মোবাইল চুরির অভিযোগে এক যুবককে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলার অভিযোগ উঠল পুরুলিয়ায়। টামনা থানার চাকলতোড় গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম তাপস মহাপাত্র (২০)। ঘটনার অভিযোগ পাওয়ার পর পাঁচ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত রবিবার তাপস পুরুলিয়ার বলরামপুর থানার উরমা গ্রামে এক পরিচিতের বাড়িতে যান। পরের দিন সকালে টামনা থানার চাকলতোড় গ্রামে নিজের বাড়িতে ফিরে আসেন। ওই দিন বিকেলে তাপসের বাড়িতে চড়াও হন স্থানীয় সিভিক কর্মী মলয় পুইতুণ্ডি-সহ বেশ কয়েক জন যুবক। মোবাইল চুরির অভিযোগ তুলে টেনে হিঁচড়ে তাপসকে বাড়ির বাইরে টেনে নিয়ে যান ওই যুবকেরা। বাড়ির বাইরে তাপসকে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। পরে তাঁকে গাড়িতে তুলে ওই যুবকেরা অন্যত্র চলে যান বলে দাবি পরিবারের। মৃত তাপসের পরিবারের দাবি, বাড়ি থেকে তাপসকে তুলে নিয়ে যাওয়ার বেশ কিছু ক্ষণ পরে ফোন করে জানানো হয় তাপস বিষ খেয়েছে। তাই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পুরুলিয়া সরকারি মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাপসের মৃত্যু হয়। এর পরেই তাপসের পরিবারের তরফে টামনা থানায় সিভিক কর্মী মলয়-সহ ছ’জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে পরিবার। পুলিশ সেই অভিযোগের ভিত্তিতে খুনের মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। বুধবার টামনা থানার পুলিশ অভিযুক্ত ছ’জনের মধ্যে পাঁচ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। তাপসের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
তাপসের মৃত্যুর পর অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছে মৃতের পরিবার। মৃতের ঠাকুমা সাক্ষী মহাপাত্র বলেন, ‘‘আমার নাতি মোবাইল চুরি করেনি। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর করে খুন করা হয়েছে। মারধরের পর যখন তাপস রক্তবমি করছিল, সেই সময় আমাদের ফোন করে জানানো হয়, তাপস বিষ খেয়েছে। তাপস কোনও ভাবেই বিষ খেতে পারে না। তাপসকে মারধরের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল সিভিক কর্মী মলয়। তাপসের মা ওই সিভিক কর্মীকে বার বার থানায় ফোন করার কথা বলে। কিন্তু ওই সিভিক কর্মী উল্টে আমাদেরই ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দেয়। ওই সিভিক কর্মী থানায় বিষয়টি জানালে তাপসকে এ ভাবে খুন হতে হত না। আমরা দোষীদের কঠোর শাস্তি চাই।’
পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মৃতের পরিবারের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই পাঁচ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। যুবকের মৃত্যুর আসল কারণ জানতে দেহটি ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের সময় ভিডিয়োগ্রাফি করা হচ্ছে। এই ঘটনায় দোষ প্রমাণ হলে অভিযুক্তেরা যে পেশার সাথেই যুক্ত থাকুন না কেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’’