Advertisement
১৭ মে ২০২৪

প্রেম কিংবা প্রত্যাখ্যান ব্যক্তিগত, বলল কোর্ট

কাউকে ভালবাসা সন্দেহাতীত ভাবেই ব্যক্তির স্বাধীনতা। আবার কারও ভালবাসা প্রত্যাখ্যান করাটাও ব্যক্তিস্বাধীনতার প্রশ্ন বলে জানিয়ে দিল কলকাতা হাইকোর্ট।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৭ ০৩:৫২
Share: Save:

কাউকে ভালবাসা সন্দেহাতীত ভাবেই ব্যক্তির স্বাধীনতা। আবার কারও ভালবাসা প্রত্যাখ্যান করাটাও ব্যক্তিস্বাধীনতার প্রশ্ন বলে জানিয়ে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। তাদের পর্যবেক্ষণ, এক ব্যক্তি ভালবাসা প্রত্যাখ্যান করলে কেউ যদি আত্মহত্যার পথ বেছে নেন, তাতে প্রত্যাখ্যানকারীর বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ টেকে না।

আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ সংক্রান্ত একটি মামলায় এমনই এক অভিযুক্তকে মঙ্গলবার আগাম জামিন দিয়েছে হাইকোর্ট। পুলিশ জানায়, উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরের বাসিন্দা, বিএ পার্ট ওয়ানের এক ছাত্রীর সঙ্গে তাঁর এক সহপাঠী ছাত্রের প্রণয়-সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। ছাত্রটির বাড়ি কাকদ্বীপে। তিনি রানাঘাটে ঘর ভাড়া করে থাকতেন। কোনও কারণে তাঁর সঙ্গে সহপাঠিনীর প্রণয় ভেঙে যায়। তার পরে অন্য এক যুবকের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে ওই ছাত্রীর।

প্রেম ভেঙে যাওয়ার পরে ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় রানাঘাটে ঘর ভাড়া করে থাকা ছাত্রটির গলায় ফাঁস দেওয়া মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। মেলে সুইসাই়ড নোটও। পুলিশ জানায়, সেই নোটে লেখা ছিল, তাঁর প্রেমিকা অন্য যুবকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়েছেন বলে খবর পেয়েছেন তিনি। এটা তিনি সহ্য করতে পারছেন না। সেই জন্যই আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন।

পুলিশি সূত্রের খবর, ছেলের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পরে তাঁর মা রানাঘাট থানায় সেই কলেজছাত্রীর বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ দায়ের করেন। মৃতের মা আরও জানান, ওই দুই তরুণ-তরুণীর প্রেম ভেঙে যাওয়ায় দুই পরিবারের মধ্যেও মনোমালিন্য হয়। তাঁর ছেলের আত্মহননের জন্য সেই মনোমালিন্যও দায়ী। তাঁর বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ দায়ের হওয়ায় কিছু দিন আগে হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন জানান সেই কলেজছাত্রী। এ দিন তার শুনানি ছিল বিচারপতি নাদিরা পাথেরিয়া ও বিচারপতি মীর দারা শিকোর ডিভিশন বেঞ্চে। ছাত্রীর আইনজীবী কল্লোল মণ্ডল আদালতে জানান, তাঁর মক্কেল কাকে ভালবাসবেন, কাকেই বা ভালবাসবেন না, সেটা তাঁর একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। দেশের সংবিধান নাগরিকদের ব্যক্তিস্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। প্রণয় ভেঙে যাওয়ার পরে ওই ছাত্রটি তাঁর মক্কেলকে উত্ত্যক্ত করতেন। ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যুর আগে এই নিয়ে অশোকনগর থানায় জেনারেল ডায়েরিও করেন ওই ছাত্রী। তা ছাড়া আত্মহত্যা করার জন্য তাঁর মক্কেল ওই ছাত্রকে প্ররোচনা দিয়েছিলেন, এমন তথ্যপ্রমাণ পুলিশ জোগাড় করতে পারেনি। কাজেই প্ররোচনার অভিযোগ ঠিক নয়।

সরকারি কৌঁসুলি শৈবাল বাপুলি এ দিন আদালতে একটি নথি পেশ করে দাবি করেন, সেটি ওই ছাত্রের হাতের লেখা সুইসাইড নোট। তাতে লেখা রয়েছে, তাঁকে ছেড়ে অন্য এক যুবকের সঙ্গে ওই ছাত্রীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার খবর সহ্য করতে না-পেরেই তিনি আত্মহত্যা করছেন। সেই নথি যাচাইয়ের পরে আদালতের পর্যবেক্ষণের কথা জানান বিচারপতি পাথেরিয়া। ছাত্রীর আগাম জামিনের আবেদনও মঞ্জুর করেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

High Court Love
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE