আগামী বছর, অর্থাৎ ২০২৬ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হয়ে যাচ্ছে চলতি বছরেই। কারণ, এ বার উচ্চ মাধ্যমিক হবে সিমেস্টার পদ্ধতিতে। প্রথম সিমেস্টারের পরীক্ষার প্রশ্ন হবে মাল্টিপল চয়েস (এমসিকিউ) ভিত্তিক। ওএমআর শিটে উত্তর দিতে হবে পড়ুয়াদের। পরীক্ষা চলাকালীন এই প্রশ্নপত্র যাতে কোনও ভাবেই বাইরে না বেরোয়, তার জন্য আরও বেশি সতর্ক হচ্ছে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ।
২০২৬ সালের উচ্চ মাধ্যমিকের প্রথম সিমেস্টারের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে আগামী সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর। পরীক্ষা চলবে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। বুধবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য জানান, শুধু মোবাইল ফোনই নয়, যে কোনও ধরনের বৈদ্যুতিন যন্ত্র-সহ কোনও পরীক্ষার্থী ধরা পড়লে তার সমস্ত পরীক্ষা বাতিল হবে। কোনও পরীক্ষার্থী যদি কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা শিক্ষক বা কর্মীর সঙ্গে গোলমাল, হাতাহাতি কিংবা ভাঙচুরে জড়ায়, সে ক্ষেত্রেও তার সব পরীক্ষা বাতিল হবে। এ বার পরীক্ষায় ছাত্রছাত্রীরা সাধারণ ক্যালকুলেটর রাখতে পারবে না বলেও জানিয়েছে সংসদ।
সংসদের আরও নির্দেশ, প্রতিটি পরীক্ষা কেন্দ্রে অন্তত দু’টি সিসি ক্যামেরা রাখতে হবে। একটি ক্যামেরা থাকবে পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢোকার মুখে। অপরটি থাকবে ভেনু সুপারভাইজ়ারের ঘরে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এক মাস সংরক্ষণ করতে হবে স্কুলকে। পরীক্ষার হলে ঢোকার সময়ে প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে পরীক্ষা করবেন শিক্ষক অথবা শিক্ষাকর্মীরা। যে দিন যে বিষয়ের পরীক্ষা হবে, সে দিন সেই বিষয়ের শিক্ষক নজরদারি করতে পারবেন না। তবে, তিনি পরীক্ষা সংক্রান্ত অন্য কাজ করতে পারবেন।
এ বার ১২২টি পরীক্ষা কেন্দ্রকে ‘স্পর্শকাতর’ বলে ঘোষণা করেছে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। এর মধ্যে মালদহ সব চেয়ে বেশি স্পর্শকাতর জেলা হিসাবে গণ্য হচ্ছে। সংসদ জানিয়েছে, পরীক্ষার হলে প্রতি ২০ জন পরীক্ষার্থী-পিছু এক জন শিক্ষক নজরদারি করবেন। একটি বেঞ্চে দু’জন করে পরীক্ষার্থী বসতে পারবে। পাশাপাশি দু’জন পরীক্ষার্থী একই রকম প্রশ্ন পাবে না। অর্থাৎ, প্রশ্নের ক্রম এক থাকবে না। প্রশ্নপত্রের দু’টি সেট থাকবে। তবে, সংসদ-সভাপতি জানিয়েছেন, পরীক্ষা হবে প্রথম সেটেই। জরুরি প্রয়োজন দেখা দিলে দ্বিতীয় সেটে পরীক্ষা হবে।
পরীক্ষা শুরু হবে সকাল ১০টায়। চলবে ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিট। পরীক্ষার্থীদের ৯টার মধ্যে কেন্দ্রে ঢুকতে হবে। সাড়ে ১০টার পরে কোনও পরীক্ষার্থীকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। চিরঞ্জীব বলেন, ‘‘মাত্র ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিটের পরীক্ষা। তাই পরীক্ষা চলাকালীন কোনও পরীক্ষার্থী শৌচাগারে যেতে পারবে না। পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগে হল থেকে বেরোনোও যাবে না।’’ সংসদ জানিয়েছে, ৯টা ৫৫ মিনিটে পরীক্ষার্থীদের সামনে প্রশ্নপত্রের প্যাকেটের সিল খোলা হবে। ১০টায় পরীক্ষার্থীরা প্রশ্নপত্র পেয়ে লিখতে শুরু করবে। সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া বাধ্যতামূলক। উত্তর দিতে হবে ওএমআর শিটে এবং মূল্যায়ন হবে কম্পিউটারে। সে কারণে প্রথম সিমেস্টারে কোনও পরীক্ষক বা প্রধান পরীক্ষক থাকছেন না।
সংসদ সূত্রে জানা গিয়েছে, কোনও পরীক্ষার্থী যদি প্রথম সিমেস্টারে কোনও একটি বিষয়ে উত্তীর্ণ হতে না পারে, তা হলে সে আগামী ফেব্রুয়ারিতে দ্বিতীয় সিমেস্টারের সঙ্গে প্রথম সিমেস্টারের সংশ্লিষ্ট বিষয়ের পরীক্ষা দিতে পারবে। তবে, সেটি সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষা হিসাবে বিবেচিত হবে। এমনকি, কোনও পরীক্ষার্থী যদি মনে করে, প্রথম সিমেস্টারের কোনও পরীক্ষাই সে দেবে না, সে ক্ষেত্রেও ওই পরীক্ষার্থী প্রথম সিমেস্টারের সব বিষয়ের পরীক্ষা সাপ্লিমেন্টারি হিসাবে দিতে পারবে। ল্যাবরেটরি-নির্ভর বিষয়গুলিতে ৩৫ নম্বরের পরীক্ষা হবে। প্র্যাক্টিক্যাল নেই, এমন বিষয়গুলিতে পরীক্ষা হবে ৪০ নম্বরে। মোট নম্বরের ৩০ শতাংশ পাশ নম্বর হিসাবে গণ্য হবে।
সংসদ সভাপতি জানান, এ বার মোট পরীক্ষার্থী ৬৫৯৮১৪ জন। এর মধ্যে ছাত্র ২৯০১১৬, ছাত্রী ৩৬৯৬৯৮ জন। প্রথম সিমেস্টারের ফল বেরোবে ৩১ অক্টোবরের আশপাশে। দ্বিতীয় সিমেস্টার হবে ফেব্রুয়ারিতে। সেখানে ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন থাকবে। দু’টি সিমেস্টার মিলিয়ে সার্বিক মূল্যায়ন হবে। যে কোনও সাহায্যের জন্য হেল্প ডেস্কের নম্বরে ফোন করা যাবে। নম্বরটি হল ০৩৩-২৩৩৭০৭৯২/২৩৩৭৯৬৬১।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)