E-Paper

টানাপড়েন কেন্দ্রের সঙ্গে, নতুন পথে রাজ্য

বিশ্বব্যাঙ্কের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে যাতে প্রকল্পের কাজ করা যায়, বছর খানেক ধরে সেই চেষ্টা করছিল রাজ্য সরকার। অবশেষে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে কেন্দ্রের হাত ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাঙ্কের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতে চলেছে স্বাস্থ্য দফতর।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৫ ০৮:৩৪

—প্রতীকী চিত্র।

জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের টাকা নিয়ে প্রায় দু’বছর ধরে কেন্দ্র-রাজ্য টানাপড়েন অব্যাহত। তার জেরে এ বার স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক বা হৃদ্‌রোগ এবং ডায়াবিটিসের ওষুধের টাকায় টান পড়েছে বলে খবর। একাধিক জেলার রিজ়ার্ভ স্টোর ও একাধিক মেডিক্যাল কলেজে বিপুল টাকা বকেয়া থাকায় ওষুধ সরবরাহকারী সংস্থাগুলি গত সপ্তাহেই স্বাস্থ্য দফতরকে লিখিত ভাবে জানিয়েছে, অবিলম্বে টাকা না দিলে তারা চলতি মাসেই স্ট্রোক, হৃদ্‌রোগ এবং ডায়াবিটিসের ওষুধ সরবরাহ বন্ধ করবে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য যে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে কেন্দ্রের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে চাইছে না, সে ইঙ্গিতও দিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর।

বিশ্বব্যাঙ্কের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে যাতে প্রকল্পের কাজ করা যায়, বছর খানেক ধরে সেই চেষ্টা করছিল রাজ্য সরকার। অবশেষে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে কেন্দ্রের হাত ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাঙ্কের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতে চলেছে স্বাস্থ্য দফতর। স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, ‘‘বিশ্বব্যাঙ্কের অর্থসাহায্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে ‘উন্নত স্বাস্থ্য’ নামে একটি নতুন প্রকল্প শুরু করতে চলেছি। ৭০ শতাংশ অর্থ দেবে বিশ্বব্যাঙ্ক, বাকিটা রাজ্য। এর জন্য বিশ্বব্যাঙ্ক ৪ হাজার কোটি টাকা দেবে বলে জানিয়েছে।’’

প্রসঙ্গত, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক বা হৃদ্‌রোগ এবং ডায়াবিটিসের মতো রোগের ওষুধের টাকা কেন্দ্রীয় সরকারের ‘নন-কমিউনিকেবল ডিজ়িজ়’ বা অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ কর্মসূচির আওতায় জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন (এনএইচএম) থেকে দেওয়া হয়। কিন্তু রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, কেন্দ্র দীর্ঘ সময় টাকা আটকে রাখায় এবং অনিয়মিত ভাবে টাকা দেওয়ায় ২০২৩ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত স্ট্রোক, হৃদ্‌রোগ এবং ডায়াবিটিসের ওষুধের বিপুল টাকা বকেয়া রয়েছে। ২০২৩-২৪ সালে বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ১ কোটি ৪২ লক্ষ টাকা এবং ২০২৪-২৫ সালে বকেয়া প্রায় ১ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা। এর পর ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষেরও প্রায় ৩ মাস কেটে গিয়েছে। স্বাস্থ্যসচিবের কথায়, ‘‘গত মার্চে কেন্দ্র ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের জন্য জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের কিছু টাকা দিয়েছিল। তার পর এখনও পর্যন্ত কিছু দেয়নি। আমরা বারবার টাকার জন্য ওদের জানাই। অপেক্ষা করি। এ ছাড়া কিছু করার নেই।’’

তবে স্বাস্থ্যকর্তাদের অনেকে মনে করছেন, বিশ্বব্যাঙ্কের সঙ্গে যৌথ প্রকল্প বাস্তবায়িত না-হওয়া পর্যন্ত টাকা নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য বিরোধ থেকেই যাবে। রাজ্যের হিসাবে, ২০২৩-২৪ সালে স্ট্রোক, হৃদ্‌রোগ এবং ডায়াবিটিসের ওষুধের দাম হিসেবে জেলাগুলিতে বকেয়া আছে প্রায় ১ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা (দক্ষিণ দিনাজপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও হাওড়ায় বকেয়া সবচেয়ে বেশি)। মেডিক্যাল কলেজগুলিতে বকেয়া প্রায় ২৩ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। তার মধ্যে কলকাতার মেডিক্যাল কলেজই বেশি। যেমন, ন্যাশনাল মেডিক্যালে প্রায় ৯ লক্ষ টাকা, নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে প্রায় ১১ লক্ষ টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে স্ট্রোক, হৃদ্‌রোগ এবং ডায়াবিটিসের ওষুধের জন্য জেলাগুলিতে বকেয়া প্রায় ১ কোটি ২৩ লক্ষ টাকা (শীর্ষে হাওড়া, নদিয়া, বর্ধমান) এবং মেডিক্যাল কলেজগুলিতে বকেয়া প্রায় ৩৬ লক্ষ টাকা (শীর্ষে বারাসত, উত্তরবঙ্গ ও ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজ)।

প্রসঙ্গত, জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা-৫ অনুযায়ী, ভারতে প্রতি বছর মোট মৃত্যুর ৬৫ শতাংশই অসংক্রামক রোগের জন্য হয়। প্রতি বছর দেশে প্রায় ৫৫ লক্ষ মানুষ স্ট্রোক, হৃদরোগে মারা যান। এই সব রোগের চিকিৎসায় মানুষের সব থেকে বেশি অর্থ খরচ হয়। তাই সরকারি হাসপাতালে টাকার অভাবে ওষুধ বন্ধ হলে ধনেপ্রাণে মারা পড়বেন মূলত দরিদ্র রোগীরাই।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

National Health Mission Central Government West Bengal government

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy