Advertisement
E-Paper

এসএসসি মামলায় পার্থ, পরেশ, অঙ্কিতা-সহ ২১ জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন হল আলিপুর কোর্টে, এ বার শুরু হবে বিচার প্রক্রিয়া

এসএসসি মামলায় রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, আর এক প্রাক্তন মন্ত্রী পরেশচন্দ্র অধিকারী এবং তাঁর কন্যা অঙ্কিতা অধিকারী-সহ মোট ২১ জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন হল আলিপুর আদালতে।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৫:৩৮
(বাঁ দিক থেকে) পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অঙ্কিতা অধিকারী এবং পরেশচন্দ্র অধিকারী।

(বাঁ দিক থেকে) পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অঙ্কিতা অধিকারী এবং পরেশচন্দ্র অধিকারী। —ফাইল চিত্র।

এসএসসি মামলায় রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, আর এক প্রাক্তন মন্ত্রী পরেশচন্দ্র অধিকারী এবং তাঁর কন্যা অঙ্কিতা অধিকারী-সহ মোট ২১ জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন হল আলিপুর আদালতে। এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এই প্রথম কারও বিরুদ্ধে চার্জ গঠন হল। এ বার এই ২১ জনের বিরুদ্ধে আলিপুর আদালতের বিচারক বিশ্বরূপ শেঠের এজলাসে শুরু হবে বিচার প্রক্রিয়া।

সম্প্রতি এসএসসির নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশের মামলায় চূড়ান্ত চার্জশিট জমা দিয়েছে সিবিআই। গত শুক্রবার গ্রুপ সি মামলাতেও আলিপুর আদালতে শেষ চার্জশিট জমা পড়েছে। এর আগে ওই মামলায় আরও দু’টি চার্জশিট দিয়েছিল সিবিআই। সব মিলিয়ে চারটি চার্জশিট জমা পড়েছে। বৃহস্পতিবার চার্জ গঠন সম্পন্ন হল।

বৃহস্পতিবারের শুনানিতে মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেছিলেন পার্থ। তাঁর আইনজীবী বিপ্লব গোস্বামী আদালতে সওয়াল করে বলেন, ‘‘সিবিআইয়ের চার্জশিট এবং এফআইআর-এ প্রথমে আমার মক্কেলের নাম ছিল না।” সিবিআইয়ের দাবিও ভিত্তিহীন বলে খারিজ করে দেন তিনি।

শারীরিক অসুস্থতার কারণে গত পাঁচ মাস ধরেই হাসপাতালে ভর্তি পার্থ। বৃহস্পতিবারের শুনানিতে হাসপাতালের শয্যায় বসেই সওয়াল করেছেন তিনি। নিজেকে নির্দোষ বলেই দাবি করেছেন। পার্থ বলেছেন, ‘‘আমায় মুক্তি দিন। সমাজের সামনে দাঁড়াতে দিন। জেলের অন্ধকারে রেখে আমায় সুযোগ দেওয়া হয়নি।’’ আদালত অবশ্য এই আবেদন খারিজ করে দিয়েছে।

ধোপে টেকেনি পরেশ, অঙ্কিতার যুক্তিও। তাঁরাও মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে আদালতে আবেদন করেছিলেন। তাঁদেরও দাবি ছিল, তাঁরা নির্দোষ। অঙ্কিতা নিজের যোগ্যতাতেই চাকরি পেয়েছিলেন বলে দাবি করেন পিতা-কন্যার আইনজীবী। তাঁর সওয়াল, অঙ্কিতা যখন চাকরি পেয়েছিলেন, তখন পরেশ কোনও পদে ছিলেন না। তাই কাউকে প্রভাবিত করার প্রশ্নই ওঠে না।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে এসএসসি দিয়ে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে শিক্ষকতার চাকরি পেয়েছিলেন অঙ্কিতা। পরে সেই চাকরির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা করেছিলেন ববিতা সরকার নামে আর এক চাকরিপ্রার্থী। ওই মামলায় ২০২২ সালে মে মাসে অঙ্কিতার চাকরি বাতিল করে দেন হাই কোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁকে বেতনের টাকাও ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রীর কন্যার চাকরি এবং বেতনের প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা পান ববিতা। পরে জানা যায়, ববিতারও নম্বর মূল্যায়নে ভুল রয়েছে। তাঁরও চাকরি চলে যায়। শেষমেশ ওই চাকরি পান অনামিকা রায় নামে আর এক প্রার্থী! কিন্তু গত বছর ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের সঙ্গে সঙ্গে বাতিল হয়ে যায় অনামিকার চাকরিটিও। সম্প্রতি এসএসসি-র প্রকাশিত ‘দাগি অযোগ্যদের’ তালিকার ১০৪ নম্বরে নাম রয়েছে প্রাক্তন মন্ত্রী-কন্যার।

অঙ্কিতা চাকরি হারানোর পর পরেই ২০২২ সালের ২২ জুলাই নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে পার্থের দক্ষিণ কলকাতার নাকতলার বাড়িতে অভিযান চালিয়েছিল ইডি। হানা দিয়েছিল ‘পার্থ-ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের টালিগঞ্জের ফ্ল্যাটেও। সেই তল্লাশি অভিযানে অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে নগদ ২১ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়। তার পরেই পার্থ এবং অর্পিতাকে গ্রেফতার করে ইডি। ওই বছর ২৭ জুলাই অর্পিতার বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে আরও ২৭ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়। মেলে বহুমূল্য গয়নাও। ইডি দাবি করে, সব মিলিয়ে অর্পিতার দু’টি ফ্ল্যাট থেকে নগদে মোট ৪৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং ৫ কোটি ৮ লাখ টাকার গয়না উদ্ধার হয়েছিল। সঙ্গে নানা বৈদেশিক মুদ্রাও মিলেছিল। ইডির তরফে দাবি করা হয়, সোনাদানা, ফ্ল্যাট-বাড়ি মিলিয়ে কম করে ৬০ কোটির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়।

পরবর্তী কালে গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি-সহ একাধিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় নাম জড়ায় প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর। এসএসসি নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় সিবিআই-ও গ্রেফতার করে পার্থ এবং অর্পিতাকে। সিবিআইয়ের প্রাথমিক নিয়োগ মামলাতেও নাম জড়ায় পার্থের। ২০২৪ সালের অক্টোবরে তাঁকে ওই মামলায় গ্রেফতার করে সিবিআই।

২০২২ সালে এসএসসি গ্রুপ সি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তদন্ত শুরুর ৫১ দিনের মাথায় যে প্রথম চার্জশিট দিয়েছিল সিবিআই, তাতে পার্থ ছাড়াও নাম ছিল সমরজিৎ আচার্য, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিন্‌হা, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সৌমিত্র সরকার, অশোককুমার সাহা, অ্যাডহক কমিটির সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়, বেআইনি ভাবে নিযুক্ত প্রার্থী দীপঙ্কর ঘোষ, সুব্রত খাঁ, অক্ষয় মণি, ইদ্রিস আলি মোল্লা প্রমুখের। শেষ চার্জশিটে অবশ্য নতুন করে কারও নাম ছিল না। তবে কিছু নতুন তথ্যপ্রমাণ এবং নথি রয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে খবর।

SSC CBI SSC recruitment scam
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy