E-Paper

সুবীরেশকে বিঁধতে তদন্তকারীদের অস্ত্র আধিকারিকই

সিবিআইয়ের দাবি, এসএসসি দুর্নীতির মূল চক্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে সাহায্য করেছিলেন সুবীরেশ ভট্টাচার্য, অশোককুমার সাহার মতো পদাধিকারীরা।

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২৫ ১০:৩১
সুবীরেশ ভট্টাচার্য।

সুবীরেশ ভট্টাচার্য। —ফাইল চিত্র।

স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) শিক্ষাকর্মী নিয়োগে পদস্থ অফিসারদের ‘কম্পিউটার স্ক্যানড’ স্বাক্ষর ব্যবহার করে তৎকালীন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য অযোগ্যদের চাকরির ব্যবস্থা করেছিলেন বলে আদালতে দাবি করেছে সিবিআই। তদন্তকারীদের এ-ও দাবি, ওই কারচুপিতে অন্যতম মদতদাতা ছিলেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর ব্যক্তিগত সচিব প্রবীর বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, এসএসসি-র এক মহিলা আধিকারিককে সাক্ষী হিসেবে নির্বাচন করেছে সিবিআই। তাঁর লিখিত বয়ান কোর্টে পেশ করে নিয়োগ দুর্নীতির ‘নীল নকশা’ কোর্টে তুলে ধরা হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রের দাবি। সিবিআইয়ের একটি সূত্রের দাবি, এসএসসি-র পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান, হুগলি এবং বীরভূম জেলার নিয়োগের দায়িত্বে ছিলেন ওই মহিলা অফিসার।

সিবিআই সূত্রের দাবি, ওই মহিলা অফিসার তাঁর লিখিত বয়ানে জানিয়েছেন যে, একাধিক বার নিজের ঘরে ডেকে নিয়ে ‘কম্পিউটার স্ক্যান’ করা স্বাক্ষরের নমুনা জমা দেওয়ার জন্য তাঁকে চাপ দিয়েছিলেন সুবীরেশ। তবে একাধিক বার চাপ দেওয়া সত্ত্বেও ওই মহিলা অফিসার স্বাক্ষরের নমুনা জমা দেননি। তখন এসএসসি-র বোর্ড মিটিং ডেকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এবং তার পরেই ওই মহিলা অফিসার স্বাক্ষরের নমুনা জমা দিতে বাধ্য হয়েছিলেন বলে জানা গিয়েছে। তদন্তকারীরা দাবি করেছেন যে, ২০১৮ সালের পর থেকে শি‌ক্ষাকর্মী নিয়োগে অযোগ্যদের চাকরিতে ঢোকানোর পরিকল্পনা শুরু হয়েছিল। তখন থেকেই এই কাজ শুরু হয়েছিল।

সিবিআই সূত্রের দাবি, ওই মহিলা সাক্ষী দাবি করেছেন যে, তিনি স্বাক্ষর জমা দেওয়ার পরে অযোগ্যদের নিয়োগপত্র তৈরি করা হয় এবং তাঁদের পূর্ব বর্ধমান, হুগলি, বীরভূমের বিভিন্ন স্কুলে নিয়োগ করা হয়। নিয়োগে ওই মহিলা অফিসারের সই থাকলেও তিনি এ ব্যাপারে কিছুই জানতেন না। ওই মহিলা অফিসার এ-ও দাবি করেছেন যে, ২০১৮ সালের শেষে ওই জেলাগুলির বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষিকারা তাঁকে ফোন করে জানাতে থাকেন যে, স্কুলে শিক্ষাকর্মীর কোনও শূন্য পদ নেই। নিয়োগের জন্য আবেদনও (রিকুইজ়িশন) জমা দেওয়া হয়নি। অথচ শিক্ষাকর্মীরা স্কুলে যোগ দিতে আসছেন এবং তাঁদের নিয়োগপত্রে ওই মহিলা অফিসারের স্বাক্ষর আছে।

সিবিআই সূত্রের দাবি, বিষয়টি প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ব্যক্তিগত সচিব প্রবীর বন্দ্যোপাধ্যায়কেও জানিয়েছিলেন বলে ওই মহিলা অফিসার দাবি করেছেন। এমনকি, তিনি নাকতলায় পার্থের বাড়িতেও গিয়েছিলেন। কিন্তু ঘণ্টা তিনেক অপেক্ষা করলেও মন্ত্রী দেখা করেননি।

লিখিত বয়ানে ওই মহিলা অফিসার আরও দাবি করেছেন যে, শিক্ষক এবং শি‌ক্ষাকর্মী নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে তৎকালীন শিক্ষাসচিব অবগত ছিলেন। মহিলা অফিসার তাঁকেও বিষয়টি জানিয়েছিলেন কিন্তু প্রতিকার হয়নি। ২০১৯ সালে ওই মহিলা অফিসারকে আঞ্চলিক নিয়োগকর্তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

সিবিআইয়ের দাবি, এসএসসি দুর্নীতির মূল চক্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং তা‌ঁকে সাহায্য করেছিলেন সুবীরেশ ভট্টাচার্য, অশোককুমার সাহার মতো পদাধিকারীরা। এই গোটা বিষয়টিকে ‘সংগঠিত অপরাধচক্র’ বলেও দাবি তদন্তকারীদের। তাঁরা বলছেন, শিক্ষাকর্মী নিয়োগে মাথাপিছু ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকা লেনদেন হয়েছিল। সিবিআইয়ের এক কর্তার বক্তব্য, “বিচার প্রক্রিয়ায় ধাপে ধাপে এই সংক্রান্ত সব নথি পেশ করা হবে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

SSC WBSSC

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy