Advertisement
০৪ মে ২০২৪
WB Panchayat Election 2023

‘পাওয়ার প্লে’ পর্যায়ে রাজ্য বিজেপির ভূমিকায় সন্তুষ্ট কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব, এখন প্রস্তুতি ‘স্লগ ওভার’ সামলানোর

পঞ্চায়েতের মনোনয়ন পর্বের ফলাফলে খুশি বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এ বার চেষ্টা মনোনয়ন টিকিয়ে রাখার। তার পর ভোটদান পর্ব, গণনার প্রস্তুতি। এই ভোট আসলে বাংলায় লোকসভা নির্বাচনের মহড়া।

সুকান্ত মজুমদার (বাঁ দিকে), শুভেন্দু অধিকারী (ডান দিকে)।

সুকান্ত মজুমদার (বাঁ দিকে), শুভেন্দু অধিকারী (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০২৩ ০৯:০৬
Share: Save:

পঞ্চায়েত নির্বাচনকে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সঙ্গে তুলনা করলে মনোনয়ন পর্ব ছিল ‘পাওয়ার প্লে’। আর তাতে যে-‘সাফল্য’ রাজ্য বিজেপি দেখিয়েছে তাতে খুশি দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কিন্তু চিন্তা রয়ে গিয়েছে এর পরের ওভারগুলিতে উইকেট টিকিয়ে রাখা। স্লগ ওভার পর্যন্ত ম্যাচ টেনে নিয়ে যাওয়া।

বড় জয়ের আশা একেবারেই নেই বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের। কিন্তু, এ বারের পঞ্চায়েত ভোট আসলে বাংলার ক্ষেত্রে লোকসভা নির্বাচনের সেমিফাইনাল। গ্রাম বাংলায় শক্তি দেখাতে পারলে তা ২০২৪ সালের বড় নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত প্রস্তুতি পর্ব হয়ে থাকবে। শেষ পর্যন্ত কেমন ভাবে শেষ করা যাবে এই গোটা ভোটপর্ব, সেটিই এখন গেরুয়া শিবিরের চিন্তা। গত লোকসভা বা বিধানসভা নির্বাচনে দেখা গিয়েছে, বিজেপির ঝুলিতে শহরাঞ্চলের তুলনায় ভোট বেশি এসেছে গ্রামাঞ্চল থেকে। হিসাব বলছে, বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যের গ্রামীণ এলাকায় ৩৮.৩ শতাংশ ভোট পেয়েছিল গেরুয়া শিবির। যে ৭৫টি আসন বিজেপি জিতেছিল তার ৩৬টি পুরোপুরি গ্রামীণ এলাকা এবং ৩৬টি আধা গ্রাম, আধা শহর।

এ বারের মনোনয়ন পর্বে বিজেপি যতটা আশা করেছিল তেমনটাই সাফল্য পেয়েছে। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলা পরিষদের ২০৪, পঞ্চায়েত সমিতির ৩,০৯৮ এবং গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৬,৮৬১ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই একক ভাবে জিতে গিয়েছিল তৃণমূল। এ বার ততটা হয়নি। সাংগঠনিক দুর্বলতা রয়েছে এমন জায়গায় বিজেপি প্রার্থী দিতে না পারলেও, মনোনয়নের হার গত বারের তুলনায় অনেকটা বেশি। এ বার পঞ্চায়েত নির্বাচনে তিনটি স্তর মিলিয়ে মোট আসন ৭৩,৮৮৭। তার মধ্যে বিজেপির মনোনয়ন জমা পড়েছে ৫৬,৩২১টি। অর্থাৎ, ৭৬.২২ শতাংশে।

২০১৮ সালে বিজেপির মনোনয়ন জমা পড়ছিল ৩৪,৫০৭টি। কিন্তু পরে অনেক প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। বিজেপি দাবি করেছিল, শাসক তৃণমূলের চাপেই ওই প্রত্যাহার। এ বারেও তেমনটা হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে বিজেপির। ইতিমধ্যেই শাসকদলের পক্ষ থেকে প্রার্থীদের চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ শুরু হয়ে গিয়েছে। বিজেপি নেতারা বলছেন, আসলে কত প্রার্থী দেওয়া গেল তা বোঝা যাবে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনের পরে।

বিজেপি যে এই মনোনয়নের হারে খুশি রাজ্য নেতারা তা অবশ্য কেউ প্রকাশ্যে বলছেন না। রাজ্য দলের মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘যা মনোনয়ন আমরা দিতে পেরেছি তাতে সন্তুষ্ট নই। যাঁরা সংগঠন গড়েন তাঁদের সন্তুষ্টি এত সহজে আসে না। ব্লকের পর ব্লকে যেখানে বিজেপি একচেটিয়া জিততে পারত সেখানে মনোনয়ন জমা দেওয়া যায়নি।’’ কিন্তু বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা ছাড়া মনোনয়নে তো সে ভাবে গোলামালের কথা জানা যায়নি? শমীকের জবাব, ‘‘ভাঙড়কে সামনে রেখে, পিছন থেকে ব্লকের পর ব্লক বিরোধীশূন্য করে দিয়েছে তৃণমূল। অনেক জায়গায় গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতিতে আমরা মনোনয়ন জমা দিতে পারিনি। ফলে জেলা পরিষদ দখল সহজ হয়ে যাবে তৃণমূলের কাছে।’’

শমীক মুখে যা-ই বলুন, রাজ্য বিজেপির নেতারা আগে থেকে ঠিক করেছিলেন, যে ভাবেই হোক কমপক্ষে ৫০ হাজার আসনে প্রার্থী দিতে হবে। এখন যা পরিস্থিতি রয়েছে তাতে হিসাব করা হচ্ছে, কিছু প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহার হয়ে গেলেও কাঙ্খিত প্রার্থী সংখ্যা থেকে যাবে। বাকিদের নিয়েই লড়াই দেওয়া যাবে। বিজেপি নেতারা মনে করছেন, বিপুল জয় না মিললেও এই প্রার্থী সংখ্যা নিয়ে ম্যাচ ‘স্লগ ওভার’ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়া যাবে সম্মানজনক ভাবেই।

কিন্তু ‘স্লগ ওভার’ সামলানো যাবে কি? রাজ্য বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘এটাই এখন চিন্তা। কারণ, শাসক ওই সময়েও ‘পাওয়ার প্লে’ দেখাবে। তবে এ বার পরিস্থিতি অনেক আলাদা। আমাদের কর্মীরা প্রতিরোধ গড়তে মনস্থির করে ফেলেছেন।’’ গত বিধানসভা ভোটের আগে ও পরে নেতাদের ভূমিকা নিয়ে দু’টি বড় প্রশ্ন উঠেছিল। তার একটি বিষয় ছিল, গণনা পর্ব কী ভাবে সামলানো হবে তার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। অনেক জায়গাতেই মাঝপথে কর্মীরা গণনাকেন্দ্র ছেড়ে চলে যান। এ বার তাই প্রশিক্ষণের জন্য আলাদা কমিটি তৈরি করেছে রাজ্য বিজেপি। দুই প্রবীণ নেতা প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রথীন্দ্রনাথ বসুর নেতৃত্ব প্রশিক্ষণ-দল গঠন করা হয়েছে। ঠিক হয়েছে প্রতি জেলার জন্য ২০ জনকে প্রথমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। কী ভাবে ভোটের দিন এবং গণনার দিন কাজ করতে হবে তার প্রশিক্ষণ এর পরে জেলার নেতারা ব্লকে ব্লকে গিয়ে দেবেন। বিজেপি চাইছে, শেষ পর্যন্ত কোনও এজেন্ট যাতে গণনাকেন্দ্রের বাইরে চলে না-যান তা নিশ্চিত করা।

গত বিধানসভা নির্বাচন পর্বে আরও একটি অভিযোগের মুখোমুখি হন বিজেপি নেতারা। কর্মীরা আক্রান্ত হলে তা সামলাতে রাজ্যস্তরের অনেক নেতাই অকুস্থলে যাননি। এ বার রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার প্রথম থেকেই নির্দেশ দিয়েছিলেন, মনোনয়নের সময়ে সব নেতা, সাংসদ, বিধায়ককে রাস্তায় থাকতে হবে। বিডিও অফিসে যেতে হবে সবাইকে। তিনি নিজে গিয়েছেন তো বটেই, বাকিদেরও সেই ভাবে পাঠিয়েছেন। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী রাজ্য নির্বাচন কমিশন, কলকাতা হাই কোর্টে সময় দেওয়ার মাঝেও প্রার্থীদের সাহস জোগাতে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরেছেন। সাংসদ দিলীপ ঘোষ, লকেট চট্টোপাধ্যায়রাও মনোনয়নের সময়ে নিজের নিজের এলাকায় থেকেছেন। গেরুয়া শিবির সূত্রে খবর, গোটা নির্বাচন পর্ব তো বটেই, গণনার পরেও একই ভাবে নেতাদের পথে থাকার নির্দেশ এসেছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের থেকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE