জিজ্ঞাসাবাদের শেষে বৃহস্পতিবার রাতেই রাজ্যের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীকে সিবিআই জানিয়েছিল, প্রয়োজনে কয়েক ঘণ্টার নোটিসে তাঁকে আবার তলব করা হবে।
এর পরে শুক্রবার সাত সকালেই প্রতিমন্ত্রীকে ফের সিবিআই দফতরে হাজির হওয়ার জন্য ই-মেল করে নোটিস পাঠানো হয়। বেলা ১১টা নাগাদ এমএলএ হস্টেল থেকে সিবিআই দফতরে হাজির হন তিনি। এর পর থেকে ‘ম্যারাথন’ জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়। সেই জিজ্ঞাসাবাদের শেষে রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ বেরিয়ে যান পরেশবাবু। আজ, শনিবার প্রয়োজনে রাজ্যের শিক্ষাসচিব মণীশ জৈনকেও ডেকে পাঠানো হতে পারে বলে সিবিআই সূত্রের খবর।
তদন্তকারীদের দাবি, মন্ত্রী-কন্যা অঙ্কিতার বেআইনি নিয়োগ হিমশৈলের চুড়া মাত্র। প্রভাবশালী যোগে বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বেআইনি ভাবে এসএসসি-র মারফত প্রচুর নিয়োগ করা হয়েছে। পরেশবাবুর মেয়ের বেআইনি নিয়োগের তদন্ত সেই বৃহত্তর ষড়যন্ত্রেরই পথ দেখাচ্ছে। প্রাক্তন বিচারপতি রঞ্জিতকুমার বাগের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী, তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী (বর্তমানে শিল্পমন্ত্রী) পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সুপারিশে তৈরি উপদেষ্টা কমিটি-ই বেআইনি।
গত মঙ্গলবার প্রাথমিক ভাবে পার্থবাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে পার্থবাবুকে ফের তলব করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে পার্থবাবু ও পরেশবাবুকে মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সম্ভাবনা রয়েছে বলে সিবিআই সূত্রের খবর।
তদন্তকারী অফিসারদের কথায়, পরেশবাবুর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারীর বেআইনি নিয়োগ প্রাক্তন উপদেষ্টা-সহ পাঁচ সদস্য মারফত হয়েছিল বলে আদালতের নির্দেশে উল্লেখ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার এসএসসি-র প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিংহ-সহ ওই পাঁচ সদস্যকেও তলব করেছিল সিবিআই। শুক্রবারেও তাঁদের ডেকে পাঠানো হয়েছিল। ওই পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বেআইনি নিয়োগে তাঁদের জড়িত থাকা একরকম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে দাবি করছেন তদন্তকারীরা।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা প্রায় সাড়ে সাতটা নাগাদ পরেশবাবু সিবিআই দফতরে হাজির হন। ওই সময়ে শান্তিপ্রসাদ-সহ পাঁচ সদস্য হাজির ছিলেন। কিন্তু রাত হয়ে যাওয়ায় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পরে পরেশবাবু ও ওই পাঁচজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
সিবিআই সূত্রের খবর, শুক্রবার সকাল থেকে দফায় দফায় পরেশবাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। প্রাক্তন উপদেষ্টা-সহ পাঁচজনের বয়ান পরেশবাবুর সামনে তুলে ধরা হয়। তদন্তকারীদের দাবি, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তিনি বিশেষ কিছু জানতেন না বলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। পরেশবাবুকে তাঁর মেয়ের বেআইনি নিয়োগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কার্যত নিশ্চুপ ছিলেন বলেও দাবি করেছেন তদন্তকারীরা।
আদালতের নির্দেশে পরেশবাবু ও তাঁর মেয়ে অঙ্কিতার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। সিবিআইয়ের দাবি, এখন শুধু পরেশবাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও পরবর্তী পর্যায়ে অঙ্কিতাকেও তলব করা হবে।
সিবিআইয়ের এক কর্তা বলেন, ‘‘প্রতিমন্ত্রীর মেয়ের বেআইনি নিয়োগের সমস্ত তথ্যের বিষয়ে খোঁজ করা হচ্ছে। কী ভাবে তিনি তাঁর মেয়েকে বেআইনি ভাবে নিয়োগ করেছিলেন, সেই বিষয়ে সমস্ত তথ্য হাতে এসেছে। এসএসসি দফতরের তথ্যকক্ষ থেকে ওইসব বেআইনি নিয়োগের নথি উদ্ধার হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। অধিকাংশ নথি বৈদ্যুতিন তথ্যপ্রমাণ (ডিজিটাল এভিডেন্স) হিসেবে রয়েছে। তা মুছে ফেলার চেষ্টা করা হলেও ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের মারফত তা উদ্ধার করা যাবে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। প্রাথমিক ভাবে সিবিআইয়ের নিজস্ব ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা কাজ শুরু করেছেন। পরবর্তী পর্যায়ে ওই সব নথি ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতেও পাঠানো হতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy