Advertisement
E-Paper

হোমিওপ্যাথির ব্রিজ কোর্স, উঠছে বহু প্রশ্ন

কেউ মনে করছেন, আধুনিক চিকিৎসার সঙ্গে মিশলে হোমিওপ্যাথির বিশুদ্ধতা নিয়ে রোগীর বিশ্বাস অটুট থাকবে না এবং প্রশ্ন উঠবে ওষুধ ব্যবহারে চিকিৎসকের নৈতিকতা নিয়েও।

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:৫৯
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

অন্য ধারার চিকিৎসার সঙ্গে মিশলে কি হারিয়ে যাবে নিজস্বতা? রোগীরা কি আরও বিভ্রান্ত হবেন?

সম্প্রতি ব্রিজ কোর্স নিয়ে চিকিৎসক মহলে বিতর্ক শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের পরিকল্পনা মাফিক, স্বল্প দিনের তালিম নিয়ে অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসার ওষুধ ব্যবহারের ছাড়পত্র পাবেন হোমিওপ্যাথির মতো বিকল্প ধারার চিকিৎসকেরা। তার পর থেকেই এই প্রশ্নগুলি ঘুরপাক খাচ্ছে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক মহলে।

কেউ মনে করছেন, আধুনিক চিকিৎসার সঙ্গে মিশলে হোমিওপ্যাথির বিশুদ্ধতা নিয়ে রোগীর বিশ্বাস অটুট থাকবে না এবং প্রশ্ন উঠবে ওষুধ ব্যবহারে চিকিৎসকের নৈতিকতা নিয়েও। আবার কারও মত, রোগীর জীবন চিকিৎসকের কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রয়োজনের সময়ে ভিন্ন ঘরানার চিকিৎসা পদ্ধতিকে স্বাগত জানানো যেতেই পারে। ব্রিজ কোর্সকে নিয়ে এমনই সব মতামতে প্রায় দ্বিবিভক্ত রাজ্যের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক মহল।

ইতিমধ্যেই অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসকদের একাংশ আশঙ্কা করছেন, ব্রিজ কোর্সের জেরে চিকিৎসা পরিষেবা সঙ্কটে পড়বে। দেশজুড়ে আন্দোলনেও নেমেছে চিকিৎসক সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)। সেই আন্দোলনের সঙ্গে সহমত হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকদের সংগঠন প্রগতিশীল হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক সমিতি। সমিতির অন্যতম নেতা চিকিৎসক দীপক মিত্র বলেন, ‘‘হোমিওপ্যাথি ওষুধ সম্পর্কে এক জন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের সম্পূর্ণ জ্ঞান রয়েছে। কিন্তু অ্যালোপ্যাথি ওষুধ ব্যবহারের ছাড়পত্র পেলেও সেই ওষুধ সম্পর্কে সম্পূর্ণ জ্ঞান থাকবে না ওই চিকিৎসকের। রোগীকে এমন কোনও ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া যায় না, যার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সম্পূর্ণ জ্ঞান নেই খোদ চিকিৎসকেরই। সেটা নীতিগত ভাবে ঠিক নয়। তা ছাড়া হোমিওপ্যাথির একটি পৃথক চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে। কেন সেটা মেশানো হবে?’’’

হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছে, অ্যালোপ্যাথির সঙ্গে হোমিওপ্যাথি মিলিয়ে দিলে হারিয়ে যাবে বিশুদ্ধ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতি। যার জেরে সাধারণ মানুষের ভরসা কমে যাবে। উপসর্গ দেখে যে ভাবে রোগ নির্ণয় করা হয় হোমিওপ্যাথিতে, সেটা অন্যান্য ধারার চিকিৎসার থেকে আলাদা। তাই রোগ নির্মূল প্রক্রিয়াতেও সেই স্বতন্ত্রতা থাকা জরুরি। পাশাপাশি, এই ধরনের কোর্সের জেরে অন্য ধারার চিকিৎসা পদ্ধতি কিছুটা জানা হলেও সবটা জানা হবে না। তাই ওই অর্ধেক জ্ঞান নিয়ে চিকিৎসা চালানো ঠিক নয় বলেও একাংশ মনে করছেন।

প্রবীণ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক অশোক গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘হোমিওপ্যাথির গবেষণা, ওষুধ তৈরি কিংবা ব্যবহার অ্যালোপ্যাথির থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাই দু’টিকে মেশানো ঠিক নয়। এর জেরে হোমিওপ্যাথির নিজস্বতা হারিয়ে যাবে। রোগী আরও বিভ্রান্ত হবেন।’’

হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার অস্তিত্ব বজায় রাখার দায় থাকবে চিকিৎসকদের উপরেই, জানান হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকদের আর একটি সংগঠন ‘অল বেঙ্গল হোমিওপ্যাথিক ডক্টর্স ফোরাম’-এর সহ-সভাপতি চিকিৎসক চিন্ময় মোহান্ত। তাঁর বক্তব্য, জরুরি চিকিৎসার ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের কিছু ওষুধের ছাড়পত্র থাকবে। কিন্তু চিকিৎসককে তা ব্যবহারের মাত্রা জানতে হবে। তাঁর কথায়, ‘‘প্রবীণদের হাঁটু, কব্জির ব্যাথার চিকিৎসায় এক জন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক তাঁর ধারার ওষুধের ব্যবহারের পরামর্শ দেবেন। ছাড় মিলবে শুধুমাত্র জরুরি ক্ষেত্রে।’’

নিতাইচরণ চক্রবর্তী হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষক-চিকিৎসক কাজী আব্দুল মোহিত অবশ্য জানান, যে কোনও ধারার চিকিৎসা পদ্ধতির মতোই হোমিওপ্যাথিরও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। রোগী পরিষেবার কথা ভেবেই সেই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠা জরুরি। তাঁর কথায়, ‘‘সাপে কামড়ালে কিংবা কোনও মানুষের হার্ট অ্যাটাক হলে কী ওষুধ দিলে প্রাণ বাঁচানো যায়, সেটা দেখা সবচেয়ে জরুরি। এর জন্য হোমিওপ্যাথির নিজস্বতা নষ্ট হবে না।’’

যদিও এই যুক্তি মানতে নারাজ অশোকবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘জরুরি চিকিৎসা করার জন্য অ্যালোপ্যাথিতে যে পদ্ধতির উল্লেখ রয়েছে, সেটা পাঁচ কিংবা সাত মাসে রপ্ত করা যায় না। সীমিত জ্ঞানে বিপদ বাড়বে।’’

bridge course Homeopathy ব্রিজ কোর্স হোমিওপ্যাথি
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy