Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

আবার ভাগাড়ের মাংসের কারবার! এ বার দেগঙ্গায়

ভিতরে পাকা চাতাল। বাঁশ পুঁতে ঝোলানো রয়েছে মোটা দড়ি। যেখানেই মৃত পশু ঝুলিয়ে মাংস কাটা হত। পাশেই ২টি চৌবাচ্চা। সেখানে মাংস কেটে রাখা হত। পাশে মাটিতে বিশাল গর্তে ফেলা মৃত পশুর অবশিষ্টাংশ।

অবাধে: উঁচু পাঁচিল ঘেরা এই পাকা চাতালেই চলত ভাগাড়ের মাংসের কারবার। মঙ্গলবার, দেগঙ্গায়। (নীচে) ওই চাতালে পড়ে রয়েছে মৃত পশুর দেহাবশেষ। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়

অবাধে: উঁচু পাঁচিল ঘেরা এই পাকা চাতালেই চলত ভাগাড়ের মাংসের কারবার। মঙ্গলবার, দেগঙ্গায়। (নীচে) ওই চাতালে পড়ে রয়েছে মৃত পশুর দেহাবশেষ। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৮ ০০:৫৬
Share: Save:

বজবজের পরে এ বার বারাসত-দেগঙ্গার সীমানা এলাকায় ভাগাড়ের মাংসের কারবারের হদিস মিলল।
তদন্তকারীরা জানান, ওই এলাকায় একটি জায়গায় উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘিরে ভিতরে চলত মৃত পশু কেটে প্যাকেট করে মাংস পাচারের ব্যবসা। একজোট হয়ে সেই কারবারিদের ধরে সোমবার পুলিশের হাতে তুলে দিল জনতা। ভাঙচুর চলল মাংস ভর্তি একটি মালবাহী গাড়িতেও।
পুলিশ জানিয়েছে, বিভিন্ন এলাকা থেকে একটি ছোট গাড়িতে করে আনা হত মৃত পশু। তার পরে সেই মাংস চলে যেত বারাসত, মধ্যমগ্রাম, বিমানবন্দর এমনকি কলকাতা শহরেও। জায়গাটি সিল করে দিয়ে মাংসের নমুনাও সংগ্রহ করেছে পুলিশ। স্থানীয় সূত্রের খবর, বারাসত ও দেগঙ্গা থানার সীমানা এলাকায় সোহায় শ্বেতপুরের মণ্ডলগাঁতি খালপাড়ের নির্জন জায়গায় চলছিল ওই কারবার। প্রথমে টিন দিয়ে ঘিরে চলত ওই কাজ। মাস ছয়েক আগে ভাগাড়-কাণ্ডের পরে স্থানীয় মানুষ টিনের পাঁচিল গুঁড়িয়ে দেয়। তবে তার পরে বেপরোয়া পাচারকারীরা ইটের পাকা পাঁচিল গড়ে ভিতরে নতুন করে শুরু করে ওই কারবার। এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়ালেও পাচারকারীদের দাপটে চুপচাপ থাকতেন স্থানীয় মানুষ।
পুলিশ জানায়, সোমবার সন্ধ্যায় মৃত পশুর মাংস পাচারের সময় হাতেনাতে ধরে ফেলেন স্থানীয় মানুষ। ঘটনাস্থল থেকে চম্পট দেয় দু’জন। সফিয়ার রহমান নামে এক জনকে ধরে ফেলে জনতা। তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
মঙ্গলবার ওই পাঁচিল ঘেরা জায়গায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে জড়ো করে রাখা মৃত জন্তু। দুর্গন্ধে গা গুলিয়ে আসার অবস্থা। চার দিকে ঝাঁকে ঝাঁকে কাক-শকুন উড়ে বেড়াচ্ছে। ফুট দশেক উঁচু ইটের পাঁচিল দিয়ে ঘেরা এলাকাটিতে ঢোকার জন্য রয়েছে একটিই লোহার গেট। ভিতরে পাকা চাতাল। বাঁশ পুঁতে ঝোলানো রয়েছে মোটা দড়ি। যেখানেই মৃত পশু ঝুলিয়ে মাংস কাটা হত। পাশেই ২টি চৌবাচ্চা। সেখানে মাংস কেটে রাখা হত। পাশে মাটিতে বিশাল গর্তে ফেলা মৃত পশুর অবশিষ্টাংশ।
পুলিশ ধৃত সফিয়ারকে সেখানে নিয়ে এলে সে লোকজনের সামনেই স্বীকার করে মৃত পশু এনে সেখানে কেটে প্যাকেট করে বারাসত, মধ্যমগ্রাম-সহ কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করা হত।
স্থানীয় বাসিন্দা তুহিন মোল্লা, রোহান আলি, ফরিদুল আলিরা জানান, মৃত পশুর মাংস হাইব্রিড মাছ চাষে ব্যবহার হয় বলে তাঁদের বোঝানো হয়েছিল। কিন্তু এত গোপনে রাতের অন্ধকারে কাজকর্ম দেখে তাদের সন্দেহ হয়। তাঁদের অভিযোগ, আসল ঘটনা জানতে পেরে এই কারবার বন্ধের জন্য পুলিশ-প্রশাসনকে জানিয়েও কাজ হয়নি। তাই তাঁরাই জোট বেঁধেছেন। আলি হোসেন নামে এক যুবক বলেন, ‘‘প্রতিদিন সন্ধ্যায় টাকি রোড, যশোর রোড দিয়ে গাড়িতে মৃত কুকুর, গরু, মোষ খালপাড়ের কারখানায় আনা হত। ছাল ছাড়িয়ে মাংস কেটে প্যাকিং করে আবার গাড়িতে করেই কলকাতার দিকে চলে যেত।’’
বাসিন্দাদের প্রশ্ন, ভাগাড়-কাণ্ড প্রকাশ্যে আসার পরেও কী ভাবে পাচার চক্র এতটা বাড়বাড়ন্তের সাহস পেল? জিয়ারুল মল্লিকের অভিযোগ, ‘‘পুলিশ কিছু জানত না হতে পারে না।’’ উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু বলেছেন, ‘‘ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। খোঁজ খবরও চলছে।’’ স্থানীয় সোহায় শ্বেতপুর পঞ্চায়েত প্রধান জলধর মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা চাই পুলিশ উপযুক্ত ব্যবস্থা নিক।’’
এ দিকে তদন্ত শুরুর পরে ভাঙচুর হওয়া ওই মালবাহী গাড়ি থেকে উলুবেড়িয়ার মহেশপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অনুমতি পাওয়া একটি ট্রেড লাইসেন্স উদ্ধার করেছে পুলিশ। তদন্তকারীরা জানান, ২০১৬ সালে বীরশিবপুরের খানজাদাপুরে হোটেল ব্যবসা চালানোর লাইসেন্স সেটি। যার নামে ট্রেড লাইসেন্স, সেই নামে কোন ব্যক্তি বা কোন হোটেলের খোঁজ এ পর্যন্ত পায়নি পুলিশ। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, যাঁর নামে ট্রেড লাইসেন্স তিনি বিহারের বাসিন্দা। ওই ব্যক্তি মৃত পশু কিনতেন বলে
জানান স্থানীয়েরা। মহেশপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান এবং বর্তমান উলুবেড়িয়া ১ নং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুলতানা বেগমে কথায়, ‘‘কেউ যদি হোটেল ব্যবসার নাম করে বাইরে পচা মাংসের ব্যবসা করেন, তা দেখার দায়িত্ব পঞ্চায়েতের নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rotten Meat Corruption Food Corruption
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE