Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Justice Abhijit Gangopadhyay

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে হাই স্কুলের ১,৯১১ গ্রুপ ডি কর্মীর চাকরি বাতিল, জারি বিজ্ঞপ্তিও

শুক্রবার স্কুল সার্ভিস কমিশনের আইনজীবী আদালতে স্বীকার করে নেন, ১,৯১১ জন গ্ৰুপ-ডি প্রার্থীকে অন্যায় ভাবে নিয়োগ করা হয়েছিল। বিচারপতি জানতে চান, সে সময় এসএসসি-র চেয়ারম্যান কে ছিলেন।

image of Justice Abhijit Gangopadhyay

অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ, অবিলম্বে ১,৯১১ জন গ্ৰুপডি কর্মীর সুপারিশপত্র প্রত্যাহার করতে হবে। — ফাইল ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১২:৩৯
Share: Save:

এসএসসিকে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ, অবিলম্বে ১,৯১১ জন গ্ৰুপডি কর্মীর সুপারিশপত্র প্রত্যাহার করতে হবে। বিচারপতি বলেন, ‘‘আমার বিশ্বাস, বেআইনি ভাবে দুর্নীতি করে এই সব প্রার্থীদের সুপারিশ দেওয়া হয়েছিল।’’ বিচারপতি এও জানিয়েছেন, যে প্রার্থীদের সুপারিশপত্র বাতিল করা হবে, তাঁরা অন্য কোনও চাকরির পরীক্ষায় আর বসতে পারবেন না।

শুক্রবার স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর আইনজীবী আদালতে স্বীকার করে নেন, ১,৯১১ জন গ্ৰুপ-ডি প্রার্থীকে অন্যায় ভাবে নিয়োগ করা হয়েছিল। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় জানতে চান, সেই সময় এসএসসি-র চেয়ারম্যান কে ছিলেন। এসএসসি-র আইনজীবী জানান, সুবীরেশ ভট্টাচার্য। কমিশন তথ্য যাচাই করে আদালতে হলফনামা দিয়ে স্বীকার করে, ওই সব প্রার্থীর উত্তরপত্র (ওএমআর শিট)-এ কারচুপি করে চাকরির সুপারিশপত্র দেওয়া হয়েছিল।

শুক্রবার বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশের সঙ্গে সঙ্গেই ওয়েব সাইটে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ওই প্রার্থীদের সুপারিশ প্রত্যাহার করে নিল এসএসসি। এ বার মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে ওই প্রার্থীদের আইন মেনে অবিলম্বে চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।

সুবীরেশকে নিয়েও কড়া সিদ্ধান্ত নিলেন বিচারপতি। তিনি বলেন, ‘‘সুবীরেশ ভট্টাচার্যকে নির্দেশ দিচ্ছি, কাদের কথায় এত বেআইনি নিয়োগ হয়েছে, অবিলম্বে তাঁদের নাম জানাতে। তাঁদের নাম জানাতে হবে, কারা এই দুর্নীতিতে যুক্ত।’’ এর পরেই সুবীরেশকে এই মামলায় যুক্ত করার নির্দেশ দেন বিচারপতি। তিনি এও জানান, তাঁর পরিবারকে নিরাপত্তা দেবে কেন্দ্রীয় বাহিনী। যাঁরা বেআইনি ভাবে নিয়োগ পেয়েছেন, সিবিআই প্রয়োজনে হেফাজতে নিয়ে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে। আর এখন কোথাও নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা ব্যবহার করতে পারবেন না সুবীরেশ। এই প্রসঙ্গে মামলাকারীদের আইনজীবী ফিরদৌস শামিম বলেন, ‘‘এই দুর্নীতিতে প্রভাশালীরা থাকবেন না, তা হতে পারে? এই দুর্নীতির সঙ্গে আরও অনেকে যুক্ত। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ে শেষ হবে না।’’

বৃহস্পতিবার আদালতে এসএসসির আইনজীবী দাবি করেছিলেন, গ্রুপ ডি নিয়োগের ক্ষেত্রে ২,৮১৯ জনের উত্তরপত্র (ওএমআর শিট)-এ কারচুপি করা হয়েছে। কমিশনের আইনজীবী এও জানিয়েছিলেন, তাদের তরফে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে কারচুপি যে হয়েছে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। ওই ২,৮১৯ জনের মধ্যে নিয়োগপত্র পেয়েছিলেন ১,৯১১ জন। তাঁদেরই চাকরি বাতিলের সুপারিশ করল শুক্রবার হাই কোর্ট।

এর পরেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ক্ষোভ প্রকাশ করে এসএসসির আইনজীবীকে বলেন, ‘‘আপনারাই যখন বলছেন ২,৮১৯ জনের ওএমআর শিটে কারচুপির বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই, তা হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ আপনাদেরই করতে হবে। প্রথমে আলাদা ভাবে এই প্রার্থীদের নাম কমিশনের সাইটে আবারও প্রকাশ করুন। তার পর তাঁদের নিয়োগ বাতিল করুন।’’ আর এ জন্য কমিশনকে ২৪ ঘণ্টা সময় দিয়েছিলেন বিচারপতি। তিনি এও জানিয়েছিলেন, শুক্রবার আদালতে কমিশন হলফনামা জমা দেওয়ার ৫ মিনিটের মধ্যে ২,৮১৯ জনের নাম কমিশনের সাইটে আপলোড এবং সুপারিশপত্র প্রত্যাহার করার নির্দেশ দেওয়া হবে। তার ৫ মিনিটের মধ্যে ওই ‘অযোগ্য’ প্রার্থীদের নিয়োগপত্র প্রত্যাহার করবে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ।

হাই কোর্টের নির্দেশে নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে নামে সিবিআই। সিবিআই আদালতে জানিয়েছিল, স্কুলে নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই তদন্তের পর বেআইনি ভাবে গ্রুপ ডির পদে নিযুক্তদের নামের তালিকা আদালতে জমা দেয়। সেই তালিকার ভিত্তিতে হাইকোর্ট শিক্ষা দফতরকে পদক্ষেপ করতে নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশ পেয়ে ১,৬৯৮ জন গ্রুপ ডি কর্মীর তালিকা প্রকাশ করে শিক্ষা দফতর। যাঁদের নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল, তাঁদের নাম প্রকাশ করা হয়।

বিভিন্ন স্কুলে গ্রুপ ডি পদে নিয়োগ হওয়া ১,৬৯৮ জনকে নোটিস ধরানোর প্রক্রিয়া শুরু করে শিক্ষা দফতর। বেআইনি ভাবে নিয়োগ হওয়া স্কুলগুলিতে চিঠি পাঠান জেলা স্কুল ইনস্পেক্টররা। চিঠি পাঠানো হয় সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষকদেরও। সেই চিঠিতে দুর্নীতিতে অভিযুক্ত গ্রুপ ডি কর্মীদের অবস্থান জানতে বলা হয়। তাঁরা আদৌ কাজে যোগ দিয়েছিলেন কি না, বা যদি তাঁরা চাকরিতে যোগ দিয়ে থাকেন, তা হলে বর্তমানে তাঁরা কোন পদে, কত দিন ধরে চাকরি করছেন এমন সব তথ্য স্পষ্ট করে জানাতে বলা হয়। গত বুধবার গ্ৰুপ ডি নিয়োগ মামলার শুনানিতে ওএমআর শিট কারচুপিতে নাম থাকা ১,৬৯৮ জন চাকরি প্রাপককে কড়া বার্তা দেন বিচারপতি বসু। যাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি করে চাকরি পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে, তাঁরা নিজেদের নির্দোষ প্রমাণিত করতে না পারলে জেল হবে বলেও জানিয়ে দেন বিচারপতি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE