ঘরের দরজা খোলা। ভিতরে খাটের উপর চিৎ হয়ে শুয়ে রয়েছেন এক প্রৌঢ়। বালিশ থেকে, বিছানার চাদর রক্তে ভেসে যাচ্ছে। প্রৌঢ়ের মাথার পিছনে গেঁথে রয়েছে একটি হাতুড়ি! সকালে পুজোর আয়োজন করতে কারখানায় এসে এ ভাবেই বাবাকে খুন হয়ে পড়ে থাকতে দেখলেন ছেলে। রবিবার ঘটনাটি ঘটেছে লিলুয়ার গোশালা এলাকার একটি কড়াই তৈরির কারখানায়।
পুলিশ সূত্রের খবর, গোশালা রোডে দীর্ঘ দিন ধরেই কড়াই তৈরির কারখানা রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দা অশোক সিংহের। প্রায় দুই হাজার বর্গফুটের ওই কারখানায় চারজন শ্রমিক কাজ করেন। শনিবার সকালে ও সন্ধ্যায় বিশ্বকর্মা পুজো হয়ে যাওয়ার পরে শ্রমিকরা এবং অশোকবাবুর ছেলে রাকেশও বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন। কিন্তু প্রতি দিনের মতো ওই দিনও রাতে কারখানাতেই থেকে গিয়েছিলেন অশোকবাবু।
পুলিশকে রাকেশ জানিয়েছেন, পুজোর আয়োজন করার জন্য এ দিন সকাল ৬টা নাগাদ তিনি কারখানায় এসে দেখেন মূল দরজা খোলা। ভিতরে ঢুকে দেখেন কেউ নেই। সন্দেহ হওয়ায় অশোকবাবুর শোয়ার ঘরে ঢুকে দেখেন তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। আলমারি ও অন্যান্য জিনিস লন্ডভন্ড। একটি মোটরবাইক, তিনটি মোবাইল সহ নগদ প্রায় ৬০ হাজার টাকা উধাও। রাকেশ বলেন, ‘‘প্রথমে দরজা খোলা দেখে সন্দেহ হলেও তেমন কিছু মনে হয়নি। পরে ভিতরে ঢুকে কাউকে দেখতে না পেয়েই মনে হচ্ছিল খারাপ কিছু হয়েছে। তার পরেই বাবাকে এ ভাবে পড়ে থাকতে দেখে সবাইকে ডাকলাম।’’
পুলিশ সূত্রের খবর, অশোকবাবুর বিছানার পাশ থেকে একটি খালি গ্লাস ও একটি ভর্তি মদের বোতল মিলেছে। রাকেশ তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, তাঁরা শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ সবাই চলে গিয়েছিলেন। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, পিছন দিক থেকে হাতুড়ি দিয়ে সজোরে অশোকবাবুর মাথায় মারা হয়। আর তাতেই হাতুড়িটি মাথার পিছনে গেঁথে যায়। তবে নিছকই ডাকাতির জন্য এই খুন না এর পিছনে ব্যক্তিগত কোনও আক্রোশ কাজ করেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে দাবি পুলিশের। কারখানার সামনের দিকে থাকা সিসিটিভির ফুটেজও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। ঘটনাস্থলে হাওড়া সিটি পুলিশের পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তা ও গোয়েন্দারা হাজির হয়েছিলেন। এর পুলিশ কর্তা বলেন, ‘‘ডাকাতিও হতে পারে। আবার ব্যক্তিগত শত্রুতার কারণে খুন করে নজর ঘোরানোর জন্য জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
আরও পড়ুন: What is so special about Durga Puja in Bengal?
স্থানীয় সূত্রের খবর, খুব বদ মেজাজী ছিলেন অশোকবাবু। মাস দুয়েক আগে পাশের কারখানার এক শ্রমিকের সঙ্গে গন্ডগোল হয়েছিল। তখন ওই শ্রমিককে তিনি বেঁধে পিটিয়ে ছিলেন। তার জেরে অন্যান্য কারখানার শ্রমিকেরা অশোকবাবুর কারখানার সামনে বিক্ষোভ দেখিয়ে ছিলেন। কলকাতা পিজরাপোল ভাড়াটে সংগঠনের সভাপতি অসিত ঘো, বলেন, ‘‘আমারও কারখানা রয়েছে। শেষ ৩৫-৪০ বছরে এমন ঘটনা ঘটেনি। তবে উনি খুব বদমেজাজি ছিলেন। তাই ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকেও কেউ এমন ঘটাতে পারে। কিন্তু কিছুই এখন সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy