Advertisement
E-Paper

আচরণবিধি জারিতে সায় আচার্যেরও

কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারি আচরণবিধি চালু করার মধ্যে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বাধিকারে হস্তক্ষেপই দেখছে শিক্ষা শিবিরের বড় অংশ। খোদ আচার্য-রাজ্যপাল কিন্তু বলছেন, শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্রছাত্রী বা শিক্ষাকর্মী— কার কেমন আচরণ করা উচিত, সেই বিধি নির্দিষ্ট করে দেওয়াটা সরকারের অধিকার।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৬ ০৪:১০

কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারি আচরণবিধি চালু করার মধ্যে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বাধিকারে হস্তক্ষেপই দেখছে শিক্ষা শিবিরের বড় অংশ। খোদ আচার্য-রাজ্যপাল কিন্তু বলছেন, শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্রছাত্রী বা শিক্ষাকর্মী— কার কেমন আচরণ করা উচিত, সেই বিধি নির্দিষ্ট করে দেওয়াটা সরকারের অধিকার।

রাজনীতি শিক্ষাকে কুক্ষিগত করে ফেলেছে বলে বাম জমানায় সর্বস্তরে অভিযোগ উঠত। নতুন সরকার এসে শিক্ষাকে রাজনীতিমুক্ত করার আশ্বাস দিলেও কার্যক্ষেত্রে তারা পূর্বসূরিরই পথ নিচ্ছে বলে শিক্ষাজগতের অভিযোগ। সরকারের তরফে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকারে বারবার নাক গলানোর প্রবণতার বিষয়টি আছে সেই অভিযোগনামার একেবারে প্রথমে। আর কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারি আচরণবিধি চালু করার উদ্যোগ শাসকের সেই প্রবণতার সাম্প্রতিকতম দৃষ্টান্ত বলে সমালোচনায় মুখর শিক্ষা শিবির।

এই পরিপ্রেক্ষিতেই আচরণবিধি তৈরির প্রশ্নে আচার্য-রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীকে পাশে পেয়ে গেল তৃণমূল সরকার। ত্রিপাঠী সোমবার বলেন, ‘‘এই আচরণবিধি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকারে কোনও খারাপ প্রভাব ফেলবে না।’’

রবিবার নজরুল মঞ্চে আশুতোষ কলেজের এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, শিক্ষাঙ্গনে কী করা যাবে আর কী করা যাবে না, তার একটা তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সঙ্গে কলেজগুলিকেও সেই আচরণবিধি মেনে চলতে হবে। শিক্ষামন্ত্রী আচরণবিধি তৈরির কথা ঘোষণা করায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বাধিকারের প্রশ্নে ফের সরব হয়েছেন শিক্ষাবিদদের অনেকেই। এ ভাবে নির্দেশিকা তৈরি করে সরকার আসলে উচ্চশিক্ষায় নাক গলাতে চাইছে বলে মনে করেছেন শিক্ষা জগতের লোকজন। তাঁদের কেউ কেউ বলছেন, একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-ই এমন আচরণবিধি তৈরি করতে পারে। সরকার বড়জোর এই বিষয়ে আবেদন জানাতে পারে তাদের কাছে। তা না-করে সরকার কী ভাবে এই ধরনের নির্দেশিকা তৈরি করছে, সেই প্রশ্ন জোরদার হচ্ছে।

সেই সব প্রশ্ন ও সমালোচনাকে কার্যত উড়িয়ে দিয়ে এ দিন এক অনুষ্ঠানে আচার্য ত্রিপাঠী বলেন, ‘‘আচরণবিধি এবং সেই সংক্রান্ত নির্দেশিকা তৈরির সমস্ত অধিকার এবং ক্ষমতাই রয়েছে রাজ্য সরকারের। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও পরিবেশের স্বার্থেই এই আচরণবিধি প্রয়োজন। সরকার এমন নির্দেশিকা জারি করলে সব কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় তা নিজস্ব আচরণবিধি হিসেবেই মেনে চলবে।’’

এটা অবশ্য প্রথম নয়। বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে লাগাতার ঘেরাওয়ের জেরে গত বছর শিক্ষা ক্ষেত্রে চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছিল। সেই সময়েও আচরণবিধির পক্ষে সওয়াল করেছিলেন আচার্য-রাজ্যপাল ত্রিপাঠী। বলেছিলেন, রাজ্যের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন অনুশাসনহীনতা চলছে। তাই আচরণবিধি তৈরির বিষয়ে তিনি সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন বলেও জানিয়ে দেন। আচরণবিধির পক্ষে তাঁর সেই সওয়াল নিয়ে সে-বারেও বিতর্ক দানা বেঁধেছিল শিক্ষা মহলে। প্রশ্ন উঠেছিল, আচার্য হয়ে রাজ্যপাল কী ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বশাসনে সরকারি হস্তক্ষেপ সমর্থন করেন?

সেই প্রশ্নের জবাব আজও মেলেনি। বরং রাজ্যপাল আবার আচরণবিধি সমর্থন করায় পুরনো বিতর্ক নতুন ইন্ধন পেয়েছে। তবে শিক্ষামন্ত্রী অটল। আচরণবিধির সঙ্গে স্বাধিকারভঙ্গের কোনও সম্পর্ক নেই বলে এ দিন রাজ্যপালের সুরেই মন্তব্য করেছেন তিনি। পার্থবাবু বলেন, ‘‘এতে স্বাধিকারভঙ্গের প্রশ্ন উঠছে কেন, তা বুঝতে পারছি না। শিক্ষক-শিক্ষিকারা নিয়মিত ক্লাস নিন, পড়ুয়ারা ন্যূনতম ৭৫ শতাংশ উপস্থিতির নিয়ম মেনে চলুক— কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় কি তা চায় না? আমরা তো কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থেই আচরণবিধি চাইছি।’’

কবে বলবৎ হবে আচরণবিধি?

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘আচরণবিধির নির্দেশিকা খুব তাড়াতাড়িই পৌঁছে যাবে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে।’’

এই ধরনের আচরণবিধি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বাধিকারের পক্ষে হানিকর হবে না বলেই মনে করছেন রাজ্যপাল ও শিক্ষামন্ত্রী। শিক্ষাবিদদের অনেকেই কিন্তু অন্য রকম ভাবছেন। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য আনন্দদেব মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ রয়েছে, ৭৫ শতাংশ উপস্থিতি ছাড়া কোনও পড়ুয়াই পরীক্ষায় বসতে পারবে না। প্রকাশ্যে সিগারেট খাওয়া যাবে না। তা সত্ত্বেও তো কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে এর অন্যথা হয়। বিধি জারি করেই পরিবেশ পাল্টে দেওয়া যাবে বলে রাজ্যপাল যে-অভিমত প্রকাশ করেছেন, সেটা কিন্তু ভুল।’’ আনন্দদেববাবু জানান, ইউজিসি এই ধরনের আচরণবিধি তৈরি করতে গিয়েও শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে এসেছিল। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা না-করে এই ধরনের আচরণবিধি চালু করার সিদ্ধান্তকে ‘স্বাধিকারে হস্তক্ষেপ’ বলেই মনে করেন ওই শিক্ষাবিদ। আর প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায় পরিষ্কার বলেন, ‘‘কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে আচরণবিধি তৈরির কোনও এক্তিয়ার নেই রাজ্যের শিক্ষা দফতরের। ইউজিসি ছাড়া কেউ তেমন কিছু করতে গেলে আখেরে স্বাতন্ত্র্যকেই আক্রমণ করা হয়।’’

Chancellor Code of conduct Education
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy