Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Cancer

পড়শির নিদানে সঙ্কটে ক্যানসার রোগী

এক মাস কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি থাকার পরে জুনের প্রথম সপ্তাহে বাড়ি ফিরেছিলেন ইতুরানি।

ইতুরানি কুণ্ডু

ইতুরানি কুণ্ডু

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০২০ ০৩:৪৮
Share: Save:

করোনা নয়, ক্যানসার হয়েছে। কিন্তু তাতে কী! হাসপাতালে ভর্তি থেকে অস্ত্রোপচার ও কেমোথেরাপি করাতে হয়েছে তো! তাই এলাকাবাসীর একাংশের নিদান, প্রতি বার কেমো নেওয়ার পরে সপরিবার ১৪ দিন কোয়রান্টিনে থাকতেই হবে তাঁদের। ওই সময়ে কাজে যেতে পারবেন না রোগিণীর স্বামীও। এই অহেতুক আতঙ্কের জেরে দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারে এখন দু’বেলা খাবার জোগাড় করাই দুষ্কর, চিকিৎসার খরচ তো অনেক দূর। ডিম্বাশয়ের ক্যানসারে আক্রান্ত নবদ্বীপের ইতুরানি কুণ্ডুর পরিবারের আশঙ্কা, এ ভাবে চলতে থাকলে হয়তো বিনা চিকিৎসাতেই ইতুরানিকে ফেলে রাখতে বাধ্য হবেন তাঁরা।

এক মাস কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি থাকার পরে জুনের প্রথম সপ্তাহে বাড়ি ফিরেছিলেন ইতুরানি। অভিযোগ, ওই সময়েই স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের বিরোধিতার মুখে পড়তে হয় তাঁদের। বলা হয়, ‘‘এত দিন হাসপাতালে ছিলেন। ১৪ দিন কোয়রান্টিন কেন্দ্রে কাটিয়ে তবে ঘরে ঢুকবেন।’’ সদ্য কেমো নেওয়া ক্যানসার রোগী, কী ভাবে কোয়রান্টিন কেন্দ্রে থাকবেন? আতান্তরে পড়ে গোটা পরিবার। বহু কাকুতিমিনতির পরে প্রতিবেশীরা সিদ্ধান্ত নেন, কোয়রান্টিন কেন্দ্রে না যান, দু’সপ্তাহ ‘হোম আইসোলেশনে’ থাকতে হবে। যত বার হাসপাতালে ভর্তি থাকবেন, তত বারই এই নিয়ম মানতে হবে।

ইতুরানির মেয়ে রিয়া জানান, তাঁর বাবা পরেশনাথ কুণ্ডু রং মিস্ত্রির কাজ করেন। দিনমজুরির ভিত্তিতে পুরো পরিবার চলে। ২১ দিন অন্তর যেখানে কেমোথেরাপি নিতে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে, সেখানে প্রতি বার ১৪ দিন হোম কোয়রান্টিনে থাকা কী করে সম্ভব? তাঁর কথায়, ‘‘মায়ের চিকিৎসার খরচ, ওষুধের খরচ, সংসারের খরচ, সবই বাবার দিনমজুরির টাকায় আসে। এখন যদি বাবা কাজে বেরোতেই না পারে, কী করে সব চলবে!’’

আরও পড়ুন: ভাড়া না বাড়লে বাসও বন্ধ, কড়া হবে কি নবান্ন?

পরেশবাবু বলছেন, ‘‘সরকারি হাসপাতালে পৌঁছনোর পরে সেখানে ফ্রি চিকিৎসা। কিন্তু সেই পর্যন্ত রোগীকে নিয়ে যাওয়ার খরচও তো কম নয়। বাড়িতে বসে থাকলে সেটাই তো জোগাড় করতে পারব না।’’ অথচ অস্ত্রোপচারের আগে নিয়মমতো রিয়ার মা-র করোনার পরীক্ষা হয়েছিল। তার ফল নেগেটিভ এসেছে। কিন্তু বিরোধিতার মুখে তা গুরুত্ব পায়নি। শেষ পর্যন্ত স্থানীয় এক সমাজকর্মীর মধ্যস্থতায় সপরিবার ইতুরানিকে কোয়রান্টিন কেন্দ্রের পরিবর্তে বাড়িতে রাখার অনুমতি মেলে। ঝন্টুলাল দাস নামে ওই সমাজকর্মী বলেন, ‘‘পরেশবাবুও যদি কাজে বেরনোর অনুমতি না পান, তা হলে সংসারটাই চলবে না। চিকিৎসা তো পরের কথা। পাড়ার লোকজনকে সেটাই বোঝানোর চেষ্টা করেছি বার বার।’’

আরও পড়ুন: কেন বন্ধ অন্য রোগের চিকিৎসা, বিক্ষোভ জুনিয়র ডাক্তারদের

ঠাকুরপুকুরের একটি ক্যানসার হাসপাতালের অধিকর্তা অর্ণব গুপ্ত বলেন, ‘‘অস্ত্রোপচারের আগে সংশ্লিষ্ট রোগীর করোনা পরীক্ষা করিয়ে ন‌েওয়া হয়। পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এলে তবেই অস্ত্রোপচার করা হয়। করোনার ফল যে নেগেটিভ, সেই কাগজও আমরা দিয়ে দিই রোগী বা তাঁর পরিবারের কাছে। ফলে এ নিয়ে আতঙ্কের কারণ নেই।’’ ক্যানসার চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অন্ধ বিরোধিতার আবহ চারপাশে। করোনা আছে কী নেই দেখছি না! তার আগেই বিরোধিতা করে বসছি।’’ সমাজকর্মী অনুপ মুখোপাধ্যায়ের অভিজ্ঞতা, ‘‘অনেকটা খাপ পঞ্চায়েতের আদলে সরকারি বিধি-নিষেধের তোয়াক্কা না করেই অনেক জায়গায় কোয়রান্টিন কেন্দ্রে থাকতে হবে, এমন ফরমান জারি করে দিচ্ছেন প্রতিবেশীরা। পারস্পরিক বিশ্বাসটাই হারিয়ে গিয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cancer Coronavirus in West Bengal Home Quarantine
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE