Advertisement
E-Paper

বিচারব্যবস্থা রক্তপিপাসু হলে চলে না! আরজি কর-কাণ্ডের আবহে খুনের ঘটনায় ফাঁসির দণ্ড খারিজ করল হাই কোর্ট

উচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণ, ‘‘বিচারব্যবস্থা রক্তপিপাসু হলে চলে না!’’ এ-ও বলল, সাজা প্রতিশোধের কথা ভেবে নয়, সংস্কারের কথা ভেবে দিতে হবে। অপরাধীকে নয়, অপরাধকে ঘৃণা করার পরামর্শ দিল হাই কোর্ট।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০২৫ ১৫:৪৯
Calcutta High Court Commutes Death Sentence of Youth to Life, Says Justice Must Reform, Not Seek Revenge

—প্রতীকী চিত্র।

আরজি কর-কাণ্ডকে কেন্দ্র করে তখন গোটা রাজ্য আলোড়িত। সঞ্জয় রায়ের ফাঁসির দাবি তুলেছে বিভিন্ন মহল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সঞ্জয়ের ফাঁসির দাবিতে সরব হয়েছিলেন। সেই আবহে জলপাইগুড়িতে একটি পারিবারিক খুনের ঘটনায় ফাঁসির সাজা দিয়েছিল নিম্ন আদালত। বুধবার তা খারিজ করে দিল কলকাতা হাই কোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চ। উচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণ, ‘‘বিচারব্যবস্থা রক্তপিপাসু হলে চলে না!’’

এ-ও বলল, সাজা প্রতিশোধের কথা ভেবে নয়, সংস্কারের কথা ভেবে দিতে হবে। অপরাধীকে নয়, অপরাধকে ঘৃণা করার পরামর্শ দিল হাই কোর্ট। ঘটনাচক্রে, আরজি কর হাসপাতালের মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় শিয়ালদহ আদালতে (নিম্ন আদালতে) সঞ্জয় দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর ফাঁসির সাজা হয়নি। আজীবন কারাবাসের সাজা শুনিয়েছিলেন বিচারক অনির্বাণ দাস।

জলপাইগুড়িতে খুনের ঘটনাটি ঘটে ২০২৩ সালের ২৮ জুলাই। মামার বাড়িতে ডাকাতির উদ্দেশ্যে গিয়ে মামাকে খুন এবং মামিকে খুনের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছিল ভাগ্নের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনায় অভিযুক্ত যুবক আফতাব আলমকে দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসির সাজা শুনিয়েছিল জলপাইগুড়ি জেলা আদালত। বাবার মৃত্যুর পর যে মামার কাছে থেকে আফতাব বড় হয়েছেন, সেই মামার সঙ্গে কী ভাবে বিশ্বাসঘাতকতা করলেন, সেই প্রশ্ন তুলে ওই ঘটনাকে ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ আখ্যা দিয়েছিলেন বিচারক।

নিম্ন আদালতের সেই পর্যবেক্ষণ খারিজ করে দিয়েছে হাই কোর্টের সার্কিট বেঞ্চ। বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য এবং বিচারপতি উদয় কুমারের বেঞ্চের বক্তব্য, তথ্যপ্রমাণের দিকে না তাকিয়ে বেশি আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছিল নিম্ন আদালত। বিশ্বাসঘাতকতা ফাঁসির সাজার জন্য যথেষ্ট নয়। আর যে বিশ্বাসঘাতকতার কথা বলা হচ্ছে, তা-ও কতটা যথোপযুক্ত, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে উচ্চ আদালত। তাদের বক্তব্য, আবতাব দীর্ঘ দিন ধরেই তাঁর মামার সঙ্গে থাকছিলেন না। দিল্লি চলে গিয়েছিলেন তিনি। ফলে বিশ্বাসভঙ্গের যুক্তি এ ক্ষেত্রে উপযুক্ত নয় বলেই মনে করেছেন বিচারপতিরা।

ডিভিশন বেঞ্চের বক্তব্য, আধুনিক চেতনায় কারাগার পরিবর্তিত হয়েছে সংশোধনাগারে। কারণ, সেখানে অপরাধী শুধুমাত্র শাস্তি ভোগই করেন না, হরেক কাজের মধ্য দিয়ে তাঁর আচরণ পরিবর্তনেরও প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়। উচ্চ আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, ‘‘সমাজের একটি রক্তপিপাসু অংশের মধ্যে প্রতিশোধ নেওয়ার মৌলিক প্রবৃত্তি রয়েছে। আমরা সেই স্তর থেকে উন্নত পর্যায়ে পৌঁছোনোর চেষ্টা করছি। অপরাধী নয়, অপরাধকে ঘৃণা করুন।’’

প্রসঙ্গত, আরজি কর মামলায় ফাঁসির সাজা না-হওয়ায় অখুশি ছিলেন নির্যাতিতার পরিবার। চিকিৎসক থেকে রাজনৈতিক মহল, বেশির ভাগ অংশের সাধারণ প্রতিক্রিয়া, তাঁরা আশা করেছিলেন অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড। কিন্তু আরজি কর-কাণ্ডকে ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ ঘটনা মনে করেনি আদালত।

জলপাইগুড়ির ঘটনায় শুধু মামা মেহতাবই নন, মামি মৌমিতার উপরেও চড়াও হয়েছিলেন আবতাব। কিন্তু চিৎকার-চেঁচামেচিতে পাড়ার লোকেরা চলে আসায় কোনও ক্রমে প্রাণে বেঁচে যান মামি। আফতাবের সঙ্গে ডাকাতি করতে গিয়েছিল আরও পাঁচ জন। ঘটনার সময় তারা সকলেই নাবালক ছিল। উচ্চ আদালতের বক্তব্য, মামাকে খুনের ঘটনা মোটেই পূর্বপরিকল্পিত নয়। বরং তাৎক্ষণিকতায় ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা। আর এমনও নয় যে, দোষী পাকা হাতের খুনি। তাঁর পূর্ব অপরাধের কোনও রেকর্ডও নেই।

হাই কোর্ট জানিয়েছে, দোষীকে অনুতপ্ত দেখায়নি মানেই তাঁর সংশোধনের সম্ভাবনা নেই, এ কথাও সত্য নয় বলেই মনে করেছে হাই কোর্ট। এ বিষয়টি নজরে রেখেই দোষীর ফাঁসির দণ্ড খারিজ করে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছে উচ্চ আদালত। নির্দেশ, আগামী ২০ বছর পর্যন্ত দোষী প্যারোলে মুক্তিও পাবেন না।

Calcutta High Court death sentence RG Kar Case Verdict Death Penalty
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy