Advertisement
E-Paper

তৃণমূল ভবনে ফোন সিবিআইয়ের, জমি বিল নিয়ে পথে মমতা

পুরভোটের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথে নামার ঘোষণায় জমে উঠল শাসক-বিরোধীর দ্বৈরথ। আর সেই দ্বৈরথে নতুন মাত্রা জুড়ল দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সীর খোঁজ করে বৃহস্পতিবার তৃণমূল ভবনে সিবিআই আধিকারিকের ফোন। সারদা কেলেঙ্কারি এবং খাগড়াগড় কাণ্ডকে হাতিয়ার করে গত কয়েক দিন ধরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা তৃণমূল নেতৃত্বের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাচ্ছিল বিজেপি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৩৫
বাগডোগরার পথে মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার। — নিজস্ব চিত্র।

বাগডোগরার পথে মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার। — নিজস্ব চিত্র।

পুরভোটের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথে নামার ঘোষণায় জমে উঠল শাসক-বিরোধীর দ্বৈরথ। আর সেই দ্বৈরথে নতুন মাত্রা জুড়ল দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সীর খোঁজ করে বৃহস্পতিবার তৃণমূল ভবনে সিবিআই আধিকারিকের ফোন।

সারদা কেলেঙ্কারি এবং খাগড়াগড় কাণ্ডকে হাতিয়ার করে গত কয়েক দিন ধরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা তৃণমূল নেতৃত্বের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাচ্ছিল বিজেপি। খাগড়াগড় নিয়ে এনআইএ আদালতে চার্জশিট দেওয়ার পরের দিনই মমতা ও রাজ্য প্রশাসনের উদ্দেশে ১০ দফা প্রশ্নবাণ ছোড়েন পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহ। এই আক্রমণের পাল্টা হিসেবে এ দিন জমি বিল নিয়ে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে দলকে পথে নামার নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। আগামী বুধবার, ৮ এপ্রিল বিকেলে মৌলালি থেকে ধর্মতলার গাঁধীমূর্তির পাদদেশ পর্যন্ত যে মিছিল হবে, তার নেতৃত্বে থাকবেন খোদ মমতাই।

তৃণমূলের এই কর্মসূচির কথা সকাল থেকেই প্রচার হয়ে যায় সংবাদমাধ্যমে। দুপুর আড়াইটে নাগাদ সিবিআইয়ের এক আধিকারিক তৃণমূল ভবনে ফোন করে সুব্রত বক্সীর সঙ্গে কথা বলতে চান। এর আগে ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তৃণমূলের যাবতীয় আয়ব্যয়, মমতার ছবি বিক্রি করে প্রাপ্ত টাকার হিসেব ইত্যাদি চেয়ে দলের প্রাক্তন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়কে নোটিস পাঠিয়েছিল সিবিআই। সংস্থার সূত্রে জানা গিয়েছিল, তৃণমূল ভবনে নোটিস পাঠানোর পাশাপাশি মুকুলের ব্যক্তিগত ই-মেলেও পাঠানো হয় ওই নোটিস। মুকুল ঘনিষ্ঠ মহলে ওই নোটিস পাওয়ার কথা স্বীকার করলেও তৃণমূলের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা কোনও নোটিস পায়নি।

ফের সেই নোটিস পাঠানোর জন্যই এ দিন তৃণমূল ভবনে ফোন করা হয়েছিল বলে সিবিআই সূত্রের খবর। ল্যান্ড লাইনে ফোনটি করেছিলেন, সারদা মামলার তদন্তকারী অফিসার ফণিভূষণ করন। তৃণমূল ভবনে যিনি ফোন ধরেছিলেন, তিনি জানান, সুব্রত বক্সী সেখানে নেই। তাঁর ই-মেল আইডি জানতে চাওয়া হলে ওই ব্যক্তি কোনও জবাব না দিয়ে ফোন রেখে দেন বলে সিবিআই সূত্রের দাবি।

এর পর বিকেলে মমতার পথে নামার কর্মসূচি আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন,‘‘যখনই কোনও নির্বাচন আসে, তখনই কোনও না কোনও অজুহাতে আমাদের বিব্রত করার, খোঁচা দেওয়ার চেষ্টা হয়। সিবিআই-কে কাজে লাগানোর এই পুরনো ছক আমরা জানি। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন, দলের এক শীর্ষ পদাধিকারীকে ফোন করার আগে সিবিআই নিয়মমাফিক লিখিত ভাবে নোটিস দিয়ে তারা কী জানতে চায়, জানায়নি কেন? আমাদের দাবি, দলের তহবিল বা আর্থিক বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে এর পর থেকে সিবিআই যেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে। যা বলার, তা তিনিই বলবেন।’’

ঘনিষ্ঠ মহলে তৃণমূল নেত্রী এবং দলের নেতাদের অনেকেরই অভিমত, সুব্রতবাবু অল্প দিন হল দলের সবর্ভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়েছেন। তার আগে দলের আর্থিক বিষয় দেখতেন মুকুল রায়। তা হলে সিবিআই কেন সুব্রতবাবুকে ফোন করছে? এই প্রশ্ন তুলে দল গোটা বিষয়টি মুকুলের কোর্টে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করলেও মুকুল ইতিমধ্যেই চিঠি দিয়ে সিবিআই-কে জানিয়েছেন যে,

তিনি আর কোনও দলীয় পদে নেই। দলের আয়ব্যয়ের হিসেব সংক্রান্ত নথিও তাঁর কাছে নেই, রয়েছে তৃণমূল ভবনে। ফলে সিবিআইয়ের নির্দেশ পালন করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়।

এ দিনের ঘটনা নিয়ে মুকুলের প্রতিক্রিয়া অবশ্য রাত পর্যন্ত জানা যায়নি। তিনি ফোন ধরেননি, এসএমএসেরও জবাব দেননি। অন্য দিকে, মেদিনীপুরে কর্মিসভা করতে যাওয়া সুব্রত বক্সী খড়্গপুরে বলেন, ‘‘সিবিআইয়ের ফোন নিয়ে এখানে আমি কিছু বলব না। যা বলার কলকাতায় ফিরে সাংবাদিক বৈঠক করে বলব।’’ তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, সুব্রত এখন ভোটের কাজে ব্যস্ত। তাঁর অন্যান্য সাংঠনিক কাজও রয়েছে। ফলে কেউ ডাকলেই যে তিনি দৌড়ে যাবেন, এমনটা মনে করার কোনও কারণ নেই। বস্তুত, বিষয়টিকে রাজনৈতিক ভাবেই মোকাবিলা করতে চায় দল।

সিবিআইয়ের পাশাপাশি বিজেপির আক্রমণের মোকাবিলাতেও তৈরি হচ্ছে তৃণমূল। পুরভোটের মুখে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দেওয়ার জেরে মিইয়ে পড়া দলকে চাঙ্গা করতে খাগড়াগড় কাণ্ড নিয়ে সম্প্রতি সরব হয়েছেন বিজেপি নেতা সিদ্ধার্থনাথ। যদিও সেই ভোকাল টনিকে জেলায় জেলায় সাংগঠনিক দুর্বলতা কতটা চাপা দেওয়া যাবে, তা নিয়ে দলের অন্দরেই সংশয় রয়েছে। মমতা অবশ্য কোনও ঝুঁকি না নিয়ে দলকে পথে নামার নির্দেশ দিয়েছেন। অস্ত্র জমি বিল। যা নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই সরব কেন্দ্রের বিরোধী দলগুলি। সংসদে এই বিলের বিরোধিতা করেছেন তৃণমূল সাংসদরা। সংসদ ভবনের বাইরেও চলেছে অবস্থান, ধর্না। এ বার রাজ্যেও জমি বিল নিয়ে আন্দোলন করে ভোটের মুখে দলের কর্মী-সমর্থকদের মনোবল বাড়াতে চাইছেন তৃণমূল নেত্রী। এ দিন তৃণমূল ভবনে মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে পার্থবাবু জানান, ৮ তারিখ কলকাতায় যখন ধিক্কার মিছিল হবে, তখন রাজ্যের সব জেলার ব্লকে ব্লকে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবেন তৃণমূল কর্মীরা।

বিরোধীরা অবশ্য অভিযোগ করছেন, সারদা তদন্তে সিবিআই তৃণমূলের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাওয়ায় ভয় পেয়েই পথে নামছেন মমতা। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র এ দিন বলেন, ‘‘উনি (মমতা) নাকি বলেছেন, ওঁর কাছ থেকেই যেন সব হিসেব চাওয়া হয়। বোঝা যাচ্ছে উনি সব হিসেব রাখেন। তা হলে মুখ্যমন্ত্রীর উচিত সিবিআই ডাকার আগে নিজেই গিয়ে ছবি বিক্রির টাকা সমেত সব হিসেব দিয়ে দেওয়া।’’ আর কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নানের প্রতিক্রিয়া, ‘‘মমতার অত ক্ষুব্ধ হওয়ার কী আছে? সিবিআই তো নিজের মতো করে তদন্ত করবে। অপরাধীর নির্দেশ মতো করবে না! আসলে মুখ্যমন্ত্রী ভয় পেয়েছেন। আতঙ্কে দিশাহারা হয়ে এমন হুঙ্কার ছাড়ছেন।’’

বিষয়টি নিয়ে তৃণমূল বাড়াবাড়ি করছে বলে দাবি করে বিজেপি নেতা তথাগত রায় বলেন, ‘‘সিবিআই তদন্ত করছে। সুব্রত বক্সীকে যদি তাদের দরকার হয় তা হলে তাঁর খোঁজ করতেই পারে। সুব্রতবাবুর উচিত, সিবিআইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা।’’

TMC CBI protest-programme Mukul Roy Mamata Banerjee BJP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy