চেষ্টাটা শুরু হয়েছিল গত শতাব্দীর শেষ লগ্নে। তার পর প্রায় এক দশক চুপচাপ। ফের তোড়জো়ড় হয়েছিল বছর পাঁচেক আগে। আবার সে ফিরে এল!
রাজ্যের নাম বদলের উদ্যোগ।
রাজ্যের নাম পাল্টে বাংলা ভাষায় ‘বাংলা’ বা ‘বঙ্গ’ এবং ইংরেজিতে ‘বেঙ্গল’ করতে চেয়ে মঙ্গলবার প্রস্তাব নিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভা। এর পরে সর্বদল বৈঠক ঘুরে সেই প্রস্তাব যাবে বিধানসভায়। তার পরে সংসদে পাশ হলে তবেই শেষ পর্যন্ত নাম বদলাবে রাজ্যের। মমতার সরকারের যুক্তি, ‘ওয়েস্ট বেঙ্গলে’র গোড়ায় ‘ডব্লিউ’ই যত নষ্টের গোড়া! সর্বভারতীয় স্তরে সব রাজ্যকে নিয়ে কোনও বৈঠক হলে বর্ণানুক্রমে এ রাজ্যের ডাক পড়ে শেষের দিকে। শেষ দিকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী কী বলছেন, শোনার ধৈর্য বিশেষ কারও থাকে না। কয়েক দিন আগে আন্তঃরাজ্য পরিষদের বৈঠকে গিয়ে একই অভিজ্ঞতা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতার। তাই নামের আগে ‘ডব্লিউ’ ঝেড়ে ফেলে অক্ষরের তালিকায় এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা।
ঘটনা হল, এমন চেষ্টা প্রথম নয়। মমতাই তাঁর প্রথম ইনিংসে রাজ্যের নাম সব ভাষাতেই ‘পশ্চিমবঙ্গ’ করার জন্য বিধানসভায় প্রস্তাব পাশ করিয়েছিলেন। সর্বসম্মতিতে সেই প্রস্তাব পাশও হয়েছিল। কিন্তু তার বছর তিনেক পরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে সংসদে বিষয়টি তোলার আশ্বাস ছাড়া রাজ্যের ভাগ্যে আর কিছু জোটেনি। এখন তাই গোটা প্রক্রিয়াই আবার নতুন করে করার উদ্যোগ। আর সুযোগ যখন পাওয়াই গিয়েছে, এ বার পশ্চিমবঙ্গের ‘পি’র বদলে বেঙ্গলের ‘বি’। তাতে আরও কয়েক ধাপ উপরে ওঠা যাবে!
এ দিন মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে পরিষদীয়মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, ১৮ অগস্ট স্পিকারের ডাকে বিধানসভায় সর্বদল বৈঠক বসবে। ২৬ অগস্ট থেকে বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন ডেকে প্রস্তাবটি আলোচনা হবে। পার্থবাবুর কথায়, ‘‘আগের বার উদ্যোগী হওয়ার পরে পাঁচ বছর হয়ে গিয়েছে। এখন তাই নতুন করে করছি। এর মধ্যে আমরা আরও মতামত নিয়ে দেখেছি, বঙ্গ বা বাংলা হওয়াই ভাল।’’
পার্থবাবুরাই প্রথম এমন মনে করলেন, তা অবশ্য নয়। বাম জমানায় উপ-মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের তৎপরতায় ১৯৯৯ সালে বিধানসভায় প্রস্তাব এসেছিল ‘ক্যালকাটাকে কলকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গকে বাংলা করার। প্রথমটা কার্যকর হলেও পরেরটা আর হয়নি। বিধানসভার নথি বলছে, সে দিনের আলোচনায় সদ্যভূমিষ্ঠ দল তৃণমূলের বিধায়ক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় রাজ্যের নাম বদলের বিরোধিতা করেছিলেন। একই অবস্থান নিয়েছিলেন তখন কংগ্রেসে থাকা সুব্রত মুখোপাধ্যায়। এখন দু’জনেই মমতার মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী। শোভনদেব এ দিন ফোন ধরেননি। সুব্রতবাবু বলেছেন, ‘‘আবছা মনে পড়ছে, এ রকমই কিছু একটা হয়েছিল!’’ আর পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থবাবুর মন্তব্য, ‘‘পুরনো কথা তুলে এখন আর লাভ কী?’’
আটের দশকের শেষ দিকেও এক বার রাজ্যের নাম বদল নিয়ে নাড়াচাড়া হয়েছিল। মূল উদ্যোগী ছিলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান সরোজ মুখোপাধ্যায়। তবে সে চেষ্টা আনুষ্ঠানিক পর্যায়ে পৌঁছয়নি। মমতার নবতম উদ্যোগের কথা শুনে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র এ দিন শুধু বলেন, ‘‘বামফ্রন্টে আলোচনা করে মতামত জানাব।’’ তবে বাম সূত্রে বলা হচ্ছে, শুধু অক্ষরের তালিকায় এগোনোর জন্যই নাম বদলানোর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও তাতে রাজ্যের স্বার্থসিদ্ধি হলে আপত্তির কিছু নেই— এই যুক্তিতে ২০১১ সালে প্রস্তাবের বিরোধিতা করা হয়নি।
প্রধান বিরোধী কংগ্রেসও দলে আলোচনার অপেক্ষায় মতামত মুলতুবি রেখেছে। তবে বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘বর্ণমালায় পিছনের দিকে আছে বলে তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশ বা উত্তরাখণ্ডে কি কোনও কাজ হয় না?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy