Advertisement
E-Paper

নয়াদিল্লির সরাসরি নিয়ন্ত্রণেই সারদা-নারদ তদন্ত, আস্থানার বার্তায় জল্পনা

সিবিআই সূত্রে খবর, বৈঠক শুরুর প্রায় আধ ঘণ্টা ঘরোয়া কোন্দল সামলাতেই কেটে যায় সিবিআই কর্তার। সৌজন্যে নারদ মামলা। সিবিআইয়ের দুর্নীতি দমন শাখার এসপি নারদ মামলার তদন্তকারী অফিসার রঞ্জিত কুমারের কাজকর্ম নিয়ে রীতিমতো অনাস্থা প্রকাশ করেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৮ ১৯:২৬
নিজাম প্যালেসের বৈঠক সেরে বেরোচ্ছেন আর কে আস্থানা। —নিজস্ব চিত্র

নিজাম প্যালেসের বৈঠক সেরে বেরোচ্ছেন আর কে আস্থানা। —নিজস্ব চিত্র

সিবিআইয়ের দু’নম্বর কর্তা কলকাতায় আসছেন। সারদা-নারদ-রোজভ্যালি নিয়ে বৈঠক করবেন। কী বলবেন তিনি? কোনদিকে মোড় ঘুরবে এই মামলাগুলির গতিপ্রকৃতি? এ সব নিয়ে জল্পনা ছিল অনেক।

বুধবার নিজাম প্যালেসে সেই বৈঠক হল। কিন্তু জল্পনা শেষ হওয়ার বদলে নয়া জল্পনা তৈরি করেই শহর ছাড়লেন সিবিআইয়ের স্পেশ্যাল ডিরেক্টর রাকেশ আস্থানা।সূত্রের খবর, শহর ছাড়ার আগে তিনটি বিষয় স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি। এক, সারদা,নারদ বা রোজভ্যালি এখনই হিমঘরে পাঠানোর কোনও পরিকল্পনা নেই দিল্লির। দুই, এই মামলাগুলির যা যা তদন্ত এখনও বাকি, সেগুলি দ্রুততার সঙ্গে এগোতে হবে। তিন, তদন্তের সমস্ত অগ্রগতির উপর এবার থেকে সরাসরি নজর রাখবে দিল্লি।

এ দিন সকালে সাড়ে দশটা বাজার মিনিট চারেক আগেই নিজাম প্যালেসে পৌঁছন তিনি। তাঁর আগেই পৌঁছে গিয়েছিলেন যুগ্ম অধিকর্তা পঙ্কজ শ্রীবাস্তব, ডিআইজি অভয় সিংহ, স্পেশ্যাল ক্রাইম ব্রাঞ্চ ও অ্যান্টি করাপশন শাখার সুপারিন্টেন্ডেন্টরা। সঙ্গে সারদা,রোজভ্যালি ও নারদ মামলারঅফিসার তথাগত বর্ধন, ব্রতীন ঘোষাল ও রঞ্জিত কুমার।

আরও পড়ুন: আজ আরও বৈঠক আস্থানার, গর্জন না বর্ষণ

সিবিআই সূত্রে খবর, বৈঠক শুরুর প্রায় আধ ঘণ্টা ঘরোয়া কোন্দল সামলাতেই কেটে যায় সিবিআই কর্তার। সৌজন্যে নারদ মামলা। সিবিআইয়ের দুর্নীতি দমন শাখার এসপি নারদ মামলার তদন্তকারী অফিসার রঞ্জিত কুমারের কাজকর্ম নিয়ে রীতিমতো অনাস্থা প্রকাশ করেন। তদন্তকারী অফিসার নাকি ঊর্ধ্বতন আধিকারিকদের তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে কিছু‌ই জানান না। নিজের ইচ্ছেমতো সিদ্ধান্ত নেন। ঊর্ধ্বতনদের পরামর্শও নাকি নেন না। আর তাই এই মামলায় বাড়ছে জটিলতা।

এই অনাস্থার প্রেক্ষাপট অবশ্য তৈরি হয়েছিল এক মাস আগেই। যখন নারদ মামলার তদন্তকারী অফিসার স্পেশ্যাল ডিরেক্টরকে চিঠি লিখে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। তিনি অভিযোগ তুলেছিলেন, নারদ মামলার তদন্ত করতে গিয়ে পদে পদে নিজের সংগঠনেরই একটি অংশের কাছ থেকে অসহযোগিতা পাচ্ছেন। সূত্রের খবর, এসপি অনাস্থা প্রকাশ করার পাশাপাশি তদন্তকারী অফিসারের দায়িত্ব থেকে রঞ্জিত কুমারকে সরানোর তদ্বিরও করেন। কিন্তু, আস্থানা এ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত বা ইঙ্গিত এদিন দেননি। তিনি তদন্তকারী অফিসারের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন। সেই সময়তদন্তকারী অফিসার জোরের সঙ্গেই জানিয়েছেন যে, এখনও পর্যন্ত তদন্ত যতটা এগিয়েছে তা আদালতে পেশ করলে সিবিআইয়েরমুখ পুড়বে না। পাশাপাশি আর্জি জানান, আদালতে মামলার অগ্রগতি সংক্রান্ত রিপোর্ট পেশ করার পরই তিনি ফের কয়েকজন অভিযুক্ত রাজনীতিবিদকে জেরা করতে চান। সেক্ষেত্রে আস্থানার সাফ জবাব, মামলা এগিয়ে নিয়ে যেতে যা যা করা দরকার সেটাই করবেন তদন্তকারীরা।

আরও পড়ুন: নয়া বছরে রাজ্যে ডিএ ১৮%, ঘোষণা মমতার

সারদা নিয়ে আস্থানা পূর্বতন এবং বর্তমান তদন্তকারী অফিসার ফণীভূষণ করণ এবং তথাগত বর্ধনের সঙ্গে কথা বলেন। একইসঙ্গে রোজভ্যালি ও টাওয়ার গ্রুপের বিরুদ্ধে মামলার প্রসঙ্গও ওঠে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই একটি সমস্যা উঠে আসে তদন্তকারীদের কথায়। সবক’টি মামলাতেই বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রমাণ রয়ে গিয়েছে কলকাতা বা রাজ্য পুলিশের হেফাজতে। বার বার চেয়েও যা পাচ্ছে না সিবিআই। আর সেই প্রসঙ্গেই আসে সারদা নিয়ে রাজ্য পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)-এর কথা। সিটের অফিসারদের ভূমিকা খতিয়ে না দেখলে যে এই মামলাগুলি এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় তা পরিষ্কার করে দেন তদন্তকারীরা। সেই ফাইলও দেখেন আস্থানা। মঙ্গলবারই তিনি রাজ্য পুলিশের কাছে তথ্য চাওয়া নিয়ে সংঘাতের কথাশুনেছিলেন। সেই প্রসঙ্গে তাঁর দাওয়াই—আরও কুশলী হতে হবে।

এক সিবিআই আধিকারিকের দাবি, তদন্তের প্রয়োজনে রাজ্য পুলিশের বর্তমান বা অবসরপ্রাপ্ত কোনও শীর্ষ কর্তাকে জেরার করার সবুজ সঙ্কেত তিনি এদিনই দিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু পদ্ধতি বদলের কথা বলেছেন। সংস্থার আইন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে এগোতে বলা হয়েছে। এক আধিকারিক বলেন,“আস্থানা সরাসরি রাজ্যের সঙ্গে সংঘাত এড়াতে মাঝখানে আদালতকে রাখতে বলেছেন। অর্থাৎ প্রয়োজনে আদালতের নির্দেশকে হাতিয়ার করে জেরার জন্য ডাকার কথা বলেছেন।”তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, এরকম বেশ কয়েকজন আমলা রয়েছেন যাঁদের জেরার জন্য ডাকা হলেও তাঁরা আসেননি। সেক্ষেত্রে আদালতকে সঙ্গে নিয়েই এগনোর নির্দেশ আস্থানার।তদন্তকারীরা কর্মী সঙ্কটের প্রসঙ্গ তুললে, সঙ্গে সঙ্গে সেই সমস্যা মেটাতে১৪ জন অফিসার নিয়োগের সবুজ সঙ্কেত এদিনই দিয়ে গিয়েছেন তিনি।

সিবিআইতে দু’দশক কাজ করা এক অফিসারের কথায়,“স্পেশ্যাল ডিরেক্টর তাঁর বডি ল্যাঙ্গুয়েজে এটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন এবার থেকে এই মামলাগুলি সরাসরি দিল্লি থেকেই নিয়ন্ত্রিত হবে।” এই বার্তা সিবিআইয়ের আধিকারিকদের কাছে যথেষ্ট অর্থবহ।আর তাই যাওয়ার আগে নতুন জল্পনা উস্কে দিয়ে গেলেন আস্থানা।

Rakesh Asthana CBI Saradha Narada sting operation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy