বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কর্মসূচি ঘিরে বুধবার বিকেলে তপ্ত হল দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর। বুধবার বিকেলে বারুইপুরে রাসমাঠ থেকে পুলিশ সুপারের দফতর পর্যন্ত মিছিল করার কথা ছিল বিজেপির। ওই কর্মসূচিতে বিজেপি বিধায়কদেরও থাকার কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওই পদযাত্রা বাতিল করল বিজেপি। বিকেলে শুভেন্দু বারুইপুরে ঘোষিত কর্মসূচির জন্য পৌঁছোতেই উত্তেজনা বৃদ্ধি পায় এলাকায়। তৃণমূল এবং বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে বিবাদ বেধে যায়। শুভেন্দুর অভিযোগ, তিনি সেখানে প্রবেশ করার সময় তাঁর গাড়িতে হামলা হয়েছে। বিরোধী দলনেতার দাবি, ওই সময়ে বাইরে থাকলে মাথা চৌচির হয়ে যেত। ঘটনার প্রতিবাদে হাই কোর্টে যাওয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
বুধবার বিজেপির কর্মসূচির দিনেই বারুইপুরে ‘পাল্টা’ কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল তৃণমূল। পুরাতন বাজার এবং শিবানী পীঠ এলাকায় অবস্থান বিক্ষোভ চলছিল তৃণমূলের। দুই রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি ঘিরে কোনও রকম অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এলাকায় যথেষ্ট পুলিশও মোতায়েন ছিল। এরই মধ্যে বিকালে শুভেন্দুর অভিযোগ, তিনি বারুইপুরে পৌঁছোলে গাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে। শুভেন্দু এলাকায় প্রবেশের সময়ে তাঁর উদ্দেশে ‘গো ব্যাক’ স্লোগানও দেওয়া হয় এবং কালো পতাকাও দেখানো হয়। এ ছাড়া ‘চোর চোর’ স্লোগানও ওঠে বলে অভিযোগ বিজেপির। তাদের দাবি, ওই ধস্তাধস্তির সময়ে বিজেপির কয়েক জন কর্মী আহত হয়েছেন।
আরও পড়ুন:
তৃণমূলের কর্মসূচি নিয়েও অভিযোগ রয়েছে বিজেপির। তাদের বক্তব্য, বিকেল ৩টে পর্যন্ত তৃণমূলকে মাইক বাজানোর অনুমতি দেওয়া থাকলেও তা মানা হয়নি। বিজেপির যাদবপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি মনোরঞ্জন জোয়ারদারের বক্তব্য, “পুলিশ সুপার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। পুলিশ দলদাসে পরিণত হয়েছে।” তাঁর দাবি, গোলমাল এড়াতে বিজেপি কর্মীদের বাড়ি ফিরে যেতে বলা হয়েছে। বুধবারের কর্মসূচি বাতিল হলেও নতুন করে কর্মসূচির ঘোষণা করেছে বিজেপি। বুধবারের ঘটনার প্রতিবাদে আগামী ২৭ মার্চ পুলিশ সুপারের দফতর ঘেরাও করার ডাক দিয়েছে তারা।
শুভেন্দুরা যখন বারুইপুরে বিক্ষোভের মুখে পড়েন, তখন বারুইপুর পশ্চিমের বিধায়ক তথা বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় এলাকায় ছিলেন না। তিনি বিধানসভাতেই ছিলেন। বিমান জানান, তিনি শুনেছেন বিজেপির বারুইপুরের কর্মসূচিতে তেমন লোকজন হয়নি। তাই অনেকেই ফিরে গিয়েছে। বিজেপির অন্দরেই অন্তর্দ্বন্দ্ব ছিল বলে দাবি তাঁর। বিমান জানান, হয়ত কিছু মানুষ বিজেপির বক্তব্যে অসন্তুষ্ট হয় বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। তবে বিজেপির কর্মীদের ধাক্কাধাক্কি করার কোনও ঘটনা তাঁর নজরে আসেনি।
শুভেন্দু বারুইপুর পৌঁছানোর পরে উত্তেজনা সৃষ্টি হওয়াকে সাধারণ মানুষের স্বতঃপ্রণোদিত ক্ষোভ বলেই ব্যাখ্যা করছে তৃণমূল। দক্ষিণ ২৪ পরগনা (গ্রামীণ) জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ শুভাশিস চক্রবর্তী বলেন, “বিরোধী দলনেতা তৃণমূল নেতাদের আক্রমণের ক্ষেত্রে শালীনতার সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। বারুইপুর পশ্চিমের বিধায়ক বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় একজন সৎ, সজ্জন মানুষ হিসাবে পরিচিত।” তাঁর দাবি, সেই কারণেই এই কর্মসূচিকে রুখে দিয়েছেন বারুইপুরের সাধারণ মানুষ। এর সঙ্গে তৃণমূলের কোনও যোগ নেই বলেই দাবি শুভাশিসের।