E-Paper

ঘেরাও প্রধান শিক্ষিকা, উদ্ধারে গিয়ে ছাত্রী-হেনস্থার অভিযোগ

শেষে কোনও মতে প্রধান শিক্ষিকাকে বার করে পুলিশের গাড়িতে তোলা হলে, ছাত্রীদের একাংশ সেই গাড়ির সামনে বসে পড়ে। অনেক চেষ্টায় ভিড় হটিয়ে ওই শিক্ষিকাকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৮:২৭

— প্রতীকী চিত্র।

স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ। নিয়মিত ক্লাস হচ্ছে না, শেষ হচ্ছে না সিলেবাস, পর্যাপ্ত পানীয় জল নেই, পরিকাঠামোর হালও সন্তোষজনক নয়— এমন সব অভিযোগ দীর্ঘদিনের। মঙ্গলবার ছাত্রীরা সেই সব নিয়েই প্রধান শিক্ষিকার কাছে বলতে গেলে গোলমাল বাধে। স্থানীয় সূত্রের খবর, ছাত্রীদের প্রতিবাদে অভিভাবকেরা যোগ দিলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয় রাজারহাটের ওই উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে। গোলমালের খবর পেয়ে পুলিশ এলেও অবস্থা সামলানো যায়নি। উল্টে, পুলিশ প্রধান শিক্ষিকাকে উদ্ধার করতে গেলে তাঁকে ধরে টানা হেঁচড়া চলতে থাকে। কার্যত তাঁকে ‘হেনস্থা’র মুখে পড়তে হয়েছে বলে অভিযোগ।

শেষে কোনও মতে প্রধান শিক্ষিকাকে বার করে পুলিশের গাড়িতে তোলা হলে, ছাত্রীদের একাংশ সেই গাড়ির সামনে বসে পড়ে। অনেক চেষ্টায় ভিড় হটিয়ে ওই শিক্ষিকাকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। এর পরে থানাতেও হাজির হন পড়ুয়া এবং অভিভাবকেরা। সেখানেও পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়। শেষে ছাত্রীদের সমস্যার কথা শুনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।

তার পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

এর মধ্যে বিজেপির অভিযোগ, পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে ছাত্রীদের গায়ে হাত তুলেছে। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সমাজমাধ্যমে এই সংক্রান্ত একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেন এমন দাবি করেন। সেখানে রাজারহাট থানার আইসি জোনাকি বাগচির বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে ওই আধিকারিক ছাত্রীদের গায়ে হাত তুলেছেন।

পুলিশ অবশ্য ওই অভিযোগ মানতে নারাজ। এক পুলিশকর্তা জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ যথেষ্ট সংযম দেখিয়েছে।

প্রশ্ন উঠেছে যে, একটি বালিকা বিদ্যালয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের কেন পর্যাপ্ত সংখ্যক মহিলা পুলিশ ছিল না?

ছাত্রী এবং অভিভাবকদের একাংশের অভিযোগ, ওই স্কুলে সমস্যা দীর্ঘদিনের। অভিযোগের তির প্রধান শিক্ষিকার দিকে। তাঁদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে ওই সমস্যার কথা বিভিন্ন স্তরে জানিয়েও ফল মেলেনি।

তবে মঙ্গলবার রাতে যে গোলমাল হয়েছে এবং ছাত্রীদের গায়ে পুলিশ হাত দিয়েছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে,তা নিয়ে কোনও পক্ষই মুখ খুলতে চাননি। প্রধান শিক্ষিকা যেমন থানায় কোনও অভিযোগ দায়ের করেননি, তেমনই ছাত্রীরাও তাদের হেনস্থা করার কথা লিখিত ভাবে জানাননি। নিউ টাউনের ডিসি মানব শ্রিংলাও জানান, পুলিশের বিরুদ্ধে (ছাত্রীদের হেনস্থা সংক্রান্ত) এমন কোনও অভিযোগ আসেনি। পড়ুয়া কিংবা অভিভাবকরাও তেমন কোনও অসন্তোষ প্রকাশ করেননি। ঘটনাস্থলে মহিলা পুলিশ-সহ পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ হাজির হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে বলেইদাবি তাঁর।

যদিও ঘটনাটি নিয়ে রাজনৈতিক পারদ চড়েছে। রাজারহাটের তৃণমূল নেতা প্রবীর কর জানান, ওই ঘটনা নিয়ে বিজেপি জলঘোলা করতে চাইছে। পাল্টা অভিযোগে বিজেপির রাজ্য কমিটির এক সদস্য অনুপম ঘোষ দাবি করেন, প্রধান শিক্ষিকা তৃণমূলের ধামাধরা। ছাত্রীদের সমস্যার সমাধান দূর অস্ত্, উল্টে ছাত্রীদের গায়ে হাত তুলেছে পুলিশ।

প্রধান শিক্ষিকার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। রাজারহাটের বিডিও গোলাম গৌসল আজম জানান, ছাত্রীরা তাদের সমস্যার কথা জানিয়েছে। সেগুলি শিক্ষা দফতরে পাঠানো হবে। পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ঠিক নয়। উল্টে ছাত্রীরা পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করেছে।

রাজারহাটের বিধায়ক তাপস চট্টোপাধ্যায় জানান, রাজনীতির উর্দ্ধে উঠে সকলকে নিয়ে সমস্যার সমাধান হবে। পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ঠিক নয়। বরং পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ না করলে পরিস্থিতি আরও জটিল হত।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

School Authority Chaos

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy