—ফাইল চিত্র।
সিবিআইয়ের পথে এ বার নবান্নও!
মুখ্যসচিব মলয় দে, স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ডিজি বীরেন্দ্র সোমবার তিনটি আলাদা নোটিস পাঠিয়ে রাজীব কুমারকে সিবিআইয়ের সামনে হাজিরা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। তিন দিন আগে সিবিআই-ও একই নোটিস রাজীবের পার্ক স্ট্রিটের বাড়িতে দিয়ে এসেছিল। তিনি না-আসায় রবিবার ও সোমবার দু’দফায় সিবিআইয়ের দল নবান্নে গিয়ে রাজীবকে হাজির করাতে বলে মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব এবং ডিজি-কে চিঠি দিয়ে এসেছিল। সিবিআইয়ের সঙ্গে ‘সহযোগিতার’ বার্তা দিতে এ দিনই বেলা ২টোর মধ্যে সিআইডি প্রধানের বাড়িতে নোটিস পাঠিয়ে দিয়েছেন তিন প্রশাসনিক কর্তা।
বর্তমান পরিস্থিতিতে যে ‘অন্য রকম’ কিছু করার অবকাশ নেই, তা-ও নবান্নের সর্বোচ্চ মহলে জানিয়ে দেওয়া হয় বলে জানা গিয়েছে। তিন শীর্ষকর্তার নোটিসের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করে এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘এতে স্পষ্ট হচ্ছে সরকার আর রাজীবের সঙ্গে নেই। তাঁর কৃতকর্মের দায় একান্তই ব্যক্তিগত। সরকার তো তাঁকে ধরে নিয়ে যেতে পারবে না। তাই নোটিস দেওয়া হয়েছে। সিবিআই-কে তা জানিয়েও দেওয়া হয়েছে।’’
সিবিআইয়ের চিঠি নিয়ে সোমবার নবান্নে যান সুনীল কুমার (বাঁ-দিকে) এবং সন্তোষ সিংহ। —নিজস্ব চিত্র।
শেষ পর্যন্ত কেন রাজীবের পাশ থেকে সরে আসতে বাধ্য হল রাজ্য?
নবান্নের খবর, সিবিআইয়ের চিঠির সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের সেই আদেশনামার অংশ বিশেষ জুড়ে দেওয়া হয়েছিল, যেখানে তদন্তের কাজে যখন প্রয়োজন হবে তখনই রাজীবকে সিবিআইয়ের কাছে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সিবিআইয়ের অনুরোধ রাজ্য না মানলে আদালতেরই অবমাননা হবে বলে মনে করেছেন কর্তাদের একাংশ। এক কর্তার কথায়, ‘‘মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, ডিজি-র বিরুদ্ধে এমনিতেই সুপ্রিম কোর্টে সারদা তদন্তে অসহযোগিতার একটি অবমাননার মামলা ঝুলে রয়েছে। যদি এ বারও সিবিআইয়ের অনুরোধ না মানা হত, তা হলে অবমাননার ‘তত্ত্ব’ আরও পোক্ত হত।’’
বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের মাধ্যমে সিবিআই-কে ডিজি-র চিঠি। নিজস্ব চিত্র
সেই পরিস্থিতি এড়াতেই সরকার ‘আইনি পথ’-এ থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিবিআই আরও একটি চিঠিতে ডিজির কাছে সিআইডি কর্তার ছুটির বিস্তারিত জানতে চেয়েছিল। কিন্তু তাতে নির্দিষ্ট সময়ের উল্লেখ না থাকায় এ দিন তার জবাব দেওয়া হয়নি। নবান্নের একটি সূত্রের দাবি, রাজীবের আবেদনে ছুটির সময় কোথায় থাকবেন তা উল্লেখ নেই। সাধারণত ছুটির সময় অন্য কোথাও গেলে তা জানিয়ে যেতে হয়। সেই হিসেবে পুলিশ ডিরেক্টরেটের ধারণা, রাজীব কলকাতাতেই আছেন। সেই কারণে তাঁর নোটিসও সরকারি বাড়িতে পাঠানো হয়েছে।
তবে তাঁকে সোমবারেও খুঁজে পায়নি সিবিআই। যে দু’টি মোবাইল নম্বর কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন এই কমিশনার ব্যবহার করেন, সোমবারেও তার একটি ‘আনঅ্যাভেলেবল’ এবং একটি ‘সুইচড অফ’ বলেছে। কেউ বলছেন, তিনি কলকাতায় কোনও গোপন ডেরায় রয়েছেন। কারও মতে, রাজ্যের বাইরে।
আজ, মঙ্গলবার বারাসতে সিবিআই-এর বিশেষ আদালতে রাজীব কুমারের হয়ে আগাম জামিনের আবেদন করার কথা। সিবিআই তার বিরোধিতা করবে বলে জানা গিয়েছে। সোমবার সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে এ নিয়ে সিবিআইয়ের দফতরে যুগ্ম অধিকর্তা পঙ্কজ শ্রীবাস্তব অফিসারদের সঙ্গে বৈঠক করেন বলে সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে।
এ দিকে, নিজেদের নিরাপত্তার জন্য আরও বেশি কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে এনেছেন এ রাজ্যের সিবিআই কর্তারা। যুগ্ম অধিকর্তা পঙ্কজ শ্রীবাস্তবের বাড়ির সামনে পাহারায় এ দিন আরও বেশি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। সিবিআইয়ের ডিএসপি পদের অফিসারদের সঙ্গেও থাকতে চলেছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান। মনে করা হচ্ছে, আগামী দিনে রাজীবকে ডেকে জেরা এবং গ্রেফতার নিয়ে আবার সংঘাতের আশঙ্কা করছেন সিবিআই কর্তারাই। সেই সংঘাতের বাতাবরণ ইতিমধ্যেই তৈরি হয়ে গিয়েছে। যদিও রাজ্য পুলিশেরর এক শীর্ষ কর্তার বক্তব্য, ‘‘সিবিআই নিজের কাজ করুক। কেউ তাদের বাধা দেবে না।।’’
তবে রবিবার দুই সিবিআই অফিসার নবান্নে রাজ্যের তিন শীর্ষ কর্তার নামে চিঠি দিতে গেলে নবান্নের গেটে থাকা পুলিশ তাঁদের ভিডিয়ো তুলতে শুরু করেন। অভিযোগ, ভিডিয়ো তুলতে বারণ করলে তাঁরা শোনেননি। সিবিআইয়ের অভিযোগ, স্রেফ চাপে রাখার জন্য, ওই ভিডিয়ো তোলা হয়েছে। বিষয়টি অবমাননাকর বলেও মনে করছে তারা। এই বিষয়ে একটি রিপোর্ট সোমবারেই দিল্লিতে সদর দফতরে পাঠানো হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy