Advertisement
E-Paper

দুর্বল পড়ুয়াদের জন্য ‘ব্রিজ কোর্স’ মাদ্রাসায়

এত দিন স্কুলছুটদের স্কুলমুখো করানোর জন্য চালু ছিল ব্রিজ কোর্স। কিন্তু চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে মেধার নিরিখে পিছিয়ে পড়া পড়ুয়াদের মূল স্রোতে টেনে তোলার জন্য পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদ চালু করল ‘ব্রিজ কোর্স।’ পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য এই কোর্স চালু হচ্ছে বলে জানান পর্ষদের সচিব নুরুস সালাম।

মনিরুল শেখ

শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৫ ০০:৫৮
ক্লাস চলছে। —ফাইল চিত্র।

ক্লাস চলছে। —ফাইল চিত্র।

এত দিন স্কুলছুটদের স্কুলমুখো করানোর জন্য চালু ছিল ব্রিজ কোর্স। কিন্তু চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে মেধার নিরিখে পিছিয়ে পড়া পড়ুয়াদের মূল স্রোতে টেনে তোলার জন্য পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদ চালু করল ‘ব্রিজ কোর্স।’ পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য এই কোর্স চালু হচ্ছে বলে জানান পর্ষদের সচিব নুরুস সালাম।

পঞ্চম শ্রেণিতে ওঠার পরেও সাধারণ বাংলা বানান, যুক্তাক্ষরের ধারণা তৈরি হয় না অনেক পড়ুয়ার। অনেকে চেনে না ইংরেজির ছোট হাতের অক্ষর। কারও কারও অঙ্কের সাধারন যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগের ধারণাটা অবধি নেই। রাজ্যের মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের আওতায় রয়েছে ৬১৪টি হাই মাদ্রাসা। পর্ষদের পর্যবেক্ষণ, বেশির ভাগ মাদ্রাসায় পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া অনেক পড়ুয়ার বাংলা-ইংরেজি ও গণিতের প্রাথমিক ধারণাটাই নেই। এই সমস্ত পিছিয়ে পড়া পড়ুয়াদের মূল স্রোতে টেনে আনার জন্য পর্ষদ চলতি শিক্ষাবর্ষেই চালু করেছে বিশেষ পাঠদান। পোশাকি নাম ‘ব্রিজ কোর্স।’

কী এই ‘ব্রিজ কোর্স?’ গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের সচিব সৈয়দ নুরুস সালাম পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও মাদ্রাসা বিষয়ক দফতরের সচিবকে চিঠি পাঠিয়ে বিষয়টি উল্লেখ করেন। ২০০৯ সালের শিক্ষার অধিকার আইনে বলা হয়েছে, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সমস্ত পড়ুয়াকে বিনা পয়সায় শিক্ষার সুযোগ দিতে হবে। সেই লক্ষ্যেই সরকার বিভিন্ন স্কুলে বিনা পয়সায় বই-পত্রের যোগান দিয়ে থাকে। ব্যবস্থা করা হয় মি়ড-ডে মিলেরও। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, পঞ্চম শ্রেণির অনেক পড়ুয়ার পঠন-পাঠনের ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত উন্নতি হয়নি। রাজ্যের বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষকদের উপলব্ধি: পঞ্চম শ্রেণিতে উঠে গেলেও অনেক পড়ুয়া এখনও অক্ষর চেনে না। নদিয়ার এক মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক জানান, তাঁর মাদ্রাসায় পঞ্চম শ্রেণিতে দু’শো জন পড়ুয়া পঞ্চম শ্রেণিতে রয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় দেড়শো জন পড়ুয়ার বাংলা-ইংরেজি ও অঙ্কের প্রাথমিক জ্ঞানটুকু অবধি নেই। অনেকে আবার অক্ষর চেনে। কিন্তু বাক্য তৈরি করতে পারে না। আবার কেউ বাক্য তৈরি করতে পারলেও তা পড়তে পারে না। বা পড়ে তার অর্থ উদ্ধার করতে পারে না। একই অবস্থা ইংরেজি ও গণিতের ক্ষেত্রেও। ওই দু’টি বিষয়েও অনেক পড়ুয়ার প্রাথমিক জ্ঞানটুকু নেই। এই পড়ুয়াদের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার জন্যই পর্ষদ ব্রিজ কোর্স চালু করেছে।

ঠিক কী ভাবে বাছা হচ্ছে দুর্বল পড়ুয়াদের? মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদ বাংলা-ইংরেজি ও অঙ্কের তিনটি প্রশ্ন পত্র তৈরি করেছে‌। ওই প্রশ্নপত্রের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ভিত্তি নির্ণায়ক পত্র।’ প্রতিটি বিষয়ের পূর্ণমান ১০০। প্রশ্নগুলি খুবই সহজ। যেমন বাংলার ক্ষেত্রে, প্রশ্ন হিসেবে রয়েছে, পরীক্ষার্থীর নিজের নাম, জেলার নাম ইত্যাদি। এগুলির উত্তর লিখতে না- পারা পরীক্ষার্থীরা সমমানের নয় বলা ধরা হবে। ১০০-র মধ্যে ৪০-এর কম নম্বরপ্রাপ্ত পড়ুয়াদের বাছাই করার কথা বলা হয়েছে। পর্ষদের সচিব নুরুস সালাম বলেন, ‘‘আমরা মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের কাছ থেকে এই প্রকল্প বাবদ ৫০ লক্ষ টাকা ইতিমধ্যে পেয়েছি। রাজ্যের মাদ্রাসাগুলিকে এই প্রকল্প চালু করার জন্য ৭,২০০ টাকা করে দেওয়া হয়েছে।’’ পর্ষদ সূত্রের খবর, শিক্ষাকে বাস্তবমুখী করে তোলার জন্য বিভিন্ন রকমের সরঞ্জাম কেনার জন্য দেওয়া হয়েছে ওই টাকা। যেমন বাংলা-ইংরেজির ক্ষেত্রে প্লাস্টিকের অক্ষর কেনার কথা বলা হয়েছে। ওই টাকায় পড়ুয়াদের খাতা-কলম কিনে দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।

এই প্রকল্পটিকে সার্থক করতে চলতি বছরের মার্চ মাসে মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে একটি বিশেষ কর্মশালার আয়োজন করে পর্ষদ। এক দিনের ওই প্রশিক্ষণ শিবিরে হাজির ছিলেন নদিয়া ও মুর্শিদাবাদের প্রায় দেড়শো হাই-মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষকেরা। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিতে হাজির জন্য ছিলেন পর্ষদ সভাপতি ফাজলে রাব্বি ও উপ-সচিব (শিক্ষা) আজিজার রহমান। ওই প্রশিক্ষণ শিবিরেই প্রধান শিক্ষকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে ‘ভিত্তি নির্ণায়ক পত্র।’

পর্ষদের নির্দেশ মতো রাজ্যের মাদ্রাসাগুলি দুর্বল পড়ুয়াদের চিহ্নিত করে শুরু করেছে বিশেষ ক্লাস। মুর্শিদাবাদের নসিপুর হাই-মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাসুদ আলম জানান, তাঁর স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে ১৭৬ জন পড়ুয়া রয়েছে। প্রায় দেড়শো জন পড়ুয়ার মান খারাপ। তাদের সমমানে উন্নীত করার জন্য মাস খানেক ধরে শুরু হয়েছে প্রশিক্ষণ। তিনটি বিষয়ে ৪৮ ঘণ্টার এই প্রশিক্ষণ চলবে। কেন এত বিপুল পরিমাণ পড়ুয়ার বাংলা-ইংরেজির সাধারণ জ্ঞানটুকু নেই? মাসুদ আলম বলেন, ‘‘পাশ-ফেল প্রথা উঠে না থাকায় অনেক ক্ষেত্রে প্রাথমিক স্কুলে পড়ুয়ারা কার্যত কিছুই শিখছে না। তা ছাড়া ওই পড়ুয়ারা বাড়িতেও পড়াশোনার ব্যাপারে সে ভাবে নজর পায়নি। তার ফলেই এই অবস্থা।’’ নদিয়ার চাপড়ার একটি মাদ্রাসার ইংরেজির শিক্ষক আবুল হোসেন বিশ্বাস এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আমার স্কুলে ইংরেজির দুর্বল পড়ুয়াদের জন্য বিশেষ ক্লাস চালু করা হয়েছে। খেলাচ্ছলে এই ক্লাসে ভালই সাড়া মিলছে।’’

স্কুল শিক্ষা দফতরের পক্ষ থেকে অবশ্য এমন কোনও প্রকল্প নেই বলে জানান মুর্শিদাবাদের স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) পূরবী বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘‘স্কুলগুলিতে এই ধরনের কোনও প্রকল্প নেই। তবে এই প্রকল্প পিছিয়ে পড়া পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।’’ তবে অনেক ক্ষেত্রে স্কুল নিজের দায়িত্বে পিছিয়ে-পড়া পড়ুয়াদের জন্য বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা করে। যেমন, মুর্শিদাবাদের লালগোলার এক স্কুল বিশেষ ক্লাস চালু করে সাফল্য পায়।

Manirul Shek Madrasa Bridge course student school
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy