Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

টিকা-ভ্রান্তি কাটাতে বাড়িতে মৃত্যুর রিপোর্ট দেবে কেন্দ্র

এই ধরনের ভ্রান্ত ধারণা ভাঙতে এ বার উঠেপড়ে লেগেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। দেখা যাচ্ছে, কোনও শিশুর মৃত্যুর কারণ হয়তো বিশেষ কোনও রোগ।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৫৬
Share: Save:

অমৃতই বিষ কি না, সেটা কবির দার্শনিক সংশয়। কিন্তু ওষুধ বা প্রতিষেধক টিকা-ই অনেক ক্ষেত্রে শিশুমৃত্যুর কারণ ধরে নিয়ে সরব হন, অভিযোগ করেন অনেক অভিভাবক। এই ধরনের অমূলক ধারণা থেকেই অনেক জায়গায়, বিশেষত পোলিও টিকাকরণে বাধা দেওয়া হয়।

এই ধরনের ভ্রান্ত ধারণা ভাঙতে এ বার উঠেপড়ে লেগেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। দেখা যাচ্ছে, কোনও শিশুর মৃত্যুর কারণ হয়তো বিশেষ কোনও রোগ। ঘটনাচক্রে সেই অসুস্থতা চলাকালীন শিশুটিকে কোনও টিকা দেওয়া হয়েছিল। শিশুটির মৃত্যুর পরে বদ্ধমূল ধারণা থেকে অভিভাবকেরা জীবনহানির দায় চাপিয়ে দিচ্ছেন সেই টিকার ঘাড়ে। ‘ন্যাশনাল অ্যাডভার্স এফেক্ট ফলোইং ইমিউনাইজেশন’ সংক্রান্ত কমিটিতে এই ধরনের মৃত্যুর যে-সব ঘটনা নথিভুক্ত হবে, তার প্রতিটি ক্ষেত্রে মৃত্যুর কারণ দ্রুত যাচাই করে বাড়ির লোককে রিপোর্ট দেবে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। ওই মন্ত্রকের কর্তাদের পরিসংখ্যান বলছে, ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রে এই ধরনের শিশুমৃত্যুর প্রকৃত কারণ টিকা নয়, অন্য কিছু।

স্বাস্থ্য মন্ত্রকের রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৫ সালে দেশে ১৭৬টি শিশুর মৃত্যুর জন্য প্রাথমিক ভাবে কোনও টিকাকে দায়ী করা হয়েছিল। ২০১৬ সালে সংখ্যাটা ছিল ১১১। কিন্তু ২০১৭-য় সংখ্যাটা এক লাফে বেড়ে হয়েছে ১১৩৯। অর্থাৎ নথিভুক্ত ১১৩৯টি ঘটনায় শিশুরা কোনও না-কোনও টিকা দেওয়ার ফলে মারা গিয়েছে বলে মনে করছে পরিবার। ২১৪৫০টি শিশুর ক্ষেত্রে বাড়ির লোকের অনুযোগ, টিকা নেওয়ার পরে তাদের শরীরে র‌্যাশ, চুলকানি বা চর্মরোগ হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে ২০১৫ সালে ২৫টি শিশুর মৃত্যুর রিপোর্ট মিলেছিল, যারা টিকাকরণের ফলে মারা গিয়েছে বলে দৃঢ় ধারণা অভিভাবকদের। ২০১৭-য় সেই সংখ্যাটা বেড়ে হয়েছে ৪৪।

‘‘টিকাকরণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতেই মৃত্যু বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে, এমন শিশুর সংখ্যা ২০১৭ সালে অনেকটা বেড়েছে। কারণ, গত বছর একেবারে গ্রাম স্তর থেকে এই তথ্য জানার উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। নির্ভয়ে রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে,’’ বলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের টিকাকরণ বিভাগের ডেপুটি কমিশনার প্রদীপ হালদার। তিনি জানান, এত দিন কোনও টিকা নেওয়ার পরে কোথায়, কোন শিশু অসুস্থ হয়ে পড়েছে বা কে মারা গিয়েছে, সেই প্রকৃত তথ্য দিল্লি পর্যন্ত পৌঁছত না। গ্রাম বা জেলা স্তরে স্বাস্থ্যকর্মী বা কর্তারা অধিকাংশ সময়ে তা ভয়ে চেপে দিতেন। ফলে সেই মৃত্যুর আসল কারণ খতিয়ে দেখা যেত না। এক শ্রেণির অভিভাবকের মনে এই ধারণা গেড়ে বসে যেত যে, টিকাই শিশুটির মৃত্যুর কারণ।

প্রতিটি ঘটনা খতিয়ে দেখে এ বার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ সংশ্লিষ্ট শিশুর প্রিয়জনদের জানানো হবে। কারণ, মানুষের মন থেকে এই ভ্রান্ত ধারণাটা কাটানো দরকার বলে মনে করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। প্রদীপবাবুর বক্তব্য, মানুষের মনে এই ধরনের কোনও ধারণা থেকে যাওয়াটা সামগ্রিক ভাবে টিকাকরণ কর্মসূচির পক্ষে বিপজ্জনক। কারণ, এক জনের থেকে অনেকের মধ্যে টিকা কর্মসূচির প্রতি বিরূপ মনোভাব জন্মানোর আশঙ্কা আছে।

টিকাকরণ কর্মসূচির নজরদারিতে গড়া জাতীয় টেকনিক্যাল অ্যাডভাইসারি গ্রুপের সদস্য গঙ্গাদীপ কাংগ-এর মতে, যত বেশি সংখ্যায় এই ধরনের মৃত্যুর কথা রিপোর্ট হবে, তত তার প্রকৃত কারণ বিশ্লেষণ করা যাবে। যদি সত্যিই কোনও টিকা কিছু সংখ্যক শিশুর উপরে খারাপ প্রভাব ফেলে, সেটাও নজরে আসবে এবং তা সংশোধন করা সম্ভব হবে।

রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী এক সময়ে বাংলার টিকাকরণ আধিকারিকের দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর অভিজ্ঞতা, ‘‘এখন পশ্চিমবঙ্গের শিশুমৃত্যুর যা হার, তাতে ১৫ লক্ষ শিশু জন্মালে তার মধ্যে মারা যায় প্রায় ৩৭ হাজার। কোনও অসুস্থ, দুর্বল শিশুকে হয়তো সকালে টিকা দেওয়া হল আর বিকেলে সে মারা গেল অসুস্থতার জেরে। কিন্তু বাবা-মায়ের ধারণা হল, মৃত্যুর কারণ ওই টিকা। তাই এই ধরনের প্রতিটি মৃত্যু সম্পর্কে স্বাস্থ্য মন্ত্রকে রিপোর্ট দেওয়া এবং মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখা খুব জরুরি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Vaccination Central Government Death report
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE