সন্তান হয়েছে। তাই মিষ্টি খাওয়ার টাকা চাই! তাও একশো-দু’শো টাকায় হবে না। সব মিলিয়ে পাঁচ হাজার টাকারও বেশি চেয়ে বসেছিলেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। প্রসূতির স্বামী, পেশায় চা বাগানের শ্রমিক, অত টাকা দিতে না পারায় তাঁর উপর জুলুমবাজি, এমনকি তাঁকে গালিগালাজ করার অভিযোগ উঠল শিলিগুড়ি মহকুমার ফাঁসিদেওয়ার ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালে। ওই অভিযোগ ওঠার পরেই হাসপাতালের দুই স্বাস্থ্যকর্মীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
প্রসবযন্ত্রণা হওয়ায় গত শনিবার ফাঁসিদেওয়া ব্লকের হেটমুড়ি অঞ্চলের মুনি চা-বাগান এলাকার বাসিন্দা অনামিকা কুজুরকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। অভিযোগ, সন্তান প্রসবের পর থেকেই তাঁদের কাছ থেকে প্রথমে ২২০০ টাকা দাবি করেছিলেন সাফাইকর্মীরা। আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে থাকলেও ওই টাকা দিয়েছিল প্রসূতির পরিবার। এর পর বুধবার নবজাতক এবং প্রসূতিকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়ার সময় ফের ৩২০০ টাকা চাওয়া হয়। প্রসূতির পরিবার তখন ২০০ টাকা দিতে রাজি হন। কিন্তু স্বাস্থ্যকর্মীরা সেই টাকা নিতে অস্বীকার করে প্রসূতির বাড়ির লোকেদের গালিগালাজ করা শুরু করেন বলে অভিযোগ। এর পরেই বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানান তাঁরা। হাসপাতালে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক না থাকায় এক নার্সের কাছেই লিখিত ভাবে অভিযোগ জানানো হয়েছিল।
অনামিকা বলেন, ‘‘প্রথমে ২২০০ টাকা চেয়েছিল। সেই টাকা দেওয়ার পরে আজ আবার মিষ্টি খাওয়ার জন্য তিন হাজার টাকা চাওয়া হয়। আমরা চা-বাগানের শ্রমিক। কোথা থেকে এত টাকা পাব? সেই জন্য অভিযোগ জানাতে বাধ্য হয়েছি।’’
অভিযোগ জমা পড়তেই নড়েচড়ে বসে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। মায়া ডোম ও রিনা মল্লিক নামে দুই স্বাস্থ্যকর্মীকে সাসপেন্ড করার পাশাপাশি পুলিশেও লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তরফে।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, জেলার সহকারী মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবরাজ সরকার অভিযোগের তদন্ত করেছেন। ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক, নার্স ও কর্মীদের সঙ্গে আলোচনাও করেছেন তিনি। দেবরাজ বলেন, ‘‘সরকারের উদ্যোগে প্রসূতিদের বিনামূল্যে পরিষেবা দেওয়া হয়। এখানে প্রসূতির কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। আপাতত থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযুক্তদের সাসপেন্ড করার পাশাপাশি মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে রিপোর্ট দেওয়া হবে।’’