Advertisement
E-Paper

‘সিবিআই স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে রাজ্যের ব্যাপারে নাক গলায় না’

অতীতে আইন মহলও একটা বিষয়ে দ্বিমত ছিল, হাইকোর্ট কি সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিতে পারে? যেমন— সঞ্জীব-তীর্থঙ্কর মামলায় তৎকালীন বাম সরকার আদালতে যুক্তি দিয়েছিল যে, হাইকোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিতে পারে না।

অরুণাভ ঘোষ (আইনজীবী)

শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৮ ২২:১৮
সিবিআই বিভিন্ন রাজ্যে যে কেলেঙ্কারিগুলি নিয়ে তদন্ত করছে, তা সবই সুপ্রিম কোর্ট বা সেই রাজ্যের হাইকোর্টের নির্দেশে।

সিবিআই বিভিন্ন রাজ্যে যে কেলেঙ্কারিগুলি নিয়ে তদন্ত করছে, তা সবই সুপ্রিম কোর্ট বা সেই রাজ্যের হাইকোর্টের নির্দেশে।

দুপুর থেকেই আলোচনাটা শুনছিলাম। সিবিআইকে সরকার এ রাজ্যে ঢুকতে দেবে না বলে খবরও পাচ্ছিলাম। ঠিক যেমনটা অন্ধ্রপ্রদেশে চন্দ্রবাবু করেছেন।

এখানে মনে রাখতে হবে, সিবিআই এখনও পর্যন্ত বিভিন্ন রাজ্যে যে কেলেঙ্কারিগুলি নিয়ে তদন্ত করছে, তা সবই সুপ্রিম কোর্ট বা সেই রাজ্যের হাইকোর্টের নির্দেশে। সিবিআই আইন অনুযায়ী, যে সমস্ত অর্থনৈতিক অপরাধে কেন্দ্রীয় কোষাগার বা ব্যাঙ্ক জড়িত রয়েছে, সেখানে যে কোনও অভিযোগের ভিত্তিতেই তাদের স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে সরাসরি হস্তক্ষেপ করার এক্তিয়ার রয়েছে। কিন্তু, রাজ্যের কোনও ব্যাপারেই সিবিআই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারে না। সেই আইন কিন্তু এখনও বর্তমান।

অতীতে আইন মহলও একটা বিষয়ে দ্বিমত ছিল, হাইকোর্ট কি সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিতে পারে? যেমন— সঞ্জীব-তীর্থঙ্কর মামলায় তৎকালীন বাম সরকার আদালতে যুক্তি দিয়েছিল যে, হাইকোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিতে পারে না। এটা তাদের এক্তিয়ার বহির্ভূত বিষয়। একই যুক্তি অনেক মামলাতেই দেওয়া হয়েছিল।

আরও পড়ুন: সিবিআই নিয়ে অন্ধ্রের পথে হাঁটতে চাইছে বাংলা, খবর নবান্ন সূত্রে

কিন্তু, ব্যতিক্রম ঘটল বিহারে লালুপ্রসাদ যাদবের ট্রেজারি এবং গোখাদ্য কেলেঙ্কারি মামলায়। সেই সময় বিহার বিধানসভার বিরোধী দলনেতা সুশীল মোদী পটনা হাইকোর্টে মামলা করেন এই বলে, যে হেতু মুখ্যমন্ত্রী পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে জড়িত, তাই রাজ্য পুলিশ কোনও তদন্ত করছে না। পাশাপাশি তিনি অভিযোগ করেন, আসল চুরির ঘটনাকে রাজ্য পুলিশ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। তখন বিহার সরকারের তরফেও ওই একই যুক্তি দেওয়া হয় যে, সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার এক্তিয়ার নেই হাইকোর্টের। কারণ, সিবিআই আইনে রাজ্যের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার কোনও কথা বলা হয়নি। মামলাটি শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট অবধি গড়ায়। শীর্ষ আদালত রায় দিয়ে বলে যে, এ ধরনের বিষয়ে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার এক্তিয়ার সব সময়েই হাইকোর্টের আছে। বিশেষ করে যেখানে রাজ্য পুলিশ শাসকগোষ্ঠীর অভিযুক্তকে বাঁচানোর বা তদন্ত ভেস্তে দেওয়ার চেষ্টা করে।

আরও পড়ুন: অন্ধ্রে ঢুকতে পারবে না সিবিআই, বিজ্ঞপ্তি জারি চন্দ্রবাবুর, সমর্থন করলেন মমতা

এর পর থেকেই যখন রাজ্য সরকারের পুলিশ তদন্ত ঠিক ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে না, এই অভিযোগে অভিযুক্ত হয় এবং সেই রাজ্যের হাই কোর্ট সেটা আপাত দৃষ্টিতে মনে করে ঠিক, সেখানে আদালতের হস্তক্ষেপের ভিত্তিতেই সিবিআই বিভিন্ন কেলেঙ্কারিতে তদন্ত শুরু করে।

পশ্চিমবঙ্গে নন্দীগ্রাম এবং রিজওয়ানুর রহমানের ঘটনা থেকে সারদা, নারদ কেলেঙ্কারি অবধি সিবিআই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কোথাও তদন্ত শুরু করেনি। সমস্ত তদন্তই শুরু হয়েছে হাইকোর্টে কোনও ব্যক্তি গিয়ে সরকারের নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করার পর আদালতের নির্দেশে। যেমন, নারদ মামলায় তৎকালীন প্রধান বিচারপতি শ্রীমতি চেল্লুর তৎকালীন অ্যাডভোকেট জেনারেল জয়ন্ত মিত্রের কাছে প্রস্তাব দেন যে, পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি এ ব্যাপারে তদন্ত করে দেখুক। কিন্তু রাজ্য সরকার এ ব্যাপারে রাজি না হওয়ায় বাধ্য হয়েই হাইকোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়।

সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, সারা ভারত জুড়ে সিবিআই স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে রাজ্যের ব্যাপারে নাক গলায়নি। যা কিছু করেছে, হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই। সেটা গুজরাতের ক্ষেত্রে যেমন প্রযোজ্য, তেমন পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রেও।

CBI Central Bureau of Investigation Interference Supreme Court Investigation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy