ওবিসি সংক্রান্ত জটিলতায় প্রকাশের আগেই বাতিল হয়ে গেল রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের মেধাতালিকা। তা বাতিল করে ফের নতুন করে মেধাতালিকা তৈরির নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। বৃহস্পতিবার আদালতে বিচারপতি কৌশিক চন্দের নির্দেশ, ২০১০ সালের আগের ৬৬টি ওবিসি সম্প্রদায়ের তালিকার ভিত্তিতেই নতুন মেধাতালিকা তৈরি করতে হবে। ১৫ দিনের মধ্যে আদালতের এই নির্দেশ কার্যকর করতে হবে বোর্ডকে।
আদালতের নির্দেশ, অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি)-র পড়ুয়াদের জন্য পূর্বের মতো ৭ শতাংশ সংরক্ষণই বরাদ্দ থাকবে। তা ছাড়া, নতুন ওবিসি তালিকা মেনে মেধাতালিকা প্রকাশ করা যাবে না। তালিকা প্রকাশ করলে তা করতে হবে পুরনো বিধি মেনে। অর্থাৎ, ২০১০ সালের আগের ৬৬টি ওবিসি সম্প্রদায়ের তালিকার ভিত্তিতেই নতুন মেধাতালিকা তৈরি করতে হবে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আদালতের এই নির্দেশ কার্যকর করে পরবর্তী তিন সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা দিতে হবে। হলফনামা দেবেন সিনিয়র স্পেশ্যাল সেক্রেটারি পদমর্যাদার কোনও আধিকারিক। শুধু তা-ই নয়, আদালতের এই রায় রাজ্যের মুখ্যসচিবকেও অবগত করতে হবে।
আরও পড়ুন:
৭ অগস্ট, বৃহস্পতিবার রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্সের ফল ঘোষণা হবে বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু ওবিসি সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ফের সেই ফলপ্রকাশ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। কারণ, গত বছর এপ্রিল মাসে ২০১০ সালের পরের সমস্ত ওবিসি শংসাপত্র বাতিল করে দিয়েছিল হাই কোর্ট। ২০১০-এর আগে পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে মোট ৬৬টি জনগোষ্ঠীকে ওবিসি বলে ধরা হত। ২০১০ সালে তৎকালীন বাম সরকারের আমলে ৪২টি এবং ২০১২ সালে তৃণমূল সরকারের আমলে আরও ৩৫টি জনগোষ্ঠীকে ওবিসি বলে চিহ্নিত করা হয়। তাদেরকেই বাতিল করে দেয় উচ্চ আদালত। হাই কোর্ট আরও জানায়, ২০১০ সালের আগে পর্যন্ত যে ৬৬টি জনগোষ্ঠী অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির অংশ ছিল কেবলমাত্র তাদেরই শংসাপত্র গ্রাহ্য হবে চাকরির নিয়োগ কিংবা কলেজে ভর্তিতে। তাই জয়েন্ট এন্টান্স বোর্ডের মামলায় এর আগে বিচারপতি চন্দ জানিয়েছিলেন, ২০১০ সালের আগের ওবিসি তালিকা মেনেই ফলপ্রকাশ করা যাবে। এর মাঝে গত ২৮ জুলাই ওবিসি শংসাপত্র সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তির মামলায় হাই কোর্টের নির্দেশ নিয়ে প্রশ্ন তোলে সুপ্রিম কোর্ট। হাই কোর্টের নির্দেশের উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। তাতেই বিচারপতি চন্দের বক্তব্য, হাই কোর্টের ২০২৪ সালের ওবিসি রায় লঙ্ঘন করা হয়েছে। যে সময় হাই কোর্টের নির্দেশের উপর সুপ্রিম কোর্ট অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেয়নি, তখন কেন হাই কোর্টের নির্দেশ কার্যকর করা হয়নি? অর্থাৎ আদালতের নির্দেশ অমান্য করা হয়েছে।
দ্বিতীয়ত, হাই কোর্টের আরও পর্যবেক্ষণ, সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশের পর মাত্র কয়েক দিনে কী ভাবে সকলকে ওবিসি শংসাপত্র প্রদান করা সম্ভব হল? আবেদন, যাচাই— সব প্রক্রিয়া কী ভাবে এত কম সময়ের মধ্যে সম্ভব হল? অর্থাৎ, মেধাতালিকা সঠিক পদ্ধতিতে তৈরি হয়নি। সে কারণেই এই মেধাতালিকা প্রকাশ করা যাবে না বলে জানিয়েছে হাই কোর্ট।