E-Paper

সুকান্তই না নতুন মুখ, বিজেপি দোটানাতেই

কার্যত ১০ মাস পরেই পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন। টানা চতুর্থ বার জেতার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। অথচ প্রধান প্রতিপক্ষ দল এখনও ঠিক করে উঠতে পারছে না যে বর্তমান সভাপতি সুকান্তকেই নির্বাচন পর্যন্ত রেখে দেওয়া, না কি নতুন মুখ আনা ঠিক হবে।

অনমিত্র সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০২৫ ০৯:১৬
সুকান্ত মজুমদার।

সুকান্ত মজুমদার। —ফাইল চিত্র।

পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে পদে রাখা নিয়ে চরম দোটানায় কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্ব। এক পক্ষ যখন সভাপতি পরিবর্তনের পক্ষে,তখন অন্য পক্ষের যুক্তি, নতুন সভাপতি দায়িত্ব নিয়ে গুছিয়ে বসার আগেই নির্বাচন এসে পড়বে। সে ক্ষেত্রে কার্যত অপ্রস্তুত অবস্থায়নতুন সভাপতির নেতৃত্বে যুদ্ধে নামলে হার অনিবার্য।

কার্যত ১০ মাস পরেই পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন। টানা চতুর্থ বার জেতার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। অথচ প্রধান প্রতিপক্ষ দল এখনও ঠিক করে উঠতে পারছে না যে বর্তমান সভাপতি সুকান্তকেই নির্বাচন পর্যন্ত রেখে দেওয়া, না কি নতুন মুখ আনা ঠিক হবে। ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের পরে হঠাৎ দিলীপ ঘোষকে সরিয়ে দিয়ে রাজ্য বিজেপি সভাপতি করা হয়েছিল সুকান্তকে। সে সময়ে তিনি ছিলেন সাংসদ। ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে জিতে আসার পরে তাঁকে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী করে দল।

সাধারণত, বিজেপিতে এক ব্যক্তির একটিই পদ থাকে। উপরন্তু গত বছরের শেষ দিকে সুকান্তের প্রথম পর্বের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। তার পর থেকে তিনিই প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলানোর পাশাপাশি রাজ্য সভাপতি হিসেবে কাজ চালিয়ে আসছেন।

বিজেপির এক শীর্ষ কেন্দ্রীয় নেতার কথায়, ‘‘নীতিগত ভাবে সুকান্তকে সরিয়ে নতুন মুখের আসা উচিত। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে এখনও সাংগঠনিক পর্যায়ের নির্বাচন বাকি। উপরন্তু সুকান্ত গত প্রায় চার বছর ধরে কাজ করছেন। ফলে দলের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলি নিয়ে অবহিত। দলের অন্তর্লীন সমীকরণ নতুন সভাপতি ভাল করে বুঝে ওঠার আগেই নির্বাচন চলে আসবে। তাই দলের একটি অংশের মতে ভোট পর্যন্ত সুকান্তকে রেখে দেওয়া হোক।ভোটের পরে নতুন সভাপতি দলের দায়িত্ব নিন।’’

কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ওই অংশ সুকান্তের পিছনে দাঁড়ালেও, অন্য অংশের যুক্তি, পশ্চিমবঙ্গেমমতাকে ক্ষমতা থেকে সরাতেগেলে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপানো প্রয়োজন। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীসুকান্তের পক্ষে কোনও ভাবেই দু’টি দায়িত্ব একসঙ্গে সমান গুরুত্ব দিয়ে পালন করা সম্ভব নয়। মন্ত্রকের কাজের জন্য প্রায়শই কলকাতা-দিল্লিকরতে হয় সুকান্তকে। থাকতে হয় বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠানে। যেতে হয় অন্যান্য রাজ্যেও।

সুকান্তের ওই অনুপস্থিতির প্রভাব পড়ছে রাজ্যে নেতৃত্বের উপরে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মনে করছেন, তৃণমূল সরকারের ‘দুর্নীতি, স্বজনপোষণ, বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যর্থতা’র বিরুদ্ধে রাজ্য বিজেপির যে ঝাঁজ নিয়ে পথে নেমে আন্দোলন করা উচিত,সুযোগ্য নেতৃত্বের অভাবে তাতে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। সে কারণে দলের ওই অংশের মতে, এমন কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হোক, যাঁর প্রধান কাজ রাজ্যে মাটি কামড়ে পড়ে থেকে মমতা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনচালিয়ে যাওয়া।

কিন্তু অন্য পক্ষের প্রশ্ন, ভোটের মুখে রাজ্য সভাপতি পদে পরিবর্তন কি যুক্তিযুক্ত হবে? কারণ, সভাপতি পাল্টালে দলের বিভিন্ন কমিটিও বদলাতে বাধ্য। এতে দল আরও অগোছালো হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। যদিও পরিবর্তনকামী নেতাদের যুক্তি, দল চাইলে পরিবর্তন হতেই পারে। মহারাষ্ট্রে ভোটের মাত্র দু’মাস আগে বিজেপি সভাপতি পাল্টানো হয়েছিল। তা সত্ত্বেও ওই রাজ্যে জিতেছিল দল। পশ্চিমবঙ্গে তো সেখানে ১০ মাস সময় রয়েছে। এ দিকে সুকান্তের পরের সভাপতি হিসেবে দৌড়ে রয়েছে একাধিক নাম। আরএসএসের পছন্দ শমীক ভট্টাচার্য। দৌড়ে রয়েছেন অগ্নিমিত্রা পাল ও জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতোও। রাজ্য রাজনীতিতে জ্যোতির্ময়বর্তমান সভাপতি সুকান্ত-ঘনিষ্ঠবলেই পরিচিত।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Sukanta Majumdar BJP West Bengal Assembly Election

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy