পড়শি ওডিশা, অসম এবং মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, তামিলনাড়ু-সহ ১৯টি রাজ্য পেরেছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ এখনও পারেনি।
বৈধ ডিগ্রিপ্রাপ্ত আয়ুর্বেদ চিকিৎসকেরা সাধারণ হাসপাতালে ও মেডিক্যাল কলেজে অস্ত্রোপচার করতে পারবেন কি না বা অ্যালোপ্যাথি ওষুধ লিখতে পারবেন কি না, তা নিয়ে এ-পর্যন্ত কোনও আইন তৈরি করতে পারেনি রাজ্য। ফলে তৈরি হয়েছে চূড়ান্ত বিভ্রান্তি।
সুপ্রিম কোর্ট ও দিল্লি হাইকোর্টের দু’টি পুরনো রায়ে বলা হয়েছিল, আয়ুর্বেদ চিকিৎসকেরা অ্যালোপ্যাথি ওষুধ দিতে পারবেন না বা সার্জারি করতে পারবেন না। তার পরে দেশের ১৯টি রাজ্য নিজেরা আইন করে সিদ্ধান্ত নেয়, আয়ুর্বেদ চিকিৎসকেরা প্রয়োজনে অ্যালোপ্যাথি ওষুধ লিখতে এবং অস্ত্রোপচার করতে পারবেন। ১৯টি রাজ্য নিজেদের এলাকায় ওই সিদ্ধান্ত রূপায়ণে প্রয়োজনীয় সিলমোহর দিলেও পশ্চিমবঙ্গ সরকার এখনও সেই অনুমোদন দেয়নি।
পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য দফতর ২০১৪ সালে আয়ুর্বেদ চিকিৎসকদের এক্তিয়ার নিয়ে একটি নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু সেটা যে আদ্যন্ত স্ববিরোধিতা ও অস্পষ্টতায় ভরা, স্বাস্থ্যকর্তারাই তা স্বীকার করেছেন। অথচ কোনও অজ্ঞাত কারণে সেই নিয়ম বদলে নতুন কোনও নিয়ম জারি করা হচ্ছে না। ফলে এক দিকে পশ্চিমবঙ্গের মেডিক্যাল কাউন্সিল সুপ্রিম কোর্ট ও দিল্লি হাইকোর্টের দু’টি রায়ের উল্লেখ করে সিআইডি-কে জানিয়ে দিচ্ছে: আয়ুর্বেদ চিকিৎসকেরা কোনও ভাবেই মডার্ন মেডিসিন বা অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা করতে পারেন না। অন্য দিকে কলকাতা-সহ রাজ্যের সব জেলাতেই সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিংহোমের রোগীর অস্ত্রোপচার করে চলেছেন আয়ুর্বেদ চিকিৎসকেরা। একাধিক সাধারণ সরকারি হাসপাতালে ইন্টার্নশিপও করছেন তাঁদের অনেকে। কী ভাবে?
স্বাস্থ্য দফতরের ডিজি (আয়ুষ) দেবাশিস বসু জানান, আয়ুর্বেদ চিকিৎসকেরা সাধারণ হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করতে পারবেন কি না বা কিছু কিছু অ্যালোপ্যাথি ওষুধ লিখতে পারবেন কি না, এ ব্যাপারে স্পষ্ট কোনও নির্দেশ নেই। ‘‘আমার কিছু করার নেই। সরকার নতুন নির্দেশিকা বার না-করলে আমরা কী করব,’’ পাল্টা প্রশ্ন দেবাশিসবাবুর।
রোগীরাও বিভ্রান্ত। কেউ মনে করছেন, বেসরকারি হাসপাতালে আয়ুর্বেদ চিকিৎসকদের অস্ত্রোপচার করার বিষয়টি সম্পূর্ণ বেআইনি। অনেকে আবার সটান থানায় অভিযোগ দায়ের করছেন। কলকাতার একাধিক বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করেন, এমন কয়েক জন আয়ুর্বেদ চিকিৎসকের কথায়, ‘‘আয়ুর্বেদে সার্জারি নিয়ে পাশ করলে এমএস ডিগ্রি পাওয়া যায়। কিন্তু এখন অনেক সাধারণ মানুষই মনে করছেন, আমরা ভুয়ো ডাক্তার।’’
সরকারি নির্দেশিকার অভাবে তদন্তে নেমে অনেক ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়ছে সিআইডি-ও। ডিআইজি-সিআইডি (অপারেশনস) নিষাদ পারভেজ বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য দফতর আমাদের জানিয়েছে, হোমিওপ্যাথির ডাক্তারেরা অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা করতে পারবেন না। কিন্তু আয়ুর্বেদ ডাক্তারদের ব্যাপারে তারা কিছুই জানাতে পারেনি। তাই আপাতত আমাদের তদন্ত থেকে এই বিষয়টা বাদ রাখতে হচ্ছে।’’
রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীর অবশ্য জানাচ্ছেন, আয়ুর্বেদ ডাক্তারেরা কোনও মডার্ন মেডিসিনের হাসপাতালে অস্ত্রোপচারও করতে পারেন না। ‘‘তাঁরা অস্ত্রোপচার করবেন শুধু আয়ুর্বেদ হাসপাতালে,’’ বলছেন বিশ্বরঞ্জনবাবু। স্বাস্থ্য অধিকর্তার এই বক্তব্য শুনে সরকারি আয়ুর্বেদ ডাক্তারদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন, তা হলে মালদহ জেলা হাসপাতাল, ইমামবাড়া সদর হাসপাতাল, নদিয়া জেলা হাসপাতাল ও সিউড়ি হাসপাতালের মতো জায়গায় আয়ুর্বেদ চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচার করছেন কী করে?
জবাব দেননি স্বাস্থ্য অধিকর্তা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy