Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Anubrata Mondal

অন্যের জেতা লটারি টিকিট কিনে কালো টাকা সাদা করেছেন কেষ্ট? উত্তর খুঁজছে সিবিআই

অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে লটারি নিয়ে এ ভাবে অভিযোগ তুলে তাঁর ‘চরিত্রহনন’ করা হচ্ছে বলে এ দিন বীরভূমে এসে পাল্টা অভিযোগ তোলেন রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।

বোলপুরে একটি লটারির দোকানে তদন্তে সিবিআই আধিকারিকেরা। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র।

বোলপুরে একটি লটারির দোকানে তদন্তে সিবিআই আধিকারিকেরা। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র।

দয়াল সেনগুপ্ত 
  সিউড়ি শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২২ ০৭:৪১
Share: Save:

সিবিআই কি পেল ‘লটারি’?

বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল কী ভাবে লটারিতে এক কোটি টাকা পুরস্কার জিতলেন— এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে এ দিন আসানসোল সংশোধনাগারে গিয়েছিলেন সিবিআই আধিকারিকেরা। এক ঘণ্টা কুড়ি মিনিট তাঁরা অনুব্রতকে জেরাও করেন। কিন্তু সেখানে অনুব্রত কোনও স্পষ্ট জবাব দেননি বলেই দাবি সিবিআইয়ের। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে দাবি, অনুব্রত অন্যের জেতা টিকিট কিনে কালো টাকা সাদা করার চেষ্টা করেছিলেন কি না, সেটাই তাঁরা এখন খতিয়ে দেখতে চান। সেই টাকার সঙ্গে গরু পাচারের যোগ আছে কি না, সেটাও তাঁদের তদন্তসাপেক্ষ।

সিবিআই সূত্রে খবর, লটারিতে তাঁর এক কোটি টাকা পুরস্কার জেতার বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করা হয় বীরভূমের তৃণমূল সভাপতিকে। কবে তিনি টিকিট কিনেছিলেন, পুরস্কারের কথা কী ভাবে জানতে পারেন, কী ভাবে টাকা পেয়েছেন, কেউ তাঁকে টাকা পৌঁছে দিয়েছে, না কি তিনি নিজে টাকা সংগ্রহ করেছেন, তা করলে কোথা থেকে সংগ্রহ করেছেন— এমন নানা প্রশ্ন করা হয় অনুব্রতকে। সিবিআইয়ের একটি সূত্রের দাবি, অধিকাংশ সময়ে একেবারে চুপ ছিলেন অনুব্রত। তবে তাঁর শারীরিক অবস্থার কথা জানতে চাওয়া হলে, অনুব্রত তাঁদের কাছে জানান, তিনি ভাল নেই।

কেন এই লটারি জয়ের উপরে জোর দিচ্ছে সিবিআই? তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে বলা হচ্ছে, বহু দিন ধরেই জেলায় লটারির মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করার অভিযোগ উঠছে। সে কথা লটারি ব্যবসার সঙ্গে যুক্তদের অনেকেই মেনে নিয়েছেন। লটারি কেনা ও পুরস্কার পাওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে নানা ফাঁকের সুযোগ নিয়েই তা করা হয় বলে জানা যাচ্ছে। লটারি ব্যবসায়ীদের সূত্রে খবর, এক কোটি পুরস্কার জিতলে কর ও অন্য খরচ বাদে ৬৮-৬৯ লক্ষ টাকা পেতে পারেন বিজেতা। অভিযোগ, অনেক ক্ষেত্রেই গরিব বিজেতাকে ৮০-৯০ লাখ টাকা দিয়ে সেই টিকিট ‘কিনে নেন’ প্রভাবশালীরা। অনুব্রতের লটারি প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও এমন কিছু হয়েছিল কি না, তা নজরে রয়েছে বলে তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর।

অনুব্রতের ক্ষেত্রে কী পদ্ধতি নিচ্ছেন তদন্তকারীরা? সূত্রের খবর, ‘প্রকৃত’ লটারি প্রাপকদের খোঁজ করছেন তাঁরা। তাঁদের কেউ পুরস্কার জেতার পরে সোজা পথে এবং পদ্ধতি মেনে পুরস্কারের অর্থ ‘ক্যাশ’ করিয়েছিলেন, নাকি অতিরিক্ত টাকার লোভে সেই টিকিটের হাতবদল করেছেন, সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের নজরে রয়েছেন কিছু গ্রাহক, যাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেও সঙ্গতিহীন ভাবে আচমকা বিশাল অঙ্কের লেনদেন হয়েছে। জেলার এক ব্যাঙ্ক আধিকারিক মেনে জানাচ্ছেন, যে কোনও অ্যাকাউন্টে এককালীন ১০ লক্ষ টাকার বেশি জমা হলেই সেই তথ্য রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক-কে জানাতে হয়। সেই রিপোর্ট রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক আয়কর দফতরকে পাঠায়। সিবিআই চাইলেই আরবিআই এবং আয়কর দফতর থেকে তথ্য পেতে পারে। ইতিমধ্যেই জেলার একাধিক ব্যাঙ্ক থেকে প্রচুর নথি ও তথ্য সংগ্রহ করেছেন সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা।

তৃণমূল নেতা বা তাঁদের ঘনিষ্ঠরা লটারির প্রথম পুরস্কার জিতছেন কী ভাবে— সম্প্রতি এই প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। এ দিনও বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘অনুব্রত মণ্ডল থেকে শুরু করে তৃণমূল নেতারা বারবার ওই লটারি পাচ্ছেন। আমি বলেছিলাম, ওঁরা বলে দিন, কোন জ্যোতিষীকে দেখান। আমরাও যাব, ওই লটারি কাটব। আসলে, ডাল মে কুছ কালা হ্যায়।’’

অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে লটারি নিয়ে এ ভাবে অভিযোগ তুলে তাঁর ‘চরিত্রহনন’ করা হচ্ছে বলে এ দিন বীরভূমে এসে পাল্টা অভিযোগ তোলেন রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। মাড়গ্রামের বিষ্ণুপুরের সভা থেকে তিনি বলেন, ‘‘বলছে লটারি পেল কেন? আরে ভাই লটারি পেল কেন, তোমায় খোঁজ নিতে হবে না! ভগবানকে বলো, আমার ভাগ্যটাকে কী করে করলে? আসলে, অনুব্রতের চরিত্রহনন করা হচ্ছে এই ভাবে!’’

সহ প্রতিবেদন: সুশান্ত বণিক

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Anubrata Mondal CBI lottery
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE