডারি ওয়াল দিয়ে ঘেরা স্কুলের ঝোপে কে বা কারা বোমা রাখল, সে নিয়ে। স্কুল সূত্রে জানা যায়, বোম রাখা বা পাওয়ার ঘটনা এই প্রথম হলেও ইতিপূর্বে স্কুলে একাধিকবার চুরির ঘটনা ঘটেছে। দরজা ভেঙে মিড ডে মিলের চাল-ডাল থেকে আসবাব পত্র, বেঞ্চ, চেয়ার পর্যন্ত চুরি গিয়েছে। স্কুলের ব্ল্যাক বোর্ড পর্যন্ত নষ্ট করে দিয়েছে দুষ্কৃতীরা। স্কুল কর্তৃপক্ষ থানায় এসব ঘটনা জানিয়ে একাধিকবার অভিযোগও জানিয়েছে। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। রতনবাবু বলেন, ‘‘কুয়ো ও কুয়ো লাগোয়া টিউবওয়েলটি দীর্ঘদিন থেকে ব্যবহার হয় না। পরিত্যক্ত কুয়ো পাড়ের কিছুটাতে আগাছা জন্মেছে। কিন্তু সেখানে যে কেউ বোম রাখতে পারে, বিশেষ করে শিশুদের স্কুলে তা আমরা স্বপ্নেও ভাবিনি। পুরো স্কুল চত্ত্বরটাই পরিস্কার করা হবে।’’

পুলিশ জানায়, স্কুলের ঝোপ থেকে বোম উদ্ধারের পর স্কুল ও সংলগ্ন এলাকা ঘুরে দেখা হয়েছে। দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। তাঁদের আশ্বাস, এলাকায় পুলিশি নজরদারি বাড়ানো হবে। যাতে আর এমন ঘটনা না ঘটে।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy