Advertisement
০৬ মে ২০২৪
Bengal Recruitment Scam

অনুব্রত ছাড়া আর কার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল জীবনকৃষ্ণের? খোঁজ নিচ্ছে সিবিআই

অনুব্রতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল জীবনকৃষ্ণর। দুর্নীতি চক্রে আর কোন স্তরের কত রাজনৈতিক নেতানেত্রী ও অন্যান্য প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে জীবনকৃষ্ণের সংস্রব ছিল, তারই সন্ধানে সিবিআই।

Anubrata Mondal and Jiban Krishna Saha

অনুব্রত মণ্ডল বাদে আর কোন স্তরের কত রাজনৈতিক নেতানেত্রী ও অন্যান্য প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে জীবনকৃষ্ণের সংস্রব ছিল, তারই সন্ধান চালাচ্ছে সিবিআই। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:৪২
Share: Save:

বীরভূম জেলায় রাজ্যের শাসক দলের বিভিন্ন নেতা ও এজেন্টের মাধ্যমে ২০১৫ সালের পর থেকে তিনি নিয়োগ দুর্নীতি চালিয়ে গিয়েছেন বলে সিবিআই সূত্রের অভিযোগ। তাদের বক্তব্য, স্বভাবতই বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা তথা তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি (বর্তমানে গরু পাচার মামলায় জেলবন্দি) অনুব্রত মণ্ডল ওরফে কেষ্টর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল বড়ঞার বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার। দুর্নীতি চক্রে আর কোন স্তরের কত রাজনৈতিক নেতানেত্রী ও অন্যান্য প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে জীবনকৃষ্ণের সংস্রব ছিল, তারই সন্ধান চালাচ্ছে সিবিআই। পাশাপাশি চলছে ওই তৃণমূল বিধায়কের বিপুল বিষয়সম্পত্তি এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য যাচাইও।

তদন্তকারী সংস্থা সূত্রের দাবি, এখনও পর্যন্ত জীবনকৃষ্ণ এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের ১২টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হদিস পাওয়া গিয়েছে। কয়েক কোটি টাকার লেনদেনের হদিস মিলেছে ওই সব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। তা ছাড়া মুর্শিদাবাদ ও বীরভূমে জীবনের বহু সম্পত্তির খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। বিষয়সম্পত্তির সঙ্গে সঙ্গে নিয়োগ দুর্নীতিতে বিধায়কের ‘রাজনৈতিক’ যোগসূত্রও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ৬৮ ঘণ্টা তল্লাশির পরে সোমবার ভোরে জীবনকৃষ্ণকে গ্রেফতার করে সিবিআই। বর্তমানে তাঁকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করছেন তদন্তকারীরা।

তল্লাশির সময় বিধায়ক দু’টি মোবাইল ফোন পানাপুকুরে ফেলে দেন। পাম্প চালিয়ে পুকুরের জল ছেঁচে অতিকষ্টে সেই মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছে সিবিআই। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের সাহায্যে সেই ফোন ঘেঁটেও তথ্য উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। তদন্তকারীদের ধারণা, ওই মোবাইল থেকে বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলতে পারে। জীবনকৃষ্ণের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে নথিপত্র উদ্ধার করেছেন তদন্তকারীরা। তার ভিত্তিতে সিবিআই সূত্রের দাবি, এসএসসি এবং প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে বিধায়কের যোগসূত্র মিলেছে। নিয়োগ দুর্নীতিতে জীবনকৃষ্ণের মূল এজেন্ট কৌশিক ঘোষ জেল হেফাজতে আছেন। তাঁর বয়ানের ভিত্তিতেই জীবনকৃষ্ণের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়েছিল।

তদন্তকারীদের দাবি, বিধায়কের বাড়ি থেকে অযোগ্য প্রার্থীদের তালিকা, সুপারিশপত্র ইত্যাদি উদ্ধার করা হয়েছে। সেগুলি যাচাই করা হচ্ছে। দুর্নীতির টাকা নামে-বেনামে ব্যবসায় নিয়োগের পাশাপাশি আর কার কার কাছে গিয়েছে, তারও খোঁজ চলছে সমানে। নিয়োগ দুর্নীতি চক্রে জীবনকৃষ্ণের হয়ে আর কে কে এজেন্ট হিসেবে কাজ করছিলেন, সেই বিষয়েও খোঁজ করছেন তদন্তকারীরা।

জীবনকৃষ্ণ নিজের মোবাইল পুকুরে ফেলে দেওয়ায় তা খুঁজে পেতে কালঘাম ছুটে গিয়েছে সিবিআইয়ের। পাম্প দিয়ে পুকুরের জল ছেঁচে প্রথমে একটি মোবাইল উদ্ধার করা হয়েছিল। সোমবার দুপুরে দ্বিতীয় মোবাইলটিও উদ্ধার হয়। সকালে বিধায়ককে নিয়ে সিবিআইয়ের একটি দল কলকাতায় ফিরে এলেও অন্য দল বিকেল পর্যন্ত জীবনের বাড়িতে ছিল। ওই বাড়ির চত্বরে থাকা ঝোপঝাড়েও তল্লাশি চালানো হয়েছে। ৬৮ ঘণ্টার তল্লাশিতে অবশ্য পেন ড্রাইভ, হার্ড ডিস্ক, ছ’বস্তা নথি মিলেছে। তাতে চাকরিপ্রার্থীদের ছবি-সহ নথিপত্র মিলেছে বলে তদন্ত সংস্থা সূত্রের দাবি। সিবিআই অফিসারদের বক্তব্য, মোবাইল ফোন খুঁজতে কালঘাম ছুটলেও তা জীবনের বিরুদ্ধে মামলাকে জোরালো করেছে। সিবিআই সূত্রের খবর, জিজ্ঞাসাবাদের সময় মোবাইল পরীক্ষা করা হয়। জীবনের ফোন পরীক্ষা করে টেবিলে রাখা হয়েছিল। আচমকাই তিনি ফোন তুলে নিয়ে দৌড় দেন এবং সেগুলি পুকুরে ফেলে দেন। রবিবার দুপুরে প্রথম মোবাইলটি উদ্ধারের পরেই জীবনকে গ্রেফতার করা নিয়ে দিল্লির সদরদফতরের সঙ্গে ভিডিয়ো-বৈঠকে বসেন পূর্বাঞ্চলীয় অফিসের কর্তারা। তার পরেই সিবিআইয়ের এসপি কল্যাণ ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে ছ’জন অফিসার এবং এক সেকশন কেন্দ্রীয় বাহিনী বিকেল সাড়ে ৬টায় মুর্শিদাবাদ রওনা হন। গভীর রাতে তাঁরা বিধায়কের বাড়িতে পৌঁছন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE