Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Recruitment Scam

‘সারদা কিংবা নারদ না হয়ে যায়’, নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্ত নিয়ে মন্তব্য হাই কোর্টের

স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতিতে যেমন কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির যোগসাজশের কথা উঠে আসছে, সেই ধরনের প্রভাবশালী-যোগের অভিযোগ ছিল সারদা কেলেঙ্কারিতেও।

বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু।

বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২২ ০৬:৪৬
Share: Save:

এক বিচারপতি বললেন, ‘‘আমি চাই না, এটি সারদা-নারদ হয়ে যাক।’’ অন্য বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘এটা বিশাল দুর্নীতি। সারদা-নারদ না-হয়ে যায়!’’

শুক্রবার কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এবং বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু ‘এটি’ এবং ‘এটা’ বলতে যে-দুর্নীতি কাণ্ডের তদন্ত সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, সেটি হল স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতি। ওই মামলার তদন্তের শ্লথ গতি নিয়ে আগেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছে কোর্ট। সেই দুর্নীতির তদন্তে গঠিত সিবিআইয়ের ‘সিট’ বা বিশেষ তদন্তদলে রদবদলও করা হয়েছে। তার পরেও যে দুর্নীতি-রহস্যের সুরাহা নিয়ে বিচারপতিরা সন্দিহান, তার মূলে আছে রাজ্যের সাম্প্রতিক কালের দুই বড় কেলেঙ্কারি— সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক নয়ছয় আর নারদ কাণ্ডে কিছু নেতা-মন্ত্রীর বিরুদ্ধে উৎকোচ নেওয়ার অভিযোগ। সারদা কেলেঙ্কারির এক দশক পূর্ণ হতে চলেছে। অর্ধ দশক পেরিয়ে গিয়েছে নারদ মামলারও। কিন্তু ওই দুই কেলেঙ্কারির তদন্ত এই মুহূর্তে ঠিক কোন পর্যায়ে রয়েছে, তার জবাব কারও কাছে আছে কি না— সেই বিষয়ে আদালত থেকে আমজনতা, সকলেই সংশয়ে।

অনেকেরই সন্দেহ, সারদা-নারদ মামলার তদন্ত অতলে তলিয়ে গিয়েছে। এই সন্দেহ যে অমূলক নয়, সেটাই এ দিন ধরা পড়েছে

হাই কোর্টের দুই বিচারপতির পর্যবেক্ষণে। একই দিনে তদন্তের ‘দিশাহীনতা’ এবং ‘দুর্নীতির ব্যাপকতা’ বোঝাতে গিয়ে সারদা এবং নারদ কাণ্ডের উদাহরণ টেনে এনেছেন দুই বিচারপতি। স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতিতে সিবিআইয়ের সিটে রদবদল করেছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। কারণ, তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে সন্তুষ্ট নয় হাই কোর্ট। এ দিন সিটের শীর্ষ কর্তা নিয়োগের সময়েই তদন্তে বিলম্বের প্রসঙ্গ তোলেন মামলাকারীদের আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত। তখনই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় মন্তব্য করেন, ‘‘আমি চাই না, এটি সারদা-নারদ হয়ে যাক।’’ এর আগে তিনি মন্তব্য করেছিলেন, স্কুলে স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতির মূল চক্রীর গ্রেফতারি তাঁর জীবদ্দশায় দেখে যেতে পারবেন কি না, সেই বিষয়ে তিনি সন্দিহান।

‘গ্রুপ ডি’ বা চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে এ দিন অন্য একটি মামলা ছিল বিচারপতি বসুর এজলাসে। সেখানেও মামলাকারীদের হয়ে উপস্থিত ছিলেন সুদীপ্ত। তিনি জানান, চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগের দুর্নীতি নিয়ে সিবিআইয়ের রিপোর্ট দেখে বিচারপতি বসু বলেন, ‘‘...এটা সারদা-নারদ না-হয়ে যায়!’’

আইনজীবীদের একাংশের ব্যাখ্যা, সারদা ও নারদ কাণ্ডের মতো বড় মাপের দুর্নীতির তদন্ত কোনও এক অন্ধকার সুড়ঙ্গে কার্যত হারিয়েই গিয়েছে। তাই এই মন্তব্যের দু’ধরনের ব্যাখ্যাই হতে পারে। সাধারণের মনেও সারদা-সহ বিভিন্ন বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থা এবং নারদ কাণ্ডের তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বিশেষ করে সারদা-রোজ় ভ্যালি কাণ্ডে বহু সাধারণ মানুষের অর্থ জড়িত। এখনও সেই টাকা ফিরে পাওয়ার আশায় আছেন তাঁরা।

স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতিতে যেমন কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির যোগসাজশের কথা উঠে আসছে, সেই ধরনের প্রভাবশালী-যোগের অভিযোগ ছিল সারদা কেলেঙ্কারিতেও। প্রভাবশালী-যোগ এবং বৃহত্তর ষড়যন্ত্র খুঁজতেই ২০১৪ সালে সারদা-সহ বিভিন্ন লগ্নি সংস্থার কেলেঙ্কারির তদন্তভার সিবিআই-কে দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। সেই মামলায় কিছু মন্ত্রী-সাংসদ গ্রেফতার হলেও তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। অনেকেই জামিন পেয়েছেন।

নারদ মামলাতেও রাজ্যের শাসক দলের কিছু মন্ত্রী, বিধায়ক, সাংসদদের নাম জড়িয়েছিল সরাসরি। অনেকেই বলছেন, নারদ মামলায় রাজ্যের চার নেতা-মন্ত্রীকে ‘নাম-কা-ওয়াস্তে’ গ্রেফতার করলেও তাঁরা সহজেই জামিন পেয়ে গিয়েছেন। তবে অনেকে বলছেন, নারদে অভিযুক্ত হিসাবে এমন অনেকের নাম উঠেছে, যাঁরা সেই সময় তৃণমূলে থাকলেও পরবর্তী কালে বিজেপি-তে নাম লিখিয়েছেন। তাঁদের ক্ষেত্রে সিবিআই বা ইডি-র ন্যূনতম তৎপরতাও দেখা যায়নি। তাই প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি তদন্তে অপরাধীদের পাকড়াও করার থেকে রাজনৈতিক প্রভাবই বড় হয়ে উঠছে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE