Advertisement
E-Paper

নারদ মামলায় অভিযুক্ত চার বিধায়কের চার্জশিটে সায় রাজ্যপালের

নারদে অভিযোগের তালিকায় আর যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁদের মধ্যে শুভেন্দু অধিকারীও এখন বিধায়ক। কিন্তু, তাঁর নাম এই অনুমোদন দেওয়ার তালিকায় নেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০২১ ০৬:৩২
ববি হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মদন মিত্র এবং শোভন চট্টোপাধ্যায়।

ববি হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মদন মিত্র এবং শোভন চট্টোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

নারদ মামলায় অভিযুক্ত তৎকালীন চার বিধায়কের বিরুদ্ধে সিবিআইকে চার্জশিট পেশ করার অনুমতি দিলেন রাজ্যপাল।

এই চার বিধায়ক হলেন ববি হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মদন মিত্র এবং শোভন চট্টোপাধ্যায়। এঁদের মধ্যে প্রথম তিন জন আবার নির্বাচনে জিতে বিধায়ক হয়েছেন। শোভন ভোটে দাঁড়াননি। প্রথম তিন জনই তৃণমূলের। শোভন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যান। পরে আবার বিজেপির সংস্পর্শ ত্যাগও করেন।

নারদে অভিযোগের তালিকায় আর যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁদের মধ্যে শুভেন্দু অধিকারীও এখন বিধায়ক। কিন্তু, তাঁর নাম এই অনুমোদন দেওয়ার তালিকায় নেই। যদিও সিবিআই জানিয়েছে, যে সময়ে মামলা শুরু হয়েছিল, সেই সময়ে শুভেন্দু সাংসদ ছিলেন। তাঁর ক্ষেত্রে তাই অনুমোদন দেবেন লোকসভার অধ্যক্ষ।

প্রশ্ন উঠেছে, সে ক্ষেত্রে এই চার বিধায়কের জন্য বিধানসভার অধ্যক্ষের অনুমতি চাওয়া হয়েছিল কি? এ দিন বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমাকে সিবিআই কোনও চিঠি দেয়নি। বিধায়কদের বিরুদ্ধে তদন্তের অনুমোদনের জন্য সিবিআই আমাকে চিঠি দিয়েছিল কি না, তা হাই কোর্ট একাধিক বার আমার কাছে জানতে চেয়েছিল। আমি প্রতি বারেই জানিয়ে দিয়েছি যে, আমাদের কাছে কোনও চিঠি আসেনি।’’

আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য অবশ্য বলেন, “যেহেতু এখনও নতুন বিধানসভা গঠন হয়নি, এই অবস্থায় রাজ্যপাল অনুমতি দিতে পারেন।’’

প্রশ্ন উঠতেই পারে, এত দিন তো তদন্ত চলল। সেই ২০১৬ সালের অভিযোগ। গত পাঁচ বছরে কেন তা হলে রাজ্যের বিধানসভার অধ্যক্ষের কাছ থেকে অনুমতি চাওয়া হল না?

সিবিআইয়ের কাছ থেকে এই প্রশ্নের সদুত্তর পাওয়া যায়নি। কেন্দ্রীয় এই সংস্থার এক আইনজীবী শুধু বলেন, “বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন। এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।’’

সিবিআইয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, শুক্রবার রাজ্যপালের কাছ থেকে চার্জশিট দেওয়ার (প্রসিকিউশন স্যাংশান) অনুমতি পাওয়ার ফলে দুর্নীতি দমন আইনের সাত নম্বর ধারায় এঁদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়া যাবে।

ব্যবসায়ীর ছদ্মবেশে ২০১৪ সালে কলকাতায় এসেছিলেন সাংবাদিক ম্যাথু স্যামুয়েল। এই রাজ্যে ব্যবসা করার অছিলায় দেখা করেন তদানীন্তন বেশ কিছু রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশ কর্তার সঙ্গে। রাজ্যে ব্যবসা করার সময়ে সুবিধা পাওয়ার জন্য প্রত্যেকের হাতে আগাম টাকা তুলে দেওয়ার সময়ে গোপন ক্যামেরায় তার ছবি তুলে নেন ম্যাথু। ২০১৬ সালে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের মুখে সেই ছবি তিনি প্রকাশ করে দেন। পরে ম্যাথু দাবি করেন, তৃণমূলের তৎকালীন সাংসদ কে ডি সিংহ নিজে টাকা বিনিয়োগ করে তাঁকে দিয়ে নারদ স্টিং অপারেশন করিয়েছিলেন।

কলকাতা হাই কোর্টে নারদ কাণ্ড নিয়ে মামলা হয় এবং হাই কোর্টের নির্দেশে তদন্তে নামে সিবিআই। যে ১৩ জনের নামে অভিযোগ দায়ের করে মামলা হয়, তার মধ্যে ছিলেন তৃণমূলের তৎকালীন সাত সাংসদ। তাঁদের মধ্যে সুলতান আহমেদ তদন্ত চলাকালীনই মারা যান। বাকি ছয়সাংসদের মধ্যে মুকুল রায় ও শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল ছেড়ে পরে বিজেপি-তে যোগ দেন। বাকি চার জনের মধ্যে রয়েছেন তৃণমূলের চার জন সৌগত রায়, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, প্রসূণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অপরূপা পোদ্দার।

সিবিআইয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, এই ছয় সাংসদের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেওয়ার প্রয়োজনীয় অনুমতি লোকসভার অধ্যক্ষের কাছে অনেক দিন আগেই চাওয়া হয়েছে। এখনও সেই অনুমোদন এসে পৌঁছয়নি। সেটা না-এলে এবং রাজ্যের বর্তমান তিন তৃণমূল বিধায়ক ও শোভনের নামে আদালতে চার্জশিট জমা দিলে নতুন করে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার তত্ত্ব উঠে আসবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

ওই সাত সাংসদ ছাড়া নারদ কাণ্ডে অভিযুক্ত হিসেবে ছিল চার বিধায়কের নাম। যে চার জনের বিরুদ্ধে শুক্রবার রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় চার্জশিট জমা দেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। এ ছাড়াও অভিযুক্ত হিসেবে ছিলেন তৎকালীন পুরসভার ডেপুটি মেয়র, সুলতান আহমেদের ভাই ইকবাল আহমেদ। ছিলেন সেই সময়ে বর্ধমান জেলার পুলিশ সুপার এস এম এইচ মির্জা।

বস্তুত, এই মির্জা ছিলেন অন্যতম মুল অভিযুক্ত এবং ম্যাথুকে নিয়ে তিনিই বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার কাছে যান। নারদ মামলায় একমাত্র মির্জাই গ্রেফতার হয়ে জেল খাটেন। রাজ্যে কোনও মামলায় কোনও আইপিএস অফিসারের এ রকম কারাবাসের ঘটনা নজিরবিহীন। পরে মির্জাকে সাসপেন্ডও করা হয়।

Politics
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy