Advertisement
E-Paper

সিবিআই হানা শান্তিনিকেতনে

নোবেল চুরির সেই পর্বের পর ফের সিবিআই হানা দিল শান্তিনিকেতনে!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৬ ০১:০৯
বিশ্বভারতীর দফতরে তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ করে বেরিয়ে আসছে সিবিআইয়ের দল। নিজস্ব চিত্র।

বিশ্বভারতীর দফতরে তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ করে বেরিয়ে আসছে সিবিআইয়ের দল। নিজস্ব চিত্র।

নোবেল চুরির সেই পর্বের পর ফের সিবিআই হানা দিল শান্তিনিকেতনে!

এবং আরও একবার মুখ পুড়ল বিশ্বভারতীর। কেন্দ্রীয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বেআইনি নিয়োগ ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগের তদন্তে নেমে মঙ্গলবার শান্তিনিকেতনের পাঁচটি জায়গা, কলকাতায় দু’টি জায়গা এবং ওড়িশায় হানা দেয় সিবিআই। সিবিআই সূত্রের খবর, সুশান্ত দত্তগুপ্ত বিশ্বভারতীর উপাচার্য থাকাকালীন ইউজিসি-র নিয়ম না মেনে বছর তিনেক আগে শ্যামলা রায় নায়ার নামে এক মহিলাকে ডেপুটি রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল। অভিযোগ, সেই পদের জন্য আরও অনেক যোগ্য প্রার্থী থাকলেও তাঁদের সুযোগ না দিয়ে ওই মহিলার নিয়োগ করেন সুশান্তবাবু। নিয়োগে তাঁর সঙ্গে জড়িত রয়েছেন বিশ্বভারতীর আরও অনেক কর্তা-ব্যক্তি। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এই বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত উপাচার্য ছিলেন সুশান্তবাবু। এ দিন কলকাতায় রাজারহাটেও তাঁর বাড়িতেও হানা দেয় গোয়েন্দা সংস্থা।

শান্তিনিকেতনে শুধু বিশ্বভারতীর বিভিন্ন দফতরে নয় সুশান্তবাবুর শান্তিনিকেতনের বাড়ি-সহ একাধিক আধিকারিকের আবাসনেও হানা দেয় ১৫ সদস্যের সিবিআই–এর দুর্নীতি দমন শাখার ওই দলটি।

বিশ্বভারতীর অস্থায়ী উপাচার্য অধ্যাপক স্বপন দত্ত বলেন, “সিবিআই-এর একটি তদন্তকারী দল এসেছিল। ওঁরা বিশ্বভারতীর প্রাক্তন কর্মসচিব ডি গুণশেখরণ, বিত্ত আধিকারিক অতুল প্রসাদ ত্রিবেদী, সুশান্তবাবুর তৎকালীন আপ্ত-সহায়ক শ্যামলা রায় নায়ার ও মনিমুকুট মিত্রের যাবতীয় ফাইল চেয়েছে। বিশ্বভারতীর কর্মসচিবের দফতর ওই বিষয়টি দেখে, তাঁরাই সব রকমের সহায়তা করবে।”

পদক চুরির এক যুগ পরে, এ দিনের সিবিআই হানায় কার্যত তটস্থ ছিল শান্তিনিকেতন! কার কার নাম আছে গোয়েন্দাদের হাতে, সে নিয়ে নানা জল্পনা চলে রাত পর্যন্ত। এ দিন গোয়েন্দা দলটি কলকাতা থেকে বর্ধমান, দুর্গাপুর হয়ে শান্তিনিকেতনে ঢোকে। আচমকা তল্লাশি অভিযানে আতঙ্ক ছড়ায় সুশান্ত-ঘনিষ্ঠ বিশ্বভারতীর কর্মী, অধ্যাপক এবং আধিকারিকদের মহলে।

সুশান্তবাবুর মেয়াদ কালে বহু নিয়োগ হয়েছে। সঙ্গীতভবনে নিয়োগ-সহ একাধিক কর্মী, অধ্যাপক এবং আধিকারিক নিয়োগে অনিয়ম নিয়ে মোট ৮৬টি অভিযোগ জমা পড়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকে। তা ছাড়াও, বেআইনি ভাবে নানা সুবিধা সুযোগ পাইয়ে দেওয়া, ক্ষমতার বাইরে গিয়ে নিয়োগ, পদ তৈরি-সহ স্বজন পোষনের অভিযোগও উঠেছিল সুশান্তবাবুর বিরুদ্ধে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি’ করে। তারা রিপোর্ট দেয়। রিপোর্টের প্রেক্ষিতে বরখাস্ত হন সুশান্ত।

সে সময় সুশান্তবাবুর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগে সরব হয়েছিল বিশ্বভারতীর ছাত্রছাত্রী, কর্মী, অধ্যাপক, আধিকারিক এবং অভিভাবকদের একাংশকে নিয়ে গঠিত জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি।

এ দিন সিবিআই হানার পরে জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটির পক্ষে কিশোর ভট্টাচার্য, দেবব্রত হাজারী, আনন্দ দুলাল মিত্র ও রাজেশ কে ভেনুগোপাল জানান, “শুধু বরখাস্ত নয়, সুশান্তবাবুর বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের আর্জি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপতি তথা বিশ্বভারতীর পরিদর্শক প্রণব মুখোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হয়েছিলাম। সিবিআই তদন্ত শুরু হওয়ায় আমাদের অভিযোগ আরও মান্যতা পেল।”

মঙ্গলবার সকাল দশটা নাগাদ তদন্তকারী তিনটি দলে ভাগ হয়ে বিভিন্ন অফিসে এবং কর্মীদের আবাসন ও ঘরে যায়। কাউকে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদও করে।

একটি দল বিশ্বভারতীর উপাচার্যের বাংলো ‘পূর্বিতা’ তে গিয়ে নিরাপত্তা রক্ষীদের সঙ্গে কথা বলে। ‘পূর্বিতা’-র ভিতরে গিয়েও তদন্ত করে। শান্তিনিকেতনের ফর্টিফাইভ এলাকার রবীন্দ্রপল্লিতে সুশান্তবাবুর একটি নিজস্ব বাড়ি রয়েছে। সেই ‘শান্তিনীড়’ বাড়িতেও ঢোকে তারা। বাড়ির কেয়ারটেকার লক্ষ্মীকান্ত মালো গ্রিল খুলে দেন। বাড়ির সামনে দাঁড়ানো একটি গাড়ির ছবি, ঘরের মধ্যে বিভিন্ন আসবাবের ছবি তোলে ওই প্রতিনিধি দল। স্থানীয়দের সঙ্গে কথাও বলে তারা। আট কাঠা জমির ওপর সুদৃশ্য বাড়ির ভিতর ঢুকে কাগজপত্রও দেখে দলটি। ঘণ্টা চারেকের কিছু বেশি সময়ে ওই বাড়িতে থাকার পরে, গোয়েন্দারা চলে যায়। সূত্রের দাবি, ওই বাড়ি থেকে একাধিক ফাইল নিয়ে যায় সিবিআই।

লক্ষ্মীকান্ত বলেন, ‘‘সিবিআই আসার ঘণ্টাখানেক আগে বাবু ফোন করেছিলেন। বলেন, লোকজন যাচ্ছে। যা দেখতে চাইবে, সব দেখিয়ে দাও। ওনারা এসে কিছু কাগজ নিয়ে গিয়েছেন।’’

সিবিআইয়ের অন্য একটি দল এ দিন সুশান্তবাবুর ব্যক্তিগত সচিব তথা ডেপুটি রেজিস্ট্রার শ্যামলা রায় নায়ার ও বিশ্বভারতীর বিত্ত আধিকারিক অতুল প্রসাদ ত্রিবেদীর বাড়ি এবং দফতরে যায়। তারা তৎকালীন কর্মসচিব মনিমুকুট মিত্রের সঙ্গে কথা বলে তাঁর অফিসে গিয়ে। বিত্ত আধিকারিকের ইলেকট্রিক বিল, আইআইটি খড়গপুরের লিয়েন কাগজপত্র, ইউজিসি- কাগজপত্র নিয়ে যায় প্রতিনিধিদল। দুপুরে বিশ্বভারতীর নতুন কেন্দ্রীয় দফতরে, বিত্ত আধিকারিকের ঘরে যায় তারা। ঘণ্টা দুয়েকের কিছু বেশি সময় কথা বলে অতুলপ্রসাদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘‘নিজেদের সিবিআই দুর্নীতি দমন শাখা কলকাতা অফিসের তদন্তকারী পরিচয় দিয়ে, আর্থিক কিছু কাগজপত্র চেয়েছেন। বাড়িতেও গিয়েছিল ওই প্রতিনিধি দলটি।’’ বহু চেষ্টা করেও শ্যামলা রায় নায়ার ও মনিমুকুটবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। এরপরেই একটি দল বিশ্বভারতীর অস্থায়ী উপাচার্য অধ্যাপক স্বপন দত্তের দফতরে যায়। সেখানে ঘণ্টা খানেক ধরে কথা হয় স্বপনবাবুর সঙ্গে।

এ দিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার যে দলটি শান্তিনিকেতনে এসেছিল, ওই দলের নাম ও পদ প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, “সিবিআই দুর্নীতি দমন শাখা কলকাতা অফিসের ডিআইজি এন কে সিংহের নির্দেশে শান্তিনিকেতনে আসা। প্রাক্তন উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্তের বিরুদ্ধে ওঠা আর্থিক অনিয়ম এবং নিয়গে দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। ওই তদন্তের একটি অঙ্গ হিসেবে এ দিন বিশ্বভারতীর বিভিন্ন দফতরে গিয়ে কথা বার্তা হয়েছে। বিশ্বভারতীর কাছ‌ে কিছু কাগজপত্র আমরা চেয়েছি। শুধু সুশান্ত দত্তগুপ্ত নন মনিমুকুট মিত্র, অতুলপ্রসাদ ত্রিবেদী, শ্যামলা নায়ার-সহ একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ রয়েছে।’’

শান্তিনিকেতন ছাড়ার আগে ওই তদন্তকারী অফিসারের দাবি, ‘‘কলকাতায় সুশান্ত দত্তগুপ্তের বাড়ি, গ্রন্থনবিভাগ, ভুবনেশ্বরের আইআইটি-তে কর্মরত প্রাক্তন কর্মসচিব ডি গুণশেখরণের কাছেও পৃথক তদন্তকারী দল এ দিনই তদন্তে যায়।’’

shantiniketan CBI
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy