কলকাতা পুরসভার কর্মীদের জন্য স্বাস্থ্যবিমার সুবিধা চালু করার পথে বড় পদক্ষেপ করতে চলেছে পুরসভা। বহুকাল ধরে দলমতনির্বিশেষে যে দাবি উঠে আসছিল, সেই দাবিপূরণে উদ্যোগী হয়েছেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি মেয়র পরিষদের বৈঠকে এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। খুব শীঘ্রই সংশ্লিষ্ট ফাইল নবান্নে পাঠানো হবে। উদ্দেশ্য, কলকাতা পুরসভার কর্মচারীদের জন্য ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল হেল্থ স্কিম’ বা তার সমতুল্য কোনও স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্প চালু করা। তবে পুরসভার বিরোধী দলের একাংশ মনে করছে, আগামী বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই পুরসভার কর্মচারীদের জন্য স্বাস্থ্য বিমা চালু করতে উদ্যোগী হয়েছে পুরসভা।
বর্তমানে কলকাতা পুরসভার কর্মীরা প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে মেডিক্যাল অ্যালাওয়েন্স পান। এর পাশাপাশি একটি স্বল্পমূল্যের স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্প রয়েছে, যা ২০০০ সালে তৎকালীন মেয়র সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের আমলে চালু হয়েছিল। ওই বিমা প্রকল্পে পুরকর্মীরা সর্বোচ্চ এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসা সংক্রান্ত সুবিধা পান। ক্যান্সার-সহ কয়েকটি নির্দিষ্ট রোগের ক্ষেত্রে দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত বরাদ্দ থাকলেও তা ক্যাশলেস নয়, সম্পূর্ণ রিএমবার্স ভিত্তিক। অর্থাৎ আগে খরচ করে পরে বিল জমা দিলে টাকা ফেরত মেলে। এই পুরো ব্যয়ভার বহন করে কলকাতা পুরসভাই, রাজ্য সরকারের কোনও আর্থিক সহায়তা এতে থাকে না।
অন্য দিকে, রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ক্ষেত্রে চিত্র সম্পূর্ণ আলাদা। তাঁদেরও ৫০০ টাকা মেডিক্যাল অ্যালাওয়েন্সের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে যাঁরা ওই অ্যালাওয়েন্স নেন না, তাঁরা রাজ্য সরকারি স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্পের আওতায় পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ক্যাশলেস চিকিৎসা সুবিধা পান। রাজ্যের নির্ধারিত নিয়ম মেনেই এই সুবিধা কার্যকর হয়।
এই বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে পুরকর্মীদেরও রাজ্য সরকারি কর্মীদের সমতুল্য স্বাস্থ্যসুরক্ষা দেওয়ার দাবি দীর্ঘদিন ধরে উঠে আসছিল। পুরসভার তরফে নেওয়া এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে কয়েক হাজার পুরকর্মী ও তাঁদের পরিবার উপকৃত হবেন বলেই মনে করছে প্রশাসনিক মহল। তবে কলকাতা পুরসভার ইউনিয়নের একাংশের মতে, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে পুরসভা এলাকাগুলিতে ভাল ফল করেছিল বিজেপি। চল্লিশটির বেশি ওয়ার্ডে এগিয়ে গিয়েছিল তারা। সেই বিষয়টি মাথায় রয়েছে মেয়র ফিরহাদের। তাই তড়িঘড়ি নবান্নকে দিয়ে ফাইল অনুমোদন করিয়ে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে সুফল পেতে চাইছে তাঁর দল তৃণমূল।