ঘটনা কখনও মিথ্যা হতে পারে না। কী ভাবে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হল? বীরভূমের আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা সোনালি বিবি এবং তাঁর পরিবারকে বাংলাদেশে পুশব্যাক করা সংক্রান্ত অভিযোগের মামলায় মঙ্গলবার এই প্রশ্ন তুলল কলকাতা হাই কোর্ট। কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশে হাই কোর্টের প্রশ্ন, ‘‘সোনালিকে ২৪ জুন আটক করা হয়েছে। তার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কী পদ্ধতি মেনে চলা হয়েছে?’’
বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রতকুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চ এই মামলার পর্যবেক্ষণে বলেছে, ‘‘২৬ জুন বাংলাদেশে পাঠানোর মাত্র দু’দিন আগে আটক করা হয়। মাত্র দু’দিনে কী ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হল যে তাঁরা বাংলাদেশি? আইন মোতাবেক অন্তত ৩০ দিন আটক রেখে তদন্তের প্রয়োজন ছিল। এ ক্ষেত্রে সে সব মানা হল না কেন? এত তাড়াহুড়ো কেন করা হল?’’ আগামী বৃহস্পতিবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি। ওই দিন কেন্দ্রের কাছে জবাব চেয়েছে আদালত।
মঙ্গলবার শুনানিপর্বে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে মামলার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। কেন্দ্রের আইনজীবীদের বক্তব্য, এই ঘটনাটি দিল্লিতে ঘটেছে। দিল্লির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে মামলায় যুক্ত করা হয়েছে। এই অবস্থায় কলকাতা হাই কোর্ট এই মামলা কী ভাবে শুনতে পারে। কেন্দ্রের তরফে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল অশোক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এই মামলার আদৌও কি কোনও গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। দিল্লিতে মামলা দায়ের হয়েছে। নাগরিকত্ব নিয়ে যাবতীয় মামলার তথ্য লুকিয়ে যাওয়া হয়েছে। মামলাকারীদের জরিমানা করা উচিত। কোনও বাঙালি বিদ্বেষের বিষয় নেই এখানে।’’
পাল্টা বিচারপতি চক্রবর্তীর প্রশ্ন, ‘‘আপনি কি মনে করেন তাঁরা যদি কলকাতায় আটক হতেন তখন মামলা এই আদালত শুনত?’’ দিল্লি পুলিশের আইনজীবী ধীরাজ ত্রিবেদীর বক্তব্য, এখনও পর্যন্ত কোনও হলফনামা দেননি তাঁরা। জানাননি যে বাংলাদেশি নাগরিক নন। এ প্রসঙ্গে বিচারপতি চক্রবর্তীর মন্তব্য, আটকের নির্দেশে লেখা হয়েছে ওই এলাকার বাঙালি বস্তি থেকে আনা হয়েছে। এর কারণেই কেন বাংলাদেশি হিসাবে চিহ্নিত করলেন তা জানানো প্রয়োজন। এর পরে মামলাকারী পক্ষের আইনজীবীর উদ্দেশে দুই বিচারপতির বেঞ্চ বলে, ‘‘আপনারা দেশ থেকে বার করে দেওয়ার নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করেননি। চ্যালেঞ্জ না করলে কিসের ভিত্তিতে আদালত নির্দেশ দেবে? কলকাতা এবং দিল্লি দু’জায়গায় মামলা চলছে। কোথায় মামলা চলবে সিদ্ধান্ত নিন। না হলে মামলার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আদালতকে সন্তুষ্ট করুন।’’
প্রসঙ্গত, গত ২৯ অগস্ট সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, সোনালি এবং তাঁর পরিবারকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তার ভিত্তিতে করা হেবিয়াস কর্পাস মামলা শুনবে হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চ দ্রুত শুনানির সুপারিশও করেছিলেন হাই কোর্টকে। বীরভূমের পাইকরের বাসিন্দা সোনালি, স্বামী দানিশ শেখ এবং তাঁদের এক পুত্রসন্তান দিল্লির রোহিণী এলাকার ২৬ সেক্টরে থাকতেন। দিল্লিতে প্রায় দুই দশক ধরে সোনালি ও তাঁর পরিবার কাগজকুড়ুনি এবং গৃহ-পরিচারিকার কাজ করে আসছিলেন। পরিবারের অভিযোগ, গত জুন মাসে তাঁদের বস্তির ঘর আটক করেছিল দিল্লির কেএন কাটজু মার্গ থানার পুলিশ।
অভিযোগ, সোনালির গোটা পরিবারকেই বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে সোনালির পরিবারকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা থেকে বাংলাদেশের পুলিশ গ্রেফতারও করে বলে অভিযোগ। সোনালিরা আটক হওয়ার পর প্রথমে দিল্লি আদালতে মামলা হয়েছিল। পরে সেটি তুলে নেওয়া হয়। পরবর্তী কালে পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের সাহায্যে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা দায়ের করেন পরিবারের সদস্যেরা। সুপ্রিম কোর্টেও রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিক সংক্রান্ত মামলা বিচারাধীন থাকায় হাই কোর্ট ওই মামলা শুনতে চায়নি। এর পরে ২৯ অগস্ট সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশে কলকাতা হাই কোর্টকে মামলা শুনতে বলেছিল।