Advertisement
২৯ এপ্রিল ২০২৪
Anubrata Mandal

Anubrata Mandal: বাধ্য হয়েই বিশ্রাম-দাওয়াই অনুব্রতকে, দাবি চন্দ্রনাথের

সোমবারের তলবে না যাওয়ায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অনুব্রত মণ্ডলকে আজ, বুধবার ফের হাজিরার সমন পাঠিয়েছে সিবিআই।

নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বোলপুর ও কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০২২ ০৫:৪০
Share: Save:

সোমবারের তলবে না যাওয়ায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অনুব্রত মণ্ডলকে আজ, বুধবার ফের হাজিরার সমন পাঠিয়েছে সিবিআই। কিন্তু তার আগে মঙ্গলবার রাতে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসক চন্দ্রনাথ অধিকারী দাবি করলেন যে, বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতার ‘প্রভাবেই’ এ দিন দুপুরে তাঁকে ‘বেডরেস্টের’ পরামর্শ দিতে ‘বাধ্য’ হয়েছিলেন তিনি!

দুপুরে যিনি অনুব্রতের হাজারো অসুস্থতার কথা (বিস্তারিত সঙ্গের সারণিতে) বলেছিলেন, সেই চন্দ্রনাথের মুখেই রাতের দিকে প্রশ্ন,অনুব্রত মণ্ডল শাসক দলের জেলা সভাপতি এবং ‘প্রভাবশালী’ও। তাই তিনি বললে, ‘বেডরেস্ট’ না লিখে থাকেন কী করে? যা শুনে বিরোধী নেতাদের বক্তব্য, আদালতই বলেছে যে, এসএসকেএম হাসপাতাল রাজনৈতিক নেতাদের নিরাপদ আশ্রয়ে পরিণত হয়েছে। আর এখন দেখা যাচ্ছে, সিবিআইয়ের প্রশ্ন এড়াতে জোর করে নিজের খাসতালুকের চিকিৎসককে দিয়েও বিশ্রামের পরামর্শ লেখাচ্ছেন কেষ্ট।

বিষয়টি নিয়ে আরও জলঘোলা হচ্ছে কারণ, এই চিকিৎসকই কয়েক ঘণ্টা আগে, দুপুরের দিকে পরীক্ষা করে গিয়েছিলেন তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতিকে। এবং জানিয়েছিলেন যে, অনুব্রতের ‘ফিসচুলা’র সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া তাঁর শ্বাসকষ্ট, ডায়াবিটিস, হাইপারটেনশন, অবসাদের মতো সমস্যা রয়েছে। অবসাদ সম্প্রতি বেড়েওছে। তখন চিকিৎসকের বক্তব্য ছিল, ‘‘এই মুহূর্তে ওঁর বিশ্রামের প্রয়োজন।’’ একই সঙ্গে তাঁর পরামর্শ ছিল, অনুব্রতের এখন কলকাতা বা বাইরে কোথাও না যাওয়াই ভাল।

কেন কলকাতায় না-যাওয়ার পরামর্শ? বিরোধী শিবিরের দাবি, আজ, বুধবারই ফের নিজাম প্যালেসে অনুব্রতকে তাদের সামনে হাজির হওয়ার জন্য তাঁর বোলপুরের বাড়িতে সমন পাঠিয়েছে সিবিআই। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটির ইঙ্গিত, এ বারও অনুব্রত হাজির না হলে, কড়া আইনি পদক্ষেপ করতে পারে তারা। বিরোধীদের অভিযোগ, সেই হাজিরা এড়াতেই নিজের জেলার (বস্তুত খাসতালুক বোলপুরের) সরকারি হাসপাতালের মেডিক্যাল টিমকে দিয়ে বাইরে না-যাওয়ার এবং পূর্ণ বিশ্রামে থাকার পরামর্শ লিখিয়েছেন অনুব্রত।

এই প্রসঙ্গেই এবিপি আনন্দকে এক সাক্ষাৎকারে চিকিৎসক চন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘‘সকালে হাসপাতাল সুপার বুদ্ধদেব মুর্মু আমাকে অর্ডার করেন, অনুব্রত মণ্ডলের বাড়িতে ইমার্জেন্সি টিম পাঠাতে হবে। আমি অনুরোধ করি, তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসার জন্য। তাতে আমরা সবাই মিলে ওঁর চিকিৎসা করতে পারব। উনি (সুপার) বলেন, তার কোনও প্রয়োজন নেই। বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসা করা দরকার। আমি সুপারের কথামতো অনুব্রতবাবুর বাড়িতে যাই।’’

চন্দ্রনাথের দাবি, অনুব্রতের বাড়িতে গিয়ে দেখেন, সরকারি কোনও প্রেসক্রিপশন নোট বা পেপার আসেনি। তাঁর কথায়, ‘‘যে সব শারীরিক সমস্যা ওঁর দেখা দিয়েছিল, সেগুলি আমি দেখি। একটা অ্যাডভাইস করি সাদা কাগজে। উনি (অনুব্রত) বলেছিলেন, আমাকে বেড রেস্ট লিখে দিন। আমারও ওঁকে দেখে মনে হয়েছিল একটু রেস্টের প্রয়োজন রয়েছে। সেই মতো আমি কয়েক দিনের বেডরেস্ট লিখে দিই।’’ এখানেই শেষ নয়। চন্দ্রনাথের বক্তব্য, সুপার তাঁকে সমস্তটাই সাদা কাগজে লিখে দিতে বলেন। এ সবের কল রেকর্ডিং তাঁর কাছে রয়েছে।

প্রসঙ্গত সোমবার অনুব্রতকে তলব করেছিল সিবিআই। এসএসকেএমে শারীরিক পরীক্ষা করাবেন, এই যুক্তিতে হাজিরা এড়িয়েছিলেন তিনি। সন্ধ্যায় ফেরেন বোলপুরে। মঙ্গলবার সকালেই পৌঁছয় সিবিআইয়ের সমন। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই আসে মেডিক্যাল টিম! ঘটনাপ্রবাহ দেখেই নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বিজেপির বীরভূমের নেতা অনুপম হাজরা টুইট করেছেন, ‘ডাক্তারেরা ডিউটির সময়ে হাসপাতাল ছেড়ে প্রভাবশালী নেতার বাড়িতে এসে পরিষেবা দিয়ে যাচ্ছেন, তাঁকে সিবিআইয়ের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য!’’ শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘একটা লোক ৮ বার ডাকার পরেও যায়নি। তাঁকে ব্যাগ গোছানোর সময় দেওয়া উচিত নয়। এক কাপড়ে তুলে আনা উচিত!’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘বালি, পাথর, গরু পাচার, চাকরি বিক্রি— নানা কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত। শ্রীঘরে থাকা ছাড়া বিকল্প নেই। ওখানে পার্থবাবু (চট্টোপাধ্যায়) অপেক্ষায় আছেন।’’

তৃণমূল নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, ‘‘বিরোধী দলনেতাই এখন বলে দিচ্ছেন, কী করতে হবে! এক কাপড়ে তুলে আনার কথা বলছেন।’’ এই নিয়ে জিজ্ঞেস করা হলে মন্ত্রী ও দলের মুখপাত্র চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বিষয়টি বিচারাধীন বলে আমরা কোনও মন্তব্য করছি না। অনুব্রত কী করবেন, তা উনিই ঠিক করবেন।’’

গোটা ঘটনায় বিতর্ক যে বেধেছে, সেটা সম্যক বুঝেছেন চিকিৎসক চন্দ্রনাথ। হয়তো তাই সাক্ষাৎকারে আক্ষেপ করে বলেছেন, ‘‘আমার কাছে প্রেসক্রিপশনের কাগজ ছিল না। সাদা কাগজে লেখার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল আমার উপরে। সাধারণ মানুষের কাছে হেয় হয়ে গেলাম!’’

বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে ভারপ্রাপ্ত সুপার বুদ্ধদেব মুর্মু বলেন, “জেলা প্রশাসনের নির্দেশ মতোই অনুব্রতের চিকিৎসার জন্য একটি টিম পাঠানো হয়েছিল।” বীরভূম জেলা প্রশাসনের এক শীর্ষকর্তার ব্যাখ্যা, “অনুব্রত মণ্ডল সরকারি পদে রয়েছেন। তাই এই ব্যবস্থা। এর মধ্যে অন্য কোনও কারণ নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Anubrata Mandal CBI
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE