E-Paper

স্বর্ণকারের মৃত্যুতে বিডিও-র বিরুদ্ধে মামলা রুজু, উঠছে একাধিক প্রশ্নও

গত ২৯ অক্টোবর নিউ টাউন থানা এলাকার যাত্রাগাছি থেকে উদ্ধার হয়েছিল স্বপন কামিল্যা (৪০) নামে এক স্বর্ণকারের ক্ষতবিক্ষত দেহ। সেই ঘটনায় নাম জড়িয়েছে বিডিও প্রশান্তের। গোটা ঘটনা নিয়ে দেখা দিয়েছে রহস্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২৫ ০৯:১৯

—প্রতীকী চিত্র।

চুরি যাওয়া সোনার খোঁজে জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জের বিডিও প্রশান্ত বর্মণ সল্টলেকের দত্তাবাদে একটি সোনার দোকানে হাজির হয়েছিলেন। ওই দোকানটি যাঁর বাড়ির নীচে ভাড়ায় চলত, সেই ব্যক্তি গোবিন্দ বাগ মঙ্গলবার এমনই দাবি করেছিলেন। আর এখানেই প্রশ্ন উঠছে, ওই সোনা কোথা থেকে চুরি হয়েছিল? যদি সোনা চুরি হয়েই থাকে, তা হলে কেন ওই বিডিও পুলিশের কাছে অভিযোগ জানালেন না? এমনকি, ওই সোনার কোনও নথি রয়েছে কিনা, উঠেছে সেই প্রশ্নও।

গত ২৯ অক্টোবর নিউ টাউন থানা এলাকার যাত্রাগাছি থেকে উদ্ধার হয়েছিল স্বপন কামিল্যা (৪০) নামে এক স্বর্ণকারের ক্ষতবিক্ষত দেহ। সেই ঘটনায় নাম জড়িয়েছে বিডিও প্রশান্তের। গোটা ঘটনা নিয়ে দেখা দিয়েছে রহস্য। এই প্রসঙ্গে বুধবার প্রশান্তের কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে, এ দিন বিধাননগর পুলিশ সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, ওই বিডিও-র বিরুদ্ধে খুন ও অপহরণের মামলা রুজু করা হয়েছে।

স্বপনের দেহ উদ্ধারের পরে তাঁর পরিবার অভিযোগে জানিয়েছিল, ২৮ অক্টোবর ওই বিডিও দু’টি গাড়ি নিয়ে দত্তাবাদে স্বপনের সোনার দোকানে হাজির হয়ে তাঁকে এবং ওই বাড়ির মালিক গোবিন্দ বাগকে তুলে নিয়ে যান। পরে গোবিন্দ ফিরে এলেও স্বপনের খোঁজ মেলেনি। পরের দিন, অর্থাৎ ২৯ তারিখ স্বপনের দেহ উদ্ধার হয়। পরিবারের আরও অভিযোগ, তাঁকে অপহরণ করে খুন করা হয়েছে।

এ দিন জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জের ব্লক অফিসে বিডিও যাননি বলেই দাবি করেছেন সেখানকার কর্মীরা। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বিডিও কোনও ছুটির আবেদনও করেননি। সূত্রের দাবি, প্রশান্তকে শিলিগুড়ির মাটিগাড়ার একটি বাড়িতে দেখা গিয়েছে। যদিও বিডিওকে ফোন এবং মেসেজ করা হলেও জবাব মেলেনি।

নির্বাচন কমিশনের কর্তাদের একাংশের ব্যাখ্যা, সরকারি আধিকারিকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রুজু হয়ে থাকলে তিনি ভোটের কাজে যুক্ত থাকতে পারেন না। যদিও এ দিনও রাজগঞ্জে ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধনে তথ্য যাচাইয়ের দায়িত্বে ছিলেন ওই বিডিও-ই।

অভিযোগ উঠেছে, বিডিও কলকাতায় চোরাই সোনা উদ্ধার করতে গিয়েছিলেন। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, বিডিও স্তরের কোনও আধিকারিককে নিজের কাজের এলাকা ছেড়ে বাইরে যেতে হলে জেলাশাসকের অনুমতি নিতে হয়। এ ক্ষেত্রে তা নেওয়া হয়েছিল কিনা, সেই প্রশ্নের উত্তর অধরা। জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের একাংশের দাবি, সপ্তাহখানেকের মধ্যে রাজগঞ্জের বিডিও-র তরফে এমন কোনও আবেদন করা হয়েছিল বলে তাঁদের জানা নেই। জেলাশাসক শমা পরভিন ফোন ধরেননি, মোবাইল-বার্তার জবাব দেননি।

জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশের দাবি, বিধাননগর পুলিশ তাদের কিছু জানায়নি। এক কর্তার কথায়, “অভিযুক্ত বিডিওর সম্পর্কে নানা তথ্য এবং তাঁর গতিবিধির খবর নেওয়া হচ্ছে। জলপাইগুড়ি জেলায় ওই আধিকারিকের কোনও বাড়ি নেই, শুধু অফিস রয়েছে। কাজেই বিধাননগর পুলিশ সরকারি ভাবে এ ব্যাপারে আমাদের না-ও জানাতে পারে।”

এ দিকে, এই ঘটনায় এখনও কেন বিডিওর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হয়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে রাজনৈতিক দলগুলি। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বিডিওর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠলেও পুলিশ এখনও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এই সব পোষ্যপুত্রদের নিয়েই সরকার চলছে। মনে রাখতে হবে, এই বিডিও সাদা খাতা জমা দিয়ে চাকরি পেয়েছিলেন।’’

বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পুলিশ এবং প্রশাসন বলে আলাদা কিছুই নেই। এর পরে পুলিশের থেকে আর কী প্রত্যাশা করা যেতে পারে? পশ্চিমবঙ্গের অভিধান থেকে এই মুহূর্তে আইনশৃঙ্খলা শব্দটি মুছে গিয়েছে।’’

তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ এই ঘটনার বিষয়ে বলেন, ‘‘পুলিশ প্রয়োজনীয় কাজ করছে। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক স্তরে কোনও মন্তব্য করব না।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

BDO Jalpaiguri

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy