Advertisement
E-Paper

ইডির বিরুদ্ধে এফআইআরের আগে পুলিশ ন্যূনতম অনুসন্ধান করেছিল? তদন্তে স্থগিতাদেশ হাই কোর্টের

সন্দেশখালির ঘটনায় একই দিনে তিনটি এফআইআর দায়ের হয়। তার মধ্যে দু’টি এফআইআরের বয়ানে মিল নেই। বিচারপতির প্রশ্ন, এফআইআর গ্রহণ করার আগে পুলিশ কি ন্যূনতম অনুসন্ধান করেছিল?

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২৪ ১৪:৪৬
Calcutta High Court stays FIR against ED officers in Sandeshkhali Case

কলকাতা হাই কোর্ট। —ফাইল চিত্র।

সন্দেশখালির ঘটনায় ইডির বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল। সেই তদন্তে স্থগিতাদেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার নির্দেশ, আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত ইডির বিরুদ্ধে করা এফআইআর নিয়ে কোনও তদন্ত করতে পারবে না পুলিশ।

রেশন ‘দুর্নীতি’কাণ্ডে তল্লাশি চালাতে সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখের বাড়িতে গিয়েছিল ইডি। কিন্তু শাহজাহানকে পাওয়া যায়নি। উল্টে ওই বাড়ির সামনে বিক্ষোভের মুখে পড়েন কেন্দ্রীয় আধিকারিকেরা। তাদের বিক্ষুব্ধ জনতার মারও খেতে হয়। তিন জন ইডি আধিকারিককে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল ওই ঘটনার পর। সন্দেশখালির ঘটনায় ইডির বিরুদ্ধেই এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার সেই এফআইআর-এর ভিত্তিতে তদন্তে স্থগিতাদেশ দিয়েছে আদালত। রাজ্যের কাছে এই ঘটনার কেস ডায়েরিও তলব করা হয়েছে। ইডির বিরুদ্ধে করা এফআইআর নিয়ে হলফনামা দিতে হবে রাজ্যকে।

মামলার শুনানিতে বৃহস্পতিবার ইডির আইনজীবী এসভি রাজু এবং ধীরাজ ত্রিবেদী জানান, রেশন নিয়ে বড় দুর্নীতি হয়েছে। তার অনুসন্ধানেই ইডি সন্দেশখালিতে তল্লাশি অভিযানে গিয়েছিল। সেখানে আধিকারিকদের আক্রমণ করা হয়েছে। উল্টে সেই আধিকারিকদের বিরুদ্ধেই এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।

বিচারপতি মান্থা জানতে চান, ইডি আধিকারিকেরা কি শাহজাহানের বাড়িতে প্রবেশ করেছিলেন? ইডি জানায়, অনেক চেষ্টা করেও বাড়িতে তারা ঢুকতে পারেনি। অনেক বার শাহজাহানকে ফোন করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁর মোবাইল ব্যস্ত ছিল। ইডির অনুমান, ওই সময়েই তিনি তাঁর অনুগামীদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করছিলেন। তাঁর ফোন ঘেঁটে জানা গিয়েছে, অন্তত ২৮ বার ফোন করা হয়েছে ওই সময়ের মধ্যে। অথচ, ফোনের টাওয়ার লোকেশন অনুযায়ী, শাহজাহান সেই সময়ে বাড়িতেই ছিলেন। ইডির দাবি, প্রায় তিন হাজার লোক বাড়ির সামনে জড়ো করেছিলেন তৃণমূল নেতা। সবটাই ছিল পূর্ব পরিকল্পিত।

এ প্রসঙ্গে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) কিশোর দত্ত এবং আইনজীবী দেবাশিস রায় জানান, সুপ্রিম কোর্টের ললিতা কুমারী রায় মোতাবেক অভিযোগ পেয়ে পুলিশ এফআইআর গ্রহণ করেছে।

সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে একই দিনে তিনটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল স্থানীয় থানায়। তার মধ্যে দু’টি এফআইআরের বয়ানে মিল নেই। বিচারপতির প্রশ্ন, এফআইআর গ্রহণ করার আগে পুলিশ কি ন্যূনতম অনুসন্ধান করেছিল? তাঁর পর্যবেক্ষণ, ‘‘ধরুন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর উপর আক্রমণ হয়েছে। ন্যূনতম অনুসন্ধান না করেই কি সঙ্গে সঙ্গে এফআইআর লিখতে বসে যাবেন? আপনার রায় কি সে কথা বলছে? পুলিশের দুটো অভিযোগ নেওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হচ্ছে। একটি ঘটনার সঙ্গে অন্যটি মেলানো যাচ্ছে না।’’

উল্লেখ্য, সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে প্রথম দায়ের হওয়া এফআইআরে বলা হয়েছিল, ইডি শাহজাহানের বাড়ির সামনে যাওয়ায় গোলমাল হচ্ছে। মহিলা এবং শিশুদের আক্রমণ করছেন ইডি আধিকারিকেরা। এমনকি টাকাও চুরি করে নিচ্ছেন। তবে সে দিন দুপুরের দ্বিতীয় এফআইআরে অন্য কথা বলা হয়েছে। বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘প্রথমে একটি বয়ানে পুলিশ এফআইআর নিল। ওসি স্বাক্ষর করে দিলেন। আবার দুপুরে আর এক জন গিয়ে থানায় উল্টো ঘটনা বললেন। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতেও এফআইআর করা হল। আর তাতেও ওসি স্বাক্ষর করে দিলেন!’’

বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, ‘‘পুলিশের এক বারও মনে হল না, একটু আগে এই একই ঘটনা নিয়ে এফআইআর গ্রহণ করা হয়েছে? আগে যিনি এসেছিলেন তিনি অন্য কথা বলেছেন! তখন দ্বিতীয় জনকে পুলিশ তো সে কথা বলবে! তা না করে চোখ বন্ধ করে ওসি স্বাক্ষর করে দিলেন! পুলিশের এটা কী ধরনের বোকামি?’’

বিচারপতি জানান, এ ক্ষেত্রে কোনও চালাকি হয়ে থাকতে পারে। তাই কোন এফআইআর আগে হয়েছে এবং কোনটি পরে হয়েছে, তা বোঝার জন্য তিনি এফআইআরের কপি সেন্ট্রাল ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে পাঠাতে পারেন বলে জানিয়েছেন। আগামী ২২ জানুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানি। তত দিন পর্যন্ত ইডির বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া এফআইআর নিয়ে পুলিশ কোনও তদন্ত করতে পারবে না।

Bengal Ration Case West Bengal Ration Distribution Case ED sandeshkhali ED Attacked in Sandeshkhali Shahjahan Sheikh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy