E-Paper

পার্থের পাঁচ সঙ্গীর খুঁটিনাটি আদালতে পেশ

তদন্তকারীদের দাবি, ২০১৪ সালে এসএসসির চেয়ারম্যান পদে সুবীরেশ ভট্টাচার্যকে সামনে রেখেই শুরু হয় নিয়োগ দুর্নীতির খেলা।

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২৫ ০৯:২৮
প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

২০১৪ থেকে ২০২১, সাত বছরে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দুর্নীতির পাঁচ সঙ্গীর কথা আদালতে জানায় সিবিআই। এই পাঁচ মাথার সাহায্যে পার্থ শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি চক্রটি চালাতেন বলে একাধিক সাক্ষীর লিখিত বয়ান পেশ করেন তদন্তকারীরা। ওই মামলার বিচার শুরু হয়েছে। তাতে একাধিক সাক্ষীর নথি পেশ করেছে সিবিআই।

তদন্তকারীদের দাবি, ২০১৪ সালে এসএসসির চেয়ারম্যান পদে সুবীরেশ ভট্টাচার্যকে সামনে রেখেই শুরু হয় নিয়োগ দুর্নীতির খেলা। সিবিআই সূত্রে দাবি, সুবীরেশের জমানায় শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ওএমআর শিট পরীক্ষকদের নির্দেশ দেওয়া হয়, মূল্যায়ন পেনসিলে করতে হবে। কিন্তু মূল্যায়নের পরে পরীক্ষকদের সই করতে হবে কলমে। এই ভাবেই ওএমআর শিটে নম্বর কারচুপির রাস্তা খোলা রাখা বা মন্ত্রীর সুপারিশধন্যদের সুযোগ দেওয়া হত বলে তদন্তকারীরা দাবি করছেন।

এসএসসির কয়েক জন প্রোগ্রাম ডেটা অপারেটর এবং অন্য কর্মীদের নিয়ে নিজের বাড়িতেই সুবীরেশ ‘নম্বর বাড়ানো, কমানো’-র খেলা শুরু করেন বলে তদন্তে উঠে এসেছে। এর পরে সেই ওএমআর শিট এসএসসির ফলাফল প্রস্তুতকারী সংস্থা নাইসা-র হাতে তুলে দেওয়া হত বলে দাবি। নাইসা-র আধিকারিকদের কয়েক জনকেও সুবীরেশ নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে সিবিআই-তদন্তে বিভিন্ন সাক্ষীর বয়ানে উঠে এসেছে।

তদন্তকারীদের দাবি, ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের জুলাই পর্যন্ত এসএসসির চেয়ারম্যান ছিলেন সুবীরেশ। তখন পার্থের নির্দেশে ৭২০০ জন অযোগ্য প্রার্থীর বাঁকা পথে চাকরির ব্যবস্থা করা হয় বলে দাবি তদন্তকারীদের। তদন্তকারীদের দাবি, মন্ত্রীর নির্দেশমাফিক নিয়োগে এই ‘দক্ষতার’ পুরস্কার বাবদই উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে সুবীরেশকে বসানো হয়। তদন্তকারীদের দাবি, এসএসসির আধিকারিকদের পাশাপাশি ‘টিম সুবীরেশ’-এর সক্রিয় সদস্য পার্থ ঘনিষ্ঠ মিডলম্যান প্রসন্ন রায়ও অযোগ্য প্রার্থী এবং বিভিন্ন আঞ্চলিক অফিসের মধ্যে যোগাযোগ রেখে শূন্য পদ সৃষ্টির বিষয়টি দেখভাল করতেন।

এসএসসি-র উপদেষ্টা হিসেবে শান্তিপ্রসাদ সিংহ যোগ দেন ২০১৮ সালে। তদন্তকারীদের দাবি, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তৎকালীন সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় এবং ২০২০ সাল থেকে এসএসসির চেয়ারম্যান অশোক সাহাও এই দুর্নীতি চক্রে পার্থের প্রধান সহযোগী। সিবিআই কোর্টে বলেছে, ২০১৮ থেকে ২০২১-এর মধ্যে অন্তত ১২০০ জন অযোগ্য প্রার্থীর নিয়োগের ব্যবস্থা করেন শান্তিপ্রসাদ, অশোক ও কল্যাণময়।

সুবীরেশের জমানায় নাইসা-র তরফে শিক্ষক নিয়োগের ফলাফল তাঁকে ইমেল করে জানানো হত বলেও তদন্তে উঠে এসেছে। সুবীরেশকে নাইসা একটি সিডি দেয় বলেও তদন্তকারীদের দাবি। সুবীরেশ নাইসা-র ইমেলটি মুছে ফেললেও পরে তা উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। কিন্তু সিডিটি মেলেনি। ২০১৮ সালের পরে নাইসা-র সঙ্গে যোগাযোগ করে শান্তিপ্রসাদ, অশোকেরাই পরীক্ষার ফলের খুঁটিনাটি তথ্য নিতেন বলে দাবি। তদন্তে প্রকাশ, নাইসা-র তরফে অশোককেও একটি সিডি দেওয়া হয়। অশোক তা নষ্ট করে ফেলেন বলে তদন্তে উঠে এসেছে।

তদন্তকারীদের দাবি, ২০১৪-র পর থেকে এসএসসির কাছে থাকা যাবতীয় নিযোগ-নথি নষ্ট করা বা লুকিয়ে রাখা হয়েছে। ফলে তা আদালতে পেশ করা যায়নি। সিবিআইয়ের এক কর্তা বলেন, নাইসা-র আধিকারিকের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা সার্ভারের তথ্য যাচাই করেই আদালতে অযোগ্যদের তালিকা পেশ করা হয়েছে। কিন্তু এসএসসির কাছে জমা দেওয়া নাইসার দু’টি সিডির খোঁজ এখনও চলছে। নতুন তথ্য উঠে আসলে তা আদালতে জানানো হবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

CBI Partha Chatterjee

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy