অন্য অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি) শংসাপত্র বাতিল মামলায় মঙ্গলবারই অন্তর্বর্তী রায় জানাতে পারে কলকাতা হাই কোর্ট। ওই মামলায় রাজ্যের তরফে করা সমীক্ষা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন মামলাকারীরা। তাঁদের বক্তব্য, হাই কোর্টের রায় মেনে সমীক্ষা করা হয়নি। যদিও রাজ্যের বক্তব্য, আদালতের নির্দেশ মেনেই বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে।
মামলাকারী পক্ষের বক্তব্য, আদালতের নির্দেশ ছিল সামাজিক, আর্থিক এবং পেশাগত ভাবে ভিন্ন রাজ্যের সব জনগোষ্ঠীর মধ্যে সমীক্ষা করতে হবে। কিন্তু রাজ্য জেলাভিত্তিক কয়েকটি পরিবারের মধ্যে সমীক্ষা সীমাবদ্ধ রেখেছে বলে দাবি মামলাকারীদের। তাঁরা আরও জানান, আগের ওবিসি তালিকার সঙ্গে বর্তমান তালিকার সামান্য কিছু পার্থক্য রয়েছে। অন্য দিকে ওই মামলার জন্য কোন কোন ক্ষেত্রে কাজের সমস্যা হচ্ছে, তা আদালতে তুলে ধরা হয় রাজ্যের তরফে। সোমবার হাই কোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাসে রাজ্য তাদের বক্তব্য জানায়। রাজ্যের তরফে বলা হয়, ওবিসি মামলার জন্য কলেজে ভর্তি থেকে শুরু করে নিয়োগ প্রক্রিয়া— সব আটকে রয়েছে।
মূল মামলাকারীদের দাবি, কত জনসংখ্যা রয়েছে, রাজ্যের কাছে সেই বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনও তথ্য নেই। তথ্য ছাড়াই বিভিন্ন জনগোষ্ঠীকে ওবিসি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর জন্য সঠিক পদ্ধতিতে সমীক্ষার প্রয়োজন ছিল। বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে প্রকৃতপক্ষে কোন জনগোষ্ঠী ওবিসি, তার সমীক্ষা করা হয়নি। তাঁদের দাবি, আদালতের নির্দেশ মোতাবেক নতুন জনগোষ্ঠীকে ওবিসির আওতায় আনতে গেলে বিধানসভায় বিল পেশ করতে হয়। কিন্তু রাজ্য কোনও বিল আনেনি। রাজ্যের ওই বিজ্ঞপ্তি খারিজ করার জন্য আদালতে আবেদন জানান মামলাকারীরা।
অন্য দিকে, কেন্দ্রের তরফে আদালতে জানানো হয়, রাজ্যের দেওয়া তালিকা থেকে ৩৫টি সম্প্রদায়কে বাদ দিয়েছে জাতীয় অনগ্রসর কমিশন। তাদের বক্তব্য, জনগণনা ছাড়া নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়, কোন জনগোষ্ঠী ওবিসি। পরের বছর থেকে জনগণনার কাজ শুরু হবে বলেও আদালতে জানায় কেন্দ্র।
আরও পড়ুন:
যদিও রাজ্যের বক্তব্য, রাজ্য জুড়ে বেঞ্চমার্ক সমীক্ষা করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশ মেনেই বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। রাজ্য যখন কলেজে ভর্তি এবং বিভিন্ন জায়গায় নিয়োগ প্রক্রিয়া আটকে থাকার কথা এজলাসে তুলে ধরে, তখন দুই বিচারপতির বেঞ্চ জানায়, সমস্যাগুলি আদালত জানে। দীর্ঘ দিন ধরে নিম্ন আদালতগুলিতে বিচারক নিয়োগ হয়নি। এখন সেটির কাজ থমকে গিয়েছে। বিচারকেরা অবসর নিচ্ছেন, কিন্তু নতুন নিয়োগ হচ্ছে না। ডিভিশন বেঞ্চ মৌখিক ভাবে জানিয়েছে, মঙ্গলবার ওবিসি মামলায় অন্তর্বর্তী নির্দেশ দেওয়া হবে।
বস্তুত, ২০১০ সালের পরে তৈরি রাজ্যের সব ওবিসি শংসাপত্র বাতিল করে দেয় হাই কোর্ট। গত বছর ২২ মে ওই রায় দিয়েছিল আদালত। হাই কোর্টের রায় ছিল, ২০১০ সালের আগে ৬৬টি সম্প্রদায়ের ওবিসি সার্টিফিকেট বৈধ। তার পর থেকে সব ওবিসি শংসাপত্র বাতিল করা হল। উচ্চ আদালতের ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায়। শীর্ষ আদালত হাই কোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ দেয়নি। মামলাটি এখন সেখানে বিচারাধীন রয়েছে।